সমুদ্র থেকে ধাতু উদ্ধারের উদ্যোগ
১১ মে ২০২২কোবাল্ট, তামা ও নিকেল ‘ট্রানজিশন মেটাল' হিসেবে পরিচিত৷ আমাদের চারিপাশে থাকলেও সেগুলিকে বিরল উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়৷ এমন উপাদান ব্যাটারি, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ইলেকট্রিক গাড়ি, ফটোভোল্টাইক সিস্টেম এবং অন্য ধরনের পাওয়ার স্টোরেজ হিসেবে কাজে লাগে ৷
খনিতে তামা, কোবাল্ট ও নিকেলের পরিমাণ অত্যন্ত সীমিত৷ অদূর ভবিষ্যতে সেগুলির জোগান শেষ হয়ে যাবে৷ বিশেষ করে কোবাল্টের আকাল অনিবার্য৷ ২০২৬ সালের মধ্যে এর চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ কংগো ও অস্ট্রেলিয়ায় কোবাল্টের সবচেয়ে বড় ভাণ্ডার রয়েছে৷ প্রায়ই খনির পরিবেশ শ্রমিকদের জন্য অসহনীয় হয়৷
সমুদ্রের নীচে পলিমেটালিক নডিউল হয়তো সমস্যার কিছুটা সমাধান করতে পারে৷ সেগুলির মধ্যে আনুমানিক ২৭ কোটি টন নিকেল লুকিয়ে রয়েছে৷ সেইসঙ্গে ২৩ কোটি টন তামা এবং ৫ কোটি টন কোবাল্ট৷
সমুদ্রতলে ৩,৫০০ থেকে ৬,৫০০ মিটার গভীরে বিশাল এলাকা জুড়ে সেই নডিউলগুলি ছড়িয়ে রয়েছে৷ সেই পরিবেশ এখনো মানুষের অগোচরে থেকে গেছে৷ পলিমেটালিক নডিউল খুব ধীরে গড়ে ওঠে৷ তার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন ও সুমেরু অঞ্চলের গভীর স্রোত৷
নডিউল গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল৷ সহজে বলতে গেলে শামুকের খোলস বা হাঙরের দাঁতের ক্ষুদ্র টুকরোর মতো জৈব কণা দিয়ে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ লাখ লাখ বছর ধরে সমুদ্রের পানি ধাতব যৌগ দ্রবীভূত করে৷ প্রতি দশ লাখ বছরে জৈব কণার উপর এক সেন্টিমিটার প্রলেপ যুক্ত হয়৷ তরপর আলু বা ফুলকপির মাথার মতো আকার সৃষ্টি হয়৷ ‘মাইনিং ইমপ্যাক্ট' প্রকল্পের মাটিয়াস হেকেল বলেন, ‘‘১৮৭৪ সালে চ্যালেঞ্জার অভিযানে প্রথমবার ধাতব নডিউল আবিষ্কৃত হয়৷ অর্থাৎ অনেক সময় আগে এর অস্তিত্ব জানা গিয়েছিল৷ সে সময়ে সমুদ্রতলের নমুনা সংগ্রহের যন্ত্রপাতি দিয়ে কয়েকটি নডিউল তোলা হয়েছিল৷ সত্তরের দশকে অর্থনৈতিক কারণে আবার আগ্রহ জেগে ওঠে৷ মানুষ সেগুলির মধ্যে ধাতুর সন্ধান পায়৷ তখন থেকেই আরও অভিযান শুরু হয়৷''
অর্থাৎ শুধু বিজ্ঞানীরাই পলিমেটালিক নডিউলে আগ্রহী নন৷ বেশ কয়েকটি কোম্পানিও সেই ধাতু উদ্ধার করে কাজে লাগাতে চায়৷
গভীর সমুদ্রে খননের প্রবক্তাদের মতে, সমুদ্রের নীচ থেকে নডিইউল বার করা প্রথাগত খননকার্যের তুলনায় অনেক বেশি টেকসই পদ্ধতি৷ কারণ সেখানে কোনো জঙ্গল ধ্বংস করতে হয় না এবং মাটিও খুঁড়তে হয় না৷ শিশু শ্রম ও টক্সিক ধোঁয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই৷ সমুদ্রতল থেকে নডিউল সংগ্রহ করলেই চলে৷
অন্তত কাগজে কলমে সেটাই হলো প্রক্রিয়া৷ কিন্তু গভীর সমুদ্রে তীব্র চাপ ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য অন্যতম সমস্যা৷ এখনো পর্যন্ত কোনো যন্ত্র সমুদ্রতল থেকে বাণিজ্যিক আকারে নডিউল উদ্ধার করতে পারে না৷
ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো দেখতে যন্ত্র নিয়ে বর্তমানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে৷ আরও কিছু প্রোটোটাইপ তৈরি করা হচ্ছে৷
সামুদ্রিক প্রাণিজগতের উপর সেই প্রযুক্তির প্রভাব আপাতত সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ৷ কারণ ভবিষ্যতে যন্ত্র সমুদ্রতল থেকে শুধু নডিউল শুষে নেবে না৷
ল্যুডিয়া মায়ার/এসবি