1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিশুর বন্ধু পুলিশ

আশীষ চক্রবর্ত্তী২৪ অক্টোবর ২০১৫

এক ‘অপরাধীকে’ বাড়ি গিয়ে ধরে আনা হলো, অন্যজনকে নিরাপদে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করলো পুলিশ৷ বাংলাদেশে শিশু-কিশোরদের জন্যও কি গরিবের ঘরে জন্ম নেয়াই সবচেয়ে বড় অপরাধ?

https://p.dw.com/p/1GtHL
UN Millenniumsziele Kind in einem Slum in Bangladesch
ছবি: UN Photo/Kibae Park

জানি, অনেকেরই খুব ‘ফিল্মি’ মনে হবে প্রশ্নটা৷ কিন্তু কিছু বিষয় তো অধিকাংশ মূলধারার গতানুগতিক বাণিজ্যিক ছবির কাহিনীর মতোই সোজা৷ এমন বিষয় ঘুরিয়ে বা গুরুগম্ভীর করে বলার কোনো মানেই হয়না৷ শিশুর প্রতি পুলিশের বৈষম্যমূলক আচরণ দেখে তা-ই সোজাসরল প্রশ্নটাই প্রথমে এলো- পুলিশের কাছে কি শিশুদের বেলায়ও ধনী-গরীব আলাদা?
‘অদম্য বাংলাদেশ’-এর চার তরুণ জামিনে মুক্ত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই আরেকটি ঘটনা৷গুলশানে প্রাইভেটকারে চাপা দিয়ে কয়েকজনকে আহত করল ১৬ বছর বয়সি এক কিশোর৷ নাম ফারিজ রহমান৷ বলা হচ্ছে, ছেলেটি আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ এইচবিএম ইকবালের ভাতিজা৷ মানুষকে গাড়িচাপা দিয়ে আহত করার পরও পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি, উল্টো দুর্ঘটনাস্থল থেকে তাঁকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে সহায়তা করেছে৷ এক পুলিশ কর্মকর্তা ফারিজকে মোটরবাইকে তুলে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে৷ ছেলেটির বিরুদ্ধে কেন কোনো মামলা হলো না? পুলিশ বলেছে, আহতদের কেউ মামলা করেনি, তাই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি৷ এমনকি হাইকোর্ট ফারিজ রহমান ও গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে ১৪ দিনের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিলেও শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷

ফারিজ হঠাৎ ঘটনাটি ঘটিয়েছে৷ কিন্তু ঢাকার এজিবি কলোনিতে তার বয়সি কিছু ছেলে কয়েক মাস ধরেই মোটবাইক নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে চলেছে৷ প্রভাবশালী পরিবারের এই ‘বখাটে’ সন্তানদের বখাটেপনায় ইতিমধ্যে এক নারী মারাও গেছেন৷ নিহতের স্বামী মামলা করেছেন৷ তারপর থেকে হুমকির মুখে আছেন তিনি৷ স্থানীয়রা একজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছিল৷ একই মোটরবাইকের বাকি দুজনকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করেনি৷

ফারিজ রহমান ও এজিবি কলোনির ছেলেগুলোর ভাগ্য আপাতত ভালো৷ অপরাধ করেও তাই এখনো তারা মুক্ত৷ তবে আইনের আওতায় এনে ওদের ভুল শুধরে নেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে না এনে পুলিশ বা ছেলেগুলোর পরিবার ওদের ক্ষতিই করছে৷ প্রশ্রয় ওদের আরো বেপরোয়া করলে সমাজ হয়তো ভবিষ্যতে আরো কয়েকজন বড় অপরাধীই পাবে৷ কোনো সুস্থ, সচেতন অভিভাবক কখনো তা চাইতে পারেন বলে আমার মনে হয়না৷ কিন্তু পরিবার এবং পুলিশের প্রচ্ছন্ন সমর্থন কচি কচি ছেলেগুলোকে কি সেদিকেই এগিয়ে দিচ্ছে না?

বাংলাদেশের সব সরকারের মতো পুলিশও অতীত থেকে খুব একটা শিক্ষা নেয়না৷ কয়েকদিন আগেই তো হবিগঞ্জের এক কিশোরকে ধরে এনে গাজীপুরের সংশোধন কেন্দ্রে রাখল পুলিশ৷ সেই ঘটনা ভুলে গিয়ে ফারাজকে মোটরবাইকে তুলে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এলো? হবিগঞ্জের রুহুল আমিনের অপরাধ ফারিজের চেয়ে ‘ছোট’ ছিলনা৷ এক কিশোরীকে রাস্তায় নিষ্ঠুরভাবে প্রহার করেছিল সে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় শুরুর পর আত্মীয়ের বাড়ি থেকে রুহুল আমিনকে আটক করে পুলিশ ৷ তারপর থেকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রই রুহুল আমিনের ঠিকানা৷

Deutsche Welle DW Arun Chowdhury
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

ফারিজ আর এজিবি কলোনির ওই ‘বখাটে’ ছেলেগুলোকে অবিলম্বে আইনের আওতায় নেয়া হোক৷ রুহুল আমিনের মতো ওদেরও সংশোধন দরকার৷ গ্রামের অখ্যাত দরিদ্র পরিবারের সন্তান বলে রুহুল আমিনের ‘শাস্তি’ হবে আর সরকারি দলের সাবেক সাংসদের ভাতিজা কিংবা সমাজের প্রভাবশালীদের বখাটে সন্তান বলে অন্যরা সাধারণের জীবন নিয়ে খেলবে? জনগণের প্রতি, অভিযুক্ত শিশু-কিশোরদের প্রতি এত বড় অন্যায় অন্যায় পুলিশ করবে কেন? পুলিশ ‘জনগণের বন্ধু’ কিনা এ নিয়ে সংশয় আছে৷ কিন্তু সব শিশুর বন্ধু কিনা এ সংশয়ও স্থায়ী হয়ে গেলে তো মুশকিল৷ ধনী-গরীব, সাদা-কালো তফাতের ঊর্ধ্বে উঠে সব শিশুর ‘বন্ধু’ তো হতেই পারে পুলিশ!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য