সবুজ জ্বালানিতে চলছে মার্কিন যুদ্ধবিমান
৩০ এপ্রিল ২০১০মানুষের সাধারণ জীবনধারায় যেমন জ্বালানির পরিবর্তন আসছে, ঠিক তেমনি যুদ্ধ জাহাজ বা বিমানের জ্বালানিতেও নিয়ে আসা হচ্ছে সবুজ জ্বালানি৷ কেন? উত্তর৷ এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে হবে৷ সবুজ দিয়ে আরও সবুজ করে তুলতে হবে এই সুন্দর পৃথিবীকে৷ কিন্তু যুদ্ধ জাহাজে সবুজ জ্বালানি? বিতর্ক থাকতে পারে, বিতর্ক রয়েছেও৷
২২ এপ্রিল৷ বিশ্ব ধরিত্রী দিবস৷ যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে মার্কিন নৌবাহিনীর বিমান ঘাঁটি৷ জমায়েত প্রচুর অতিথি৷ সঙ্গে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা৷ দেখতে এসেছেন নতুন এক যুদ্ধ বিমানের উড্ডয়ন৷ সারি সারি জঙ্গি বিমান, সাজানো পরিপাটি৷ পাইলট এবং কো-পাইলটকে সঙ্গে নিয়ে উড়াল দিলো বায়ুযান গ্রিন হরনেট৷
দীর্ঘ পরীক্ষার পর সবুজ জ্বালানি বা বায়োফুয়েল দিয়ে চলছে দুটি বিমান৷ এগুলো সুপার সনিক বিমান, শব্দের গতির চেয়ে এর গতি বেশি!
এর আগে অন্য যেকোন বিমানের মত এই যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করতো জেট ফুয়েল, যাকে বলা হয় জেট-এওয়ান৷ এবার সেই দ্রুতগামী শক্তিশালী এই বিমানের ধমনিতে বয়ে যাচ্ছে বায়ো ফুয়েল৷ না, পুরোটা নয়, অর্ধেক৷ অর্থাৎ বিমানের তেলের চেম্বারের অর্ধেকটা ভরে ছিল বায়োফুয়েল এবং অর্ধেকটা সনাতন জেট ফুয়েলে৷
দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট এই বিমানের গতির কি কোন কমতি হয়েছে, বা এটা চালাতে কি কষ্ট হয়েছে, হয়েছে কি কোন সমস্যা? প্রশ্নের উত্তরে বিমান থেকে নেমেই প্রথম পাইলট লে: জন কোলাটের মন্তব্য.. এটা নতুন এক অভিজ্ঞতা৷ নতুন একটি ব্যবস্থা৷ তাই কিছুটা তো পরিবর্তন থাকবেই৷ কিন্তু এটা সত্যি সত্যিই অভূতপূর্ব৷
কোলাটের সঙ্গেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেক পাইলট লে. কমান্ডার টম ওয়েভার৷ তার মন্তব্য ...পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন এটি৷ আমি এই পরীক্ষার জন্য যখন ককপিটে উঠলাম তখন আমি ছিলাম খুবই দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ৷ এটা যে কাজ করবে সে বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই৷
বায়োফুয়েল৷ এই জ্বালানি নিয়ে বিশ্বব্যাপী দারুণ সমালোচনা৷ আসুন এবার জেনে নেয়া যাক আসলে বায়োফুয়েল কি? বায়োফুয়েল হলো উদ্ভিদ থেকে তৈরি এক ধরনের বিকল্প জ্বালানি৷ রসায়নের ভাষায় বায়োফুয়েল হলো উদ্ভিদ হতে প্রাপ্ত তেলের মিথাইল বা ইথাইল এস্টার৷
কি করে উদ্ভিদ থেকে আসে এই জ্বালানি? উত্তর: সালোক সংশ্লেষণের সময় সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত হয়৷ এই সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তিই হলো বায়োডিজেলের শক্তির উৎস৷
বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ থেকেই বিশ্বব্যাপী তৈরি হচ্ছে বায়োফুয়েল৷ সাধারণত সূর্যমুখী, নারিকেল, সুগারবিট, আখ, পাম, সয়াবিন প্রভৃতি উদ্ভিদই বায়োফুয়েল তৈরির বহুল ব্যবহৃত উৎস৷ আর বায়োফুয়েলকেই বলা হচ্ছে সবুজ জ্বালানি৷
অ্যামেরিকান নেভির বায়ুযান গ্রিন হরনেট চালানো হচ্ছে ক্যামেলিনা নামের একটি বিশেষ গাছের ফল থেকে উৎপাদিত জ্বালানি দিয়ে৷
তবে কি এই জ্বালানি দিয়ে শুধুমাত্র সুপার সনিকের মত যুদ্ধ বিমান চলবে? উত্তর এসেছে মার্কিন নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তার কাছ থেকেই৷ তিনি জানাচ্ছেন, নৌবাহিনীর জন্য আমাদের পাঁচ দফা লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে৷ এই পরিকল্পনা অনুসারে আমাদের আগামী দশ বছরের অর্থাৎ ২০২০ সালের মধ্যে নেভির জ্বালানি চাহিদার প্রায় পুরোটাই মেটানো হবে নন ফসিল ফুয়েল থেকে৷
জানা গেছে, মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজগুলোকে আস্তে আস্তে বায়োফুয়েল দিয়ে চালানো হবে৷ এ লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়েছে৷ চলছে ক্রুদের প্রশিক্ষণ৷
অবশ্য বলে রাখা ভালো এর আগে একটি যাত্রীবাহী জেট বিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন হয়েছে গত ডিসেম্বরে, সবুজ জ্বালানি দিয়ে৷ 'বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার' নামের জেট বিমান সেটি৷ বিশ্বের যে কোন বিমানের চেয়ে এটির গতি সবচেয়ে বেশি, ঘন্টায় ৯০০ কিলোমিটার বা ৫৬০ মাইল৷ অথচ একই আকারের অন্য যে কোন বিমানের চেয়ে এর জ্বালানি পুড়বে ২০ শতাংশ কম৷
যাহোক একটি বিতর্কের কথা আগে বলেছিলাম৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে পারছে না৷ সেখানে খাদ্যশস্য ব্যবহার করে বায়োফুয়েল উৎপাদন যুক্তিযুক্ত কি না সেটিই হচ্ছে বির্তকের প্রধান আলোচ্য৷ অবশ্য এই বিতর্ক এতো শিগগিরই যে শেষ হবার নয়, তা বলাই বাহুল্য৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক