সবুজের মাঝে শেষ ঠিকানা খোঁজেন যাঁরা
‘সবুজ বসবাসের’ এই যুগে কেউ কেউ যে মরার পরও সবুজের মাঝে থাকতে চান, সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ জার্মানিতে তাই জঙ্গলের মধ্যে সমাধিস্থ করার এক চল শুরু হয়েছে, যা দ্রুত জনপ্রিয়ও হচ্ছে৷
পরিবেশবান্ধব সমাধি আবার কী?
অনেক মানুষ এখন মৃত্যুর পর সবুজের মাঝে চিরনিদ্রায় শায়িত হতে চাচ্ছেন৷ জার্মানিতে এই কাজটা করা হচ্ছে জঙ্গলের মধ্যে, যেখানে আলাদা করে কোনো ফুল বা পুষ্পস্তবকের দরকার নেই৷ বরং প্রকৃতির ছায়াতলে চিরানিদ্রায় থাকা যাবে৷ তবে মরদেহটিকে আগে দাহ করতে হবে এবং এরপর ‘বায়োডিগ্রেডেবল’ শবাধারে ভরে জঙ্গলের আশি থেকে একশ বিশ সেন্টিমিটার গভীরে সমাধিস্থ করতে হবে৷
মনে রাখার অভিনব উপায়
জঙ্গলে গাছের নিচে যাদের কবর দেয়া হয়েছে, তাদের নাম লেখা ছোট্ট একটি প্লেট ট্রাঙ্কের সাথে জুড়ে দেয়া যাবে৷ আর একটি গাছের নীচে সর্বোচ্চ দশজনকে সমাধিস্থ করা যাবে৷ যেমন গাছের নীচে সমাধিস্থ করা হয় সেগুলোকে ‘ফ্যামিলি ট্রি’ বা ‘কমিউনিটি ট্রি’-ও বলা হয়৷
মৃত্যু এবং জীবন
জঙ্গলে গাছের নীচে ছোট ছোট সবুজ লতা, গুল্ম জন্ম নেয়, যা কিনা নতুন এক জীবনের ইঙ্গিত দেয়৷ আর সেই নতুন সবুজেই এক সময় পুরোপুরি ঢেকে যায় সমাধি৷ নতুন জীবনের কাছে পুরনোর আর কতই বা গুরুত্ব থাকে৷
একটি জীবনচক্র
কাঠবিড়াল থেকে প্রজাপতি পর্যন্ত - জীবনের নানা চিহ্ন রয়েছে ‘ফ্রিডভাল্ড’ বা শান্তির বনে, মানে যেখানে মানুষের মরদেহ সমাধিস্থ করার সুযোগ রয়েছে৷ এখানে একটি প্লট নিরানব্বই বছরের জন্য কেনা হয়৷ তবে ‘বায়োডিগ্রেডেবল’ শবাধার এবং মরদেহের অবিশিষ্টাংশ মাটিতে মিশে যেতে তিন বছরের বেশি লাগে না৷
চমৎকার বিশ্রামস্থল
ফ্রিডভাল্ডের রক্ষকরা যেসব গাছের নীচে কবর দেয়া সম্ভব, সেগুলো বাছাই করে বিভিন্ন রংয়ের ফিতা লাগিয়ে দেয়৷ এরপর সেগুলো বিক্রি করা হয় ফিতার রংয়ের ভিত্তিতে৷ এসব রং দিয়ে পরিবার, কমিউনিটি, সঙ্গী বা শুধু নারীদের কবর দেয়ার জন্য উপযোগী গাছ বোঝানো হয়৷ একটি গাছের নীচের কবর বিক্রি হয়ে গেলে ফিতা সরিয়ে ফেলা হয়৷
গতানুগতিক কবরের চেয়ে আলাদা
জার্মানির কবরস্থানগুলোতে একটি কবর সাধারণত বিশ থেকে ত্রিশ বছরের জন্য লিজ দেয়া হয়৷ এরপর আশা করা হয় যে, মৃতের পরিবারের সদস্যরা সেটির দেখভাল করবেন৷ তাঁরা সেটা করতে ব্যর্থ হলে কবর রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেড়ে যায়৷ জঙ্গলের কবরে এসবের বালাই নেই৷
একক কোনো কবর নয়
একটি কবর শুধু একজনের জন্য না রেখে একাধিকের জন্য ব্যবহার করার চল ধীরে ধীরে বাড়ছে৷ কবরটি একাধিকের হলে শুধু নামফলকে সেই কবরে যাদের সমাধিস্থ করা হয়েছে তাদের নাম লিখে দেয়া হয়৷