সবার জন্য এক সনদ
মানবাধিকার দিবসে জাতিসংঘ তার সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে সবার জন্য সম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়৷ তবে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে৷
সবার জন্য সম অধিকার (আর্টিকেল-১)
প্রত্যেকটা মানুষের জন্ম হয় সমান সম্মান আর অধিকার নিয়ে৷ ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর প্যারিসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ঘোষণা করা হয়৷
জীবনের, তথা বাঁচার অধিকার (আর্টিকেল-২)
স্বাধীনতা এবং জীবনের অধিকারের জন্য বিশ্বের সব মানুষের জন্য ঘোষণা করা হয়৷ জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, সামাজিক অবস্থান, ধর্ম, রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য এ অধিকার সমান৷ অবশ্য বর্তমানে এ অধিকার বাস্তবায়ন করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার (আর্টিকেল-৩,৪,৫)
প্রত্যেকের মানুষের জীবনের, স্বাধীনতার এবং নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে৷ (৩) কাউকে দাস হিসেবে রাখা যাবে না৷ (৪) কোন মানুষকে নির্যাতন করা যাবে না বা অমানবিক আচরণ করা যাবে না৷ (৫) গত ৫ বছরে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ১৪১ টি দেশে নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ পেয়েছে৷
আইনের চোখে সকলে সমান (আর্টিকেল ৬ থেকে ১২)
প্রতিটি মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং আইনত সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে (৬,৮,১০,১২)৷ আইনে আছে, যতক্ষণ না একজনের দোষ প্রমাণিত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি নিরপরাধ৷ এছাড়া (১১) কোনো সরকার কোনো ব্যক্তিতে ব্যক্তিগত কারণে গ্রেপ্তার করতে পারবে না৷ (৭,৯) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে অবশ্য ৮০টি দেশে এ আচরণগুলো হয়ে থাকে৷
কেউ অবৈধ নয় (আর্টিকেল ১৩,১৪,১৫)
একটি দেশে সকলেই স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে এবং যে কোনো জায়গায় বসবাস করতে পারে৷ এমনকি যে কোনো ব্যক্তির তাঁর নিজ দেশ ছাড়ার অধিকার আছে৷ (১৩) অধিকার আছে বিশ্বের অন্য কোনো দেশে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার৷ তাছাড়া (১৪) প্রত্যেকের রয়েছে নাগরত্বের অধিকার বা নাগরিক হওয়ার অধিকার৷ (১৫)
জোর করে বিয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ (আর্টিকেল ১৬)
বিয়ের আগে, বিয়ের সময় এবং বিয়ের পরে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার থাকা উচিত৷ কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাতে বিয়ে দেয়া না হয়, তা দেখার দায়িত্ব পরিবার ও রাষ্ট্রের৷
সম্পত্তির অধিকার (আর্টিকেল ১৭)
প্রতিটি মানুষের সম্পত্তির অধিকার রয়েছে৷ তাই কাউকে তাঁর সম্পদ থেকে জোর করে উচ্ছেদ করা যাবে না৷ কিন্তু বৈধ কাগজ না থাকার কারণে অনেকেই অন্যের সম্পদ জবরদখল করে৷ এটা গোটা বিশ্বেই দেখা যায়৷
মতামত প্রকাশের অধিকার (আর্টিকেল ১৮,১৯,২০)
প্রতিটি মানুষের ধর্মীয় ও অন্যান্য ব্যাপারে নিজের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে৷ (১৮) অধিকার রয়েছে তার চিন্তা-ভাবনা ও মতামত জানানোর৷ (১৯) এছাড়া শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বা সমাবেশ করারও অধিকার রয়েছে সবার৷ অথচ (২০) বিশ্বব্যাপী ৩৫০ জনেরও বেশি সাংবাদিক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট এখন কারাগারে৷
অংশগ্রহণের অধিকার (আর্টিকেল ২১,২২)
প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার আছে দেশের সরকার গঠনে অংশ নেয়ার৷ তবে সেটা সরাসরি হতে পারে অথবা প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে হতে পারে (২১)৷ এছাড়া বিশ্ববাসীকে সামাজিক সুরক্ষার অধিকার-ও (২২) দেওয়া হয়েছে ‘ইউনিভার্সাল ডিক্লেয়ারেশন অফ হিউম্যান রাইটস’-এর মাধ্যমে৷
কাজের অধিকার (আর্টিকেল ২৩, ২৪)
প্রত্যেকের কাজ করার এবং ছুটি কাটানোর অধিকার আছে (২৩,২৪)৷ তারপরেও অবশ্য বর্তমানে বিশ্বে অন্তত ২০ কোটি মানুষ বেকার বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা৷
সম্মানের জীবন (আর্টিকেল ২৫)
‘ইউনিভার্সাল ডিক্লেয়ারেশন অফ হিউম্যান রাইটস’ অনুযায়ী, প্রত্যেকটি মানুষের পরিবার পরিজন নিয়ে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে৷
শিক্ষার অধিকার (আর্টিকেল ২৬)
প্রতিটি মানুষের শিক্ষার অধিকার রয়েছে৷ প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং বিনামূল্যে হওয়া উচিত বলে মনে করে জাতিসংঘ৷ ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে অন্তত ৭৮ কোটি মানুষ আজও অশিক্ষিত৷