সন্ত্রাসবাদ ও ব্রিটেনের মুসলিম সমাজ
১৯ নভেম্বর ২০১৩২২ মে, ২০১৩৷ লন্ডনের উলউইচ এলাকার সেনাছাউনির সামনে ব্রিটিশ সৈন্য লি রিগবি-কে হত্যা করা হয়৷ এই হত্যাকাণ্ডের ফলে জনমানসে বিপুল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় – বিশেষ করে হত্যাকারীদের একজন যখন অকুস্থলেই ক্যামেরার সামনে ঘোষণা করে যে, প্রতিশোধ নেবার জন্য সৈন্যটিকে হত্যা করা হয়েছে৷ আততায়ীর যুক্তি: ব্রিটিশ সৈন্যরাও তো মুসলিমদের হত্যা করে থাকে৷
অথচ গত সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশি জেরায় মাইকেল আদেবোলাইও ও মাইকেল আদেবোয়ালে দু'জনেই নিজেকে নির্দোষ বলে চিহ্নিত করে৷ গতকাল তাঁদের মামলার শুনানি শুরু হয়েছে৷ লি রিগবি-র হত্যাকাণ্ডের পর ব্রিটেনে মুসলিম ও মসজিদের উপর আক্রমণের সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে যায় – যদিও ব্রিটেনের মুসলিম ধর্মীয় নেতারা প্রায় সকলেই রিগবি-র হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেছিলেন৷
ব্রিটেনে প্রায় ত্রিশ লাখ মুসলিমের বাস – যাঁদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের সংখ্যাও কম নয়৷ এবং এক বিচারে এরা পড়েছেন উভয়সংকটে, কেননা একদিকে ইংলিশ ডিফেন্স লিগ-এর মতো চরম দক্ষিণপন্থি সংগঠনগুলি ইসলাম-বিরোধী মনোভাবে উস্কানি দিচ্ছে – ফুটবল মাঠের ব্রিটিশ হুলিগ্যানদের থেকেই যে ইডিএল-এর সৃষ্টি৷ অপরদিকে রয়েছে ইসলামি চরমপন্থিরা, যারা মুসলিমদের অসন্তোষ ও বিচ্ছিন্নতার সুযোগ নিয়ে সদস্য ও সমর্থন সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে৷
এই দু'য়ের মাঝখানে একটি তৃতীয় শক্তি হিসেবে কিলিয়াম ফাউন্ডেশনের মতো সংগঠনগুলি কাজ করছে, যারা স্থানীয় মুসল্লিদের সঙ্গে একযোগে মুসলিমদের ব্রিটিশ সমাজে অন্তর্ভুক্তি ও যুগপৎ সন্ত্রাসবাদ রোখার জন্য সক্রিয়৷ এবং সে কাজও যে পুরোপুরি বিপদমুক্ত নয়, তার প্রমাণ, লন্ডনের কেন্দ্রে কিলিয়াম ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ের জানলাগুলিতে বোমা প্রতিরোধী কাচ বসানো আছে৷ কিলিয়াম ফাউন্ডেশনের কর্মীরা উগ্র-ইসলামপন্থিদের থেকে নিজেদের আদর্শগত দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে নিজেরাই ইসলামপন্থিদের আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে পড়েছেন৷
যুবক-কিশোররাই সর্বাগ্রে উগ্রপন্থিদের খপ্পরে পড়ে৷ তাই পূর্ব লন্ডনের ওসমানি যুব কেন্দ্র খেলাধুলার মাধ্যমে সব জাতি ও ধর্মের কিশোর-তরুণদের একসঙ্গে আনার চেষ্টা করছে৷ মজার কথা, ব্রিটিশ গণমাধ্যমে মুসলিমদের ভাবমূর্তি যা-ই হোক না কেন, ব্রিটিশ মুসলিমদের অধিকাংশ নিজেদের ব্রিটিশ সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবেই মনে করেন৷ তাঁরা বলেন, ব্রিটেনই তাদের স্বদেশ৷ অনেকের মতে, ব্রিটেন বিশ্বের সেরা দেশগুলির মধ্যে গণ্য, কেননা এখানে যে ধরনের স্বাধীনতা পাওয়া যায়, তা বিশ্বের অনেক দেশেই বিরল৷