1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংস্কৃতির সেতু রচনায় হাস্যরস

১ জুন ২০১০

অভিবাসনের জন্য জার্মানরা সাধারণত পাড়ি জমায় অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া বা ক্যানাডায়৷ কিন্তু অভিবাসনের গন্তব্য হিসাবে জার্মানদের কাছে প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডের স্থান যে চতুর্থ, তা হয়তো অনেকেই জানেন না৷

https://p.dw.com/p/NeVB
জার্মান ও পোলিশ জনগণের মধ্যে রয়েছে এক ঐতিহাসিক মেলবন্ধনছবি: picture-alliance/ dpa

অভিবাসী বহু জার্মানই কিন্তু পোল্যান্ডের সমাজে মিশে গিয়েছেন, নামও করেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে৷ প্যোল্যান্ডে অভিবাসী জার্মানদের মধ্যে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন স্টেফেন ম্যোলার৷ ১৫ বছর আগে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি পোল্যান্ডে, কমেডি শিল্পী হিসাবে নাম করেছেন৷ জার্মানিতেও মাঝে মাঝে আসেন তিনি, পরিবেশন করেন কমেডি শো৷ পোলিশ বা জার্মান – কাউকেই ছাড়েন না ম্যোলার, তাদের নিয়ে করেন হাস্য কৌতুক৷ ৪১ বছর বয়সি স্টেফেন প্রথম দিকে পোলিশ ছাত্রদের জার্মান ভাষা শেখাতেন৷ কৌতুকাভিনয়ের ক্ষেত্রে নিজের সুপ্ত প্রতিভাটা আবিষ্কার করেন তিনি পরে৷

জার্মানরাও যে হাস্যরস জানে, তা তিনি দেখিয়ে দেন তাঁর নতুন দেশের মানুষদের৷ এ প্রসঙ্গে স্টেফেন ম্যোলার বলেন, ‘‘সবচেয়ে ভাল হয়, নিজেকে নিয়ে হাসতে পারলে৷ পেলিশরা যখন দেখে, জার্মানরা নিজেদের নিয়েও হাসি ঠাট্টা করে, তখন তারা ভাবে, এটা তো আশা করিনি৷ তখন আমিও একটু হালকা বোধ করতে পারি৷ কেননা পোল্যান্ডের কোনো কিছু নিয়ে সমালোচনা করলে সমস্যা দেখা দেয়৷ সেখানকার মানুষ মনে করে এই তো আমাকে আক্রমণ করা হল৷ দাঁত দাঁত চেপে হাত পা ছুড়ে প্রতিবাদ করে তারা৷''

CSD 2007 in Warschau
অভিবাসনের জন্য জার্মানদের কাছে পোল্যান্ড বেশ আকর্ষণীয়ছবি: AP

যেমন এই কমেডি অনুষ্ঠানটি : ‘‘ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে পোল্যান্ডেই সবচেয়ে বেশি ফুলের দোকান রয়েছে৷ আমাদের জার্মানদের আছে বিমা কোম্পানি ও ওষুধের দোকান৷ ওয়ারশ'র স্টেশনে গেলে আপনার চোখে পড়বে ২০ জনের মত পোলিশ স্বামী ফুলের তোড়া নিয়ে অপেক্ষা করছেন নিজেদের স্ত্রীদের জন্য৷ বার্লিন থেকে একটি ট্রেন এসে থামে৷ পোলিশ স্বামীরা দৌড়ে যান ট্রেন থেকে নামা স্ত্রীদের কাছে, তাদের হাতে তুলে দেন ফুলের তোড়া৷ অন্য কামরা থেকে এক মহিলা নামেন৷ কিন্তু তিনি কোনো ফুল পেলেন না৷ প্লাটফর্ম থেকে শোনা যায় এক পুরুষ কণ্ঠ চেঁচিয়ে বলছে, ‘তাড়াতাড়ি এসো, আমি ভুল জায়গায় গাড়ি পার্ক করে রেখেছি৷' এই ভদ্রলোক পোল্যান্ডের গ্যোটে ইন্সটিটিউটে কাজ করেন৷''

কমেডিয়ান ম্যোলার পোল্যান্ডে একজন জার্মান হিসাবে পেশার ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছেন৷ ২০০১ সালে পোল্যান্ডের ক্রাকাউ শহরে প্রথম কমেডি অনুষ্ঠান প্রদর্শন করেন ম্যোলার৷ এক বছরের মাথায় প্রথম পুরস্কারটি হাতে আসে তাঁর, হাস্যরসের মাধ্যমে পোলিশ ও জার্মানদের কাছাকাছি আনার জন্য৷ এর পর তিনি পোল্যান্ডের বিভিন্ন মঞ্চে কৌতুকাভিনয় করেছেন৷ চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এক জার্মান আলু চাষির চরিত্র৷ পোল্যান্ডে তাঁর নাম এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে, যে বলা যায় খ্যাতনামা জার্মানদের মধ্যে ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপের পরই তাঁর স্থান সেখানে৷ জার্মান ও পোলিশ সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৫ সালে জার্মানির সবচেয়ে বড় সম্মানসূচক পুরস্কার ‘বুন্ডেসফ্যারডিনস্টক্রয়েৎস' বা ‘ফেডারেল ক্রস অফ মেরিট' পেয়েছেন স্টেফেন ম্যোলার৷ পরে সমমর্যাদার একটি পুরস্কার পেয়েছেন পোল্যান্ডেও৷

বলা যায় পোল্যান্ডের সাথে হালকা হাস্যরসের কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন ম্যোলার৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনো কঠিন বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাই না৷ আমার দৈনন্দিন জীবনে যা ঘটছে, সেসবই তুলে ধরি আমি৷ আমার সম্পর্কে সমালোচনা করে বলা হয় যে, জটিল বিষয়গুলি আমি এড়িয়ে চলি৷ অল্প কিছুদিনের জন্য আমি পোল্যান্ড থেকে জার্মানদের বিতাড়নের ইতিহাসটি আমার কমেডিতে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু জার্মান ও পোলিশ – দুই তরফেরই অসন্তোষের মুখে পড়ি আমি৷ এই সব কৌতুককে নির্লজ্জ বলে কঠোর সমালোচনা করে তারা৷ ব্যাস ঐ পর্যন্ত৷ এরপর থেকে আমি যা ভাল পারি, তাতেই মনোনিবেশ করতে থাকি৷''

২০০৮ সালে স্টেফেন ম্যোলারের ‘ভিভা পোলোনিয়া' বইটি বেস্ট সেলারের তালিকায় চলে আসে৷ বিক্রি হয় ২ লাখ কপি৷ তিনি নিজেও বিস্মিত হন এতে৷ ম্যোলার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘পোল্যান্ডের ওপর বই লিখেছে, এমন ব্যক্তি আমিই প্রথম নই৷ ডজন ডজন বই লেখা হয়েছে পোল্যান্ডকে নিয়ে৷ হয়তো বা আমি হালকা রসের মাধ্যমে বিষয়গুলি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি বলেই জনপ্রিয় হয়েছে বইটি৷ অন্যান্যদের লেখায় জার্মান-পোলিশ বিষয়গুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভ্রূকুটি কিংবা বিতর্কের সৃষ্টি করে, যা কোনো ফলই বয়ে আনেনা৷''

স্টেফেন ম্যোলারের কৌতুকরসের মধ্যে অন্যকে অপমান করার কিংবা আঘাত দেয়ার ব্যাপারটা থাকেনা৷ পোলিশদের সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক বদ্ধমূল ধারণাও তিনি নির্মল হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরেন৷ স্টেফেন ম্যোলার বলেন, ‘‘সাধারণত অন্যের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাটাই কমেডিতে তুলে ধরা হয়৷ পোলিশদের সম্পর্কে এই ধরণের প্রচুর ধারণা প্রচলিত রয়েছে৷ রাজনীতিবিদরা চাইলেও এসব ঢেকে রাখা যায়না৷ যেটা করা যেতে পারে, তা হল – হালকা রসের মাধ্যমে এ গুলি তুলে ধরা৷ আমার বিশ্বাস, তা আমি খানিকটা হলেও পেরেছি৷ দর্শকরা বলেছেন, আমার অনুষ্ঠান দেখে বের হওয়ার পর তাদের মনে হয়, ঠিক আছে আমি পোলিশ – তুমি জার্মান৷ অবশ্যই আমাদের মধ্যে অমিল রয়েছে৷ কিন্তু তাতে হলটা কি ? তা সত্ত্বেও আমরা পরস্পরকে পছন্দ করি৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ