শ্রমজগতের বিবর্তন
মধ্যযুগ অবধি লোকে কাজ করাটাকে বিশেষ সুনজরে দেখত না৷ তারপর গেছে শিল্পায়ন আর বিশ্বায়নের যুগ৷ আজ আবার রোবটদের প্রকোপে মানুষ বেকার হতে বসেছে৷ সংক্ষেপে এই হলো শ্রমের ইতিহাস৷
কুঁড়ের বাদশা
প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকরা শ্রমকে ভালো চোখে দেখতেন না৷ অ্যারিস্টটলের কাছে শ্রম ছিল স্বাধীনতার ঠিক বিপরীত৷ মহাকবি হোমার তাঁর গাথায় প্রাচীন গ্রিসের অভিজাত মহলের অকর্মণ্যতাকে আদর্শ করেছেন৷ কায়িক শ্রম রাখা ছিল নারী, পরিচারক বা ক্রীতদাসদের জন্য৷
মোচ্ছব করতে পারলে কাজ করে কী হবে?
মধ্যযুগেও এই কর্মবিমুখতা লক্ষ্য করা যায়৷ চাষবাসের কাজ করতে আর কার ভালো লাগে, কিন্তু তাই বলে জমিদারের বেগার খাটনি থেকে তো আর মুক্তি পাওয়া যাবে না৷ তবে মুনাফা বাড়ানোর মাত্রাধিক প্রচেষ্টাকে ‘পাপ’ বলে মনে করা হতো৷ বছরে ছুটির দিন ছিল প্রায় ১০০৷
শিল্পায়ন
ইউরোপের শিল্পায়ন শুরু হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর সূচনায়৷ জনসংখ্যা বাড়ছে, অথচ চাষের জমি বাড়ছে না৷ কাজেই ক্রমেই আরো বেশি মানুষ কলকারখানায় কাজ করতে শুরু করেন৷ উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইংল্যান্ডে বহু মানুষ দিনে চৌদ্দ ঘণ্টা কাজ করতেন, তাও আবার সপ্তাহে ছ’দিন৷ মজুরি ছিল অত্যন্ত কম৷ অপরদিকে বাষ্পচালিত ইঞ্জিন বা স্পিনিং মিল আবিষ্কার হওয়ার ফলে উৎপাদন বাড়ে প্রায় তিনগুণ৷
দাম পড়ছে, মাইনে বাড়ছে
বিংশ শতাব্দীর সূচনায় হেনরি ফোর্ড তাঁর সুবিখ্যাত অ্যাসেম্বলি লাইন চালু করলেন, যার ফলে ঐতিহাসিক ‘মডেল টি’ ফোর্ডের উৎপাদন বেড়ে আটগুণ হয়েছিল৷ উৎপাদন বাড়ার ফলে ফোর্ড তাঁর গাড়ির দাম কমাতে ও শ্রমিকদের আরো বেশি মাইনে দিতে সমর্থ হন৷
বিশ্বায়ন
বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের সমৃদ্ধ দেশগুলিতে ‘লেবার কস্টস’, অর্থাৎ শ্রম খাতে ব্যয় বাড়তে থাকে৷ কাজেই বহু শিল্পসংস্থা তাদের উৎপাদন এমন সব দেশে নিয়ে যায়, যেখানে বেতন ও পারিশ্রমিক কম৷ এর ফলে বিশ্বের বহু দরিদ্র দেশে আজ ঠিক সেই পরিস্থিতি, ইউরোপে শিল্পায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে যা ছিল: শিশুশ্রম, নিম্ন পারিশ্রমিক, ওদিকে সামাজিক বীমা বা ভাতা বলে কিছু নেই৷
রোবটায়ন
রোবটরা ধর্মঘট করে না, মজদুরি চায় না, নির্ভুল কাজ করে৷ শ্রমজগতের চেহারা পাল্টে দিয়েছে এই রোবটরা, যে কারণে মার্কিন অর্থনীতিবিদ জেরেমি রিফকিন একটি ‘তৃতীয় শিল্পবিপ্লব’-এর কথা বলেছেন৷ এর একটি ফলশ্রুতি হবে, বেতনভোগী ও চাকুরীজীবীদের সংখ্যা এই হারে বাড়তে পারবে না - বলেছেন রিফকিন৷
রোবট কি ‘জব কিলার’?
কলকারখানায় রোবোট চালু হওয়ার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, ডিজিটাল যুগে রোবটরা ইন্টারনেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আর কোন পেশাকে পরিহার্য করে তুলবে?
প্রতিবেদন: হিল্কে ফিশার/এসি
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী