‘আলিয়ার সাথে কওমিকে গুলিয়ে ফেলা ভুল'- ডয়চে ভেলের এই শিরোনামের সাক্ষাৎকারটি পড়ে কওমি শিক্ষার পক্ষে মত জানিয়ে পাঠক নজরুল হায়দার ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘তারপরেও আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি,কওমি মাদ্রাসায় এমনও কিছু শিক্ষক আছেন যাদের একজনের সাথে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক'রা পাঁচ মিনিটও বিতর্কে টিকবে না৷'' তিনি মনে করেন কওমি মাদ্রাসায় একজন শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ উত্তম চরিত্র শিক্ষা দেওয়া হয়, যা অন্য কোথাও নেই৷
উল্টোমত পোষণ করেন পাঠক ওমর ফারুক৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘কওমি শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে নয়৷ ইসলামের ওপর পাণ্ডিত্য অর্জন ও পরকালীন চিরস্থায়ী জিন্দেগীর চিন্তা থেকে এ শিক্ষা গ্রহণ করা হয়৷ কারণ, মুমিন ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে নয়, আখিরাতকে প্রাধান্য দেয়৷''মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা অব্যশই সংস্কার করা উচিত, মুসলিম দেশগুলোতে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করা হচ্ছে৷আর শাহরিয়ার জাফরির মতে, দেশের সব শিক্ষাব্যবস্থারই সংস্কার জরুরি৷ মাহবুব হাসান রিমন দুঃখ করে লিখেছেন, ‘‘আমাদের মাদ্রাসা থেকে প্রতি বছর কম-বেশি প্রায় ১০০ জন ঢাবিতে চান্স পায়৷ কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার পরও তাদের ভালো সাবজেক্ট দেওয়া হয়না৷''
শরিফুল ইসলাম লিখেছেন, সব শ্রেণির শিক্ষাকে আধুনিকায়ন ও মূল্যায়ণ করা দরকার৷দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সুশিক্ষা দরকার৷ কওমি আলিয়াসহ সকল শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ভিত্তিকভাবে সমান মূল্যায়ন দরকার৷ শরিফুল ইসলামের সাথে একমত পাঠক মো.খানও৷ তিনি মতে কওমিকে ঢেলে সাজিয়ে বিজ্ঞান ইংরেজি জিওগ্রাফি সংযোজন করে আধুনিকায়ন করা হোক৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি
বাংলাদেশে প্রচলিত দু’ ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কওমি মাদ্রাসা একটি৷ উনিশ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার মাধ্যমে বাংলাদেশেও কওমি শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন হয়৷ দীর্ঘকাল ধরে কওমি মাদ্রাসা সরকারের আর্থিক সহায়তা ছাড়াই সাধারণ জনগণের সহায়তায় পরিচালিত হয়ে আসছিল৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করেছে ইসলামি এ শিক্ষা ব্যবস্থা৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
১৪ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)-এর ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখেরও বেশি৷ তবে বেসরকারি হিসেব মতে, সারা দেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
মাদ্রাসার একটি ক্লাসরুম
কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিচালিত ঢাকার জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রাথমিক স্তরের একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক স্তরে আরবির পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজিসহ সাধারণ শিক্ষাও দেওয়া হয়৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
সহশিক্ষায় বাধা নেই শিশুদের
কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায় সহশিক্ষা স্বীকৃত নয়৷ তাই মহিলাদের শিক্ষার জন্য আলাদা কিছু প্রতিষ্ঠান আছে৷ তবে প্রাথমিক স্তরে শিশুদের সহশিক্ষার কোনো বাধা নেই৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
স্বতন্ত্র শিক্ষা বোর্ড দ্বারা পরিচালিত
বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর একাংশ পরিচালিত হয় স্বতন্ত্র একটি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে৷ ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া’ (বেফাক) নামের এই শিক্ষা বোর্ড কওমি মাদ্রাসার পরীক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
ক্লাস হয় আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সেশন পরিচালনা হয় আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী৷ সাধারণত বেফাক আওতাধীন মাদ্রাসাগুলোর নতুন সেশন শুরু হয় আরবি ক্যালেন্ডারের শাওয়াল মাসের ১০ তারিখ থেকে৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
পড়া ও শোয়ার জায়গা একটাই
ঢাকার জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এই কক্ষটি শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গাও৷ সাধারণত কওমি মাদ্রাসাগুলিতে পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা একই হয়ে থাকে৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
সর্বক্ষণের সঙ্গী একজন শিক্ষক
কওমি মাদ্রাসার প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি একজন শিক্ষকও থাকেন৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
রুটিনমাফিক জীবন
কওমি মাদ্রাসাগুলো সম্পূর্ণ আবাসিক ব্যবস্থায় পরিচালিত৷ তাই শিক্ষার্থীদের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন রুটিনের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করতে হয়৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
উচ্চশিক্ষার সুযোগ
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ হিফজুল কোরান (বানানভেদে কোরআন)৷ এ বিষয়ের শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র পবিত্র কোরান শরীফ মুখস্থ করে থাকেন৷ তবে হিফজুল কোরান শেষ হলে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে অন্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষারো সুযোগ আছে৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
সর্ব্বোচ্চ শ্রেণি দাওরায়ে হাদিস
জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এটি কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ শ্রেণি৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এই শ্রেণিকেই মাস্টার্স-এর সমমান বলে ঘোষণা করেছে৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
পড়াশোনার মূল মাধ্যম আরবি
কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের হাদিস সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত পড়ানো হয়৷ এ বিষয়ে পড়ানোর মূল মাধ্যম আরবি ভাষা৷ হাদিসের যথাযথ ব্যাখ্যা আরবি ভাষাতেই সম্ভব, এমনটাই মনে করা হয়ে থাকে৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
আছে উর্দু এবং ফারসি ভাষাও
বাংলাদেশের কাওমি মাদ্রাসাগুলোয় প্রাথমিক স্তরে আরবির সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি পড়ানো হলেও উচ্চস্তরে আরবি ছাড়াও পড়ানো হয় উর্দু এবং ফারসি ভাষা৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
গরিব ছাত্রদের জন্য ফ্রি খাবার
কওমি মাদ্রাসাগুলোয় গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে৷ তবে সামর্থবানদের থাকা ও খাওয়ার জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়৷
-
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
মেঝেতেই খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা
শিক্ষা কার্যক্রম, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে টেবিল-চেয়ারের ব্যবহার নেই কওমি মাদ্রাসাগুলোয়৷ ইসলামি সুন্নত অনুসরণে পাঠদান কার্যক্রম, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি সম্পন্ন হয় মেঝেতেই৷
লেখক: মোস্তাফিজুর রহমান (ঢাকা)
এদিকে পাঠক রাকিব হওলাদার বলছেন, ‘‘মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারনাই ছিল না, মনে করতাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের শুধু কোরআন ও হাদিস পড়ায় আরবিতে৷ ইংরেজি বা বিজ্ঞান নিয়ে কিছুই জানে না৷ ডয়চে ভেলের এই রিপোর্টের মাধ্যমে আমার ভুল ধারণা ভেঙে গেলো, পরিশেষে বুঝতে পারলাম তারা আমাদের থেকে অধিক এগিয়ে৷''
ডয়চে ভেলের পাঠক মামুন আহমেদ তার মতামত জানিয়েছেন এভাবে, ‘‘আলিয়ার সাথে কওমি মাদ্রাসাকে গোলানো ঠিক হবে না, কারণ, আলিয়া মাদ্রাসা সরকার কর্তৃক পরিচালিত, কওমি মাদ্রাসা তাদের নিজস্ব বোর্ডের আওতায় পরিচালিত৷ তবে মাদ্রাসা হলো দ্বীন ইসলাম শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র, সেখানে যেসব শিক্ষার্থী জ্ঞান অর্জনের জন্য যায়, তাদের কাছে দুনিয়াবী শিক্ষার ততটা মূল্য থাকে না৷ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মূলত কোরআন হাদিসের উপর শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে আর আমরা জানি কোরআন হলো বিজ্ঞানময়৷ যারা কুরআনের জ্ঞান অর্জন করে তাদের মাঝে বিজ্ঞান সম্পর্কে অবশ্যই জ্ঞান রয়েছে কম বেশি৷ ''
আর পাঠক হুমায়ূন কবির সুমন লিখেছেন, আলিয়ার সাথে কওমিকে গুলিয়ে ফেলা ভুল মানলাম কিন্তু স্কুল, কলেজের সাথে বৈষম্যের শিকার কেন আলিয়া?
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী