1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শীতল সুমেরুতে গবেষণারত ভারতীয় বিজ্ঞানীরা

২০ আগস্ট ২০১০

উত্তর মেরু পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত বিন্দু৷ এর অন্য নাম সুমেরু৷ পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের যে বিন্দুতে এর ঘূর্ণন অক্ষ পৃষ্ঠতলের সাথে মিলিত হয় সেটাই হল সুমেরু৷

https://p.dw.com/p/OsFH
সুমেরুতে ভারতের গবেষণা কেন্দ্র ‘হিমাদ্রি’ছবি: DW/Irene Quaile

বছরের অধিকাংশ সময় সাদা অথচ পুরু বরফে ঢাকা থাকে এই পুরো এলাকা৷ এখানেই রয়েছেন অনেক ভারতীয় বিজ্ঞানী৷ কি করছেন তাঁরা সেখানে?

ইউরোপের একেবারে উত্তরে একটি গবেষণা কেন্দ্র৷ নাম নে এলিসুন্ড৷ উত্তর মেরু থেকে মাত্র এক হাজার মাইল দূরে স্পিটবারগেন নামের একটি বড় দ্বীপে এই গবেষণা কেন্দ্রের অবস্থান৷ নরওয়ের তত্ত্বাবধানে রয়েছে এই কেন্দ্রটি৷ কিন্তু এই কেন্দ্রে কি কেবল নরওয়ে বা ইউরোপের বিজ্ঞানী দল রয়েছেন, অন্য কোন দল নয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলে দেওয়া যায়, না অন্য অনেক দেশের বিজ্ঞানীদের দলও সেখানে আছেন৷ মেরুর আবহাওয়া পরীক্ষা করছেন, করছেন গবেষণা৷ আছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীদের দলও৷

স্পিটবারগেন দ্বীপের একটি সমুদ্রসৈকতের নাম ফির্য়ট৷ সমুদ্রের কোল ঘেঁষে ছবির মতো সাজানো পাহাড়৷ বছরের বেশিরভাগ সময় থাকে বরফ সাদায় আচ্ছন্ন৷ এখানে থেকে কয়েক মিনিট হাঁটা পথ৷একটু সামনে তাকালেই চোখে পড়বে একটি হলুদ রঙের কাঠের বাড়ি৷ ভালো করে এই বাড়িটির দিকে তাকালে দেখা যাবে এর সদর দরজায় ঝোলানো হিন্দিতে লেখা বোর্ড, সুমেরু গবেষণা কেন্দ্র, ভারত৷ এই গবেষণা কেন্দ্রের একটি ডাকনামও দেয়া আছে৷ হিমাদ্রি৷ ২০০৮ সালে ভারতীয় ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মেরু অঞ্চলের আবহাওয়া পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য এই বিদেশের মাটিতে স্থায়ী গবেষণাকেন্দ্রটির যাত্রা শুরু হয়৷ অবশ্য ভারতীয় এই আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মেরু অভিযানের এই গল্পের শুরু সেই ১৯৮১ সাল থেকে৷

Himadri Gedenktafel
‘হিমাদ্রি’ উদ্বোধনের নামফলকছবি: DW/Irene Quaile

ঐ বছর থেকেই বিজ্ঞানীরা নেমে ছিলেন সুমেরুর পথে, জানালেন গোয়ায় অ্যান্টার্কটিকা ও সমুদ্রসংক্রান্ত জাতীয় গবেষণাকেন্দ্রের বিজ্ঞানী ড. রাজন সিভরামা কৃষ্ণাণ৷ তিনি এই সুমেরু গবেষণা কেন্দ্রের সমন্বয়ক৷ তিনিই জানালেন কেন তাঁর দেশ সুমেরুর ব্যাপারে এতটা আগ্রহী? ড. রাজন সিভারামা কৃষ্ণাণের কথায়, ভারতীয় অর্থনীতি কৃষি নির্ভর৷ আর কৃষি প্রাথমিকভাবে মৌসুমী বায়ুর উপর নির্ভরশীল৷ তাই আমাদের এখানকার গবেষণার অন্যতম বিষয় হচ্ছে কি করে দক্ষিণ এবং উত্তর গোলার্ধের আবহাওয়া এই বায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে৷ আসলেই কি আবহাওয়ার উপর, বিশেষ করে বর্ষা-বিধৌত অঞ্চলের উপর প্রভাব বিস্তার করে মেরুর আবহাওয়া?

ফি বছর এখানে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আসেন৷ অবশ্যই গ্রীষ্মকালে৷ তাঁরা হিমাদ্রিতে জলবায়ু হিমবাহ, আবহাওয়া, সমুদ্র এমন কি জিয়োফিজিক্সের মতো বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করছেন৷ আর এই গবেষণার জন্য সব ধরণের উপকরণের এবং অন্যান্য জিনিসের জোগান কিন্তু দিয়েছেন স্বাগতিক দেশের সরকার৷ রাত দিন ঘুরে ফিরে, গবেষণা তত্ত্বতালাশ করেন তাঁরা৷ জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন উপাত্ত্যও পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন এই ভারতীয় বিজ্ঞানীরা৷

ড. রাজন জানাচ্ছেন, এটা একটা প্রাকৃতিক গবেষণাগার৷ বছরের ১২ মাসের মধ্যে তিন বা ছয় মাস এটি খোলা থাকে৷ এই মূহুর্তে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মেরুর হিমবাহগুলো গলে সেই পানি মহাসাগরে গিয়ে পড়ছে৷ সমুদ্রজলের লবণাক্ততার মাত্রা অস্বাভাবিক করে দিচ্ছে৷ আমরা তাই এখানে একটি বড় প্রকল্পের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছি৷

হায়দ্রাবাদের বিজ্ঞানী ড. এস শিবাজীর সঙ্গে দেখা হলো এই প্রাকৃতিক গবেষণাগারে৷ আজ থেকে ২৫ বছর আগে তিনি এখানে একবার এসেছিলেন৷ তখন তাঁদের গবেষণায় যে ফলাফল উঠে এসেছিল, সেই ফলাফলটিই আবার পর্যবেক্ষণ করতে তাঁর এখানে আসা৷ তিনি এখানকার ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণার কাগজপত্র উল্টোতে উল্টোতে বললেন, ‘‘আমি মনে করি এখানকার শীতল আবহাওয়ার সঙ্গে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়ার বেশ মিল আছে৷ মিল আছে ব্যাকটিরিয়ার৷ যার কারণে সেখানকার ফসলগুলো থেকে খুব বেশি উৎপাদন আসে না৷ আমরা এমন কিছু করার চেষ্টা করছি, যাতে প্রচন্ড ঠান্ডাতেও ক্ষেত ভরে উঠতে পারে সবুজ ফসলে৷''

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়