1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিল্পের মেলা ‘এমশার আর্ট ২০১০’

১১ জুন ২০১০

২০১০ সালে ইউরোপের সাংস্কৃতিক রাজধানী হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছে জার্মানির রুয়র অঞ্চল৷ নানা উৎসবের মাঝে, গত ২৯শে মে সেখানে শুরু হয়েছে ‘এমশার আর্ট ২০১০’ নামের একটি প্রদর্শনী৷ চলবে ৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত৷ অর্থাৎ, ঠিক ১০০ দিন৷

https://p.dw.com/p/Nn54
এরপর কোন প্রদর্শনীটি দেখবো ? ম্যাপ দেখে সেটাই ঠিক করছেন ইনিছবি: DW

জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের পশ্চিমে শিল্পপ্রধান বেশ কয়েকটি শহর নিয়ে বিস্তৃত এই ‘রুয়রগেবিট' বা রুয়র অঞ্চল৷ বিশাল কল-কারখানা, কালো ধোঁয়া, শ্রমিকদের ধূসর বর্ণের বাড়ি-ঘর – ‘রুয়রগেবিট' সম্পর্কে মানুষের মনে এ রকম একটা ছবি গেঁথে থাকলেও, এই অঞ্চলে কিন্তু রয়েছে বিশাল সংস্কৃতির সম্ভার আর সবুজের সমারোহ৷ এছাড়া, সাংস্কৃতিক রাজধানী হওয়ার কারণে এলাকার পরিত্যক্ত কলকারখানা, এমনকি জল-নিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য ব্যবহৃত নালাগুলিও পরিণত হয়েছে জাদুঘর, প্রদর্শনীর স্থান বা মনোরম পার্কে৷

Deutschland Kultur Ruhr 2010 Emscherkunst Landschaft Kanal
নালাটির নাম রাইন-হ্যার্নে-ক্যানেলছবি: DW

এরকমই একটা নালার নাম রাইন-হ্যার্নে-ক্যানেল৷ ওবারহাউসেন থেকে কাস্ট্রপ-রক্সেল পর্যন্ত বিস্তৃত এই নালাটিকে পরিণত করা হয়েছে আটটি প্রদর্শনীতে৷ যেখানে স্থান পেয়েছে জেপ্পে হাইন, তাদাশি কাওয়ামাতা, মার্ক ডিওন, সিল্কে ভাগ্নার, মোনিকা বনভিচিনি, স্টেফান হুবার, বোগোমিয়ার একার, ওলাফ নিকোলাই, ইয়ন সরভিন, রিটা ম্যাকব্রিজ-এর মতো দেশ-বিদেশের আধুনিক শিল্পীর শিল্পকর্ম৷

Emscherkunst 2010
ক্যানাডার শিল্পী ইয়ন সরভিন-এর তৈরি ‘ওয়াকিং হাউস’ছবি: DW

সত্যি, ভাবা যায় ? অতি সাধারণ, ফেলে রাখা জিনিস-পত্র, জং ধরা লোহা, অথবা ভাঙা-চোরা ইঁট দিয়েই কীভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে অসামান্য সব স্থাপত্য? একেই বলে বোধ হয় ‘আর্ট ইন দ্য পাবলিক স্পেস'৷ ‘ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি'র কলকাতা শাখার সভাপতি শ্রীমতী রাখী সরকার জানান, ‘‘জার্মানিতে প্রত্যেকটা প্রকল্প কিন্তু আলাদা আলাদাভাবে শহর এবং সামাজিক চেতনাকে জাগিয়ে তোলে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এরা কিন্তু শিল্প ও সংস্কৃতি দিয়ে পুরো সমাজকে পুনর্গঠন করেছিল৷ উদাহরণ ‘পাবলিক আর্ট'৷ এখানে যেমন একটা ‘মাইনিং এরিয়া'কে ওরা পুনর্জীবিত করেছে৷''

Europäische Kulturhauptstadt 2010
প্রশ্নের মুখোমুখি শ্রীমতী রাখী সরকারছবি: DW

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, দ্বীপের মতো এই গোটা অঞ্চলটি ঘুরে দেখার জন্য সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো সাইকেল৷ হবে না ? নালার ওপর দিয়ে যে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৯০০০ সেতু৷ নদীর ধারে, আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে শিল্পীর হাতে তৈরি সব জাদু৷ সে তো আর শুধু পায়ে হেঁটে অথবা গাড়ি করে খোঁজা যায় না৷ তাই কলকাতাবাসী তরুণ শিল্পী প্রতীক রাজাও জার্মানিতে এসে বেছে নিয়েছেন পাঁচ গিয়ারের একটা সাইকেল৷ সেটা করেই প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বেশ কয়েকটা প্রদর্শনী ঘুরে দেখেছেন তিনি৷

Emscherkunst 2010
কলকাতার মাক্স ম্যুলার ভবনের প্রধান রাইমার ফল্কার-এর (মাঝে)সঙ্গে শিল্পী প্রতীক রাজা (বামে)ছবি: DW

কলকাতার গ্যোটে ইনস্টিটিউট বা মাক্স ম্যুলার ভবনের প্রধান রাইমার ফল্কার'এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘুরে এসে প্রতীক বললেন, ‘‘আমার সঙ্গে যারা সাইকেলে করে প্রদর্শনীগুলি ঘুরে দেখছিল – তারা সবাই স্থানীয় বাসিন্দা৷ তারা নিজেদের এলাকাতেই একটা নতুন জিনিস দেখছিল৷ তাই তাদের মধ্যে যে উৎসাহ ছিল – তাতে আমিও উৎসাহিত বোধ করছিলাম৷ তবে সবচেয়ে ভালো লাগলো একটা কাঠের বাড়ি৷ অনেকটা ‘অবসাভেটারি'র মতো৷ একেবারে নদীর পথ ঘেঁষা৷ নদীর জন্যই অপেক্ষমাণ৷ খুবই সুন্দর করে তৈরি৷ বসবাসের জন্য সেখানে তিনটে ঘর বা ‘স্পেস' তৈরি করা হয়েছে৷ যেখানে থাকার জন্য কেউ গিয়ে ‘রিজারভেশন'ও করতে পারে৷ ওখানে বিছানা আছে, রান্নাঘর আছে, আছে খাওয়ার জায়গা৷ তারপরেও মনে হবে, যেন জঙ্গলের মধ্যে থাকছি৷ আর আপেক্ষা করছি নদীটা কখন কাছাকাছি এসে পড়বে - তার জন্য৷''

Deutschland Kultur Ruhr 2010 Emscherkunst Projekt Warten auf den Fluss Haus
নদীর জন্যই অপেক্ষমাণ সেই কাঠের বাড়িছবি: DW

এভাবেই, কয়লা ও ইস্পাত কারখানার অঞ্চল বলে খ্যাত এই ‘রুয়রগেবিট' সম্পর্কে মানুষের যে বদ্ধমূল ধারণা ছিল, সেটা যেন মুছে গেছে এই উৎসবের জোশে৷ বন্ধ হয়ে যাওয়া কয়লা খনিগুলিকে সাজানো হয়েছে প্রায় ৪০০টি বড় বড় হলুদ বেলুন দিয়ে৷ শুধু তাই নয়, ৫ই জুন ‘ডে অফ সং' বা ‘গানের দিন' পালন করা হয়েছে এ অঞ্চলে৷ এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত শোনা গেছে হাজার হাজার গায়কের গান৷ কনসার্ট অথবা অপেরা ভবন ছাড়াও শপিং সেন্টার, কিন্ডারগার্টেন, রাস্তা ঘাট - সব জায়গাতেই বেজে উঠেছে সুরের ধ্বনি৷ আনন্দে ভেসেছে অঞ্চলটির প্রায় ৫৩ লক্ষ মানুষ৷

প্রতিবেদন : দেবারতি গুহ

সম্পাদনা : সঞ্জীব বর্মন