শিয়ালদহ থেকে সল্টলেক মেট্রো চালু
কলকাতার মেট্রো মানচিত্রে জুড়লো শিয়ালদহ। চালু হলো সল্টলেকের আইটি হাব থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা।
স্টেশন চত্বরেই মেট্রো
চালু হয়ে গেল শিয়ালদহ মেট্রো। মেট্রো স্টেশনও হয়েছে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরেই। এবার মেট্রোয় চেপে শিয়ালদহ থেকে সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে পৌঁছনো যাবে মাত্র ২১ মিনিটে। আর এই পাঁচ নম্বর সেক্টরেই আছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বহু প্রতিষ্ঠান। তাছাড়াও আছে আরো প্রচুর অফিস। সেখানে কাজ করেন বহু মানুষ। শহরতলি থেকে আসা মানুষ এবার শিয়ালদহ থেকে সহজেই পৌঁছে যাবেন সল্টলেকে।
এরপর হাওড়া
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প অনুযায়ী রুটটি সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টর থেকে হাওড়া পর্যন্ত বিস্তৃত। শিয়ালদহ থেকে পশ্চিম অংশের কিছু কাজ বাকি। গঙ্গার তলার টানেলের কাজ শেষ। আশা করা হচ্ছে, ২০২৪ এর আগেই হাওড়া ময়দান পর্যন্ত পরিষেবা চালু হয়ে যাবে।
টিকিটের দাম
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকা। তবে শিয়ালদহ থেকে ন্যূনতম ভাড়া ১০ টাকা। সর্বোচ্চ ২০। সদ্য উদ্বোধন হওয়া শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনে মোট ২৯টি টিকিট কাউন্টারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এমনকি শিয়ালদহ মেইন ও সাউথের ট্রেনের টিকিটের জন্যও কাউন্টার খোলা হয়েছে।
সকাল সাতটা থেকে
যাত্রীসংখ্যা বাড়তে পারে ভেবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সকাল ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলবে মেট্রো। বাড়ানো হচ্ছে ট্রেনের সংখ্যাও। দুটো মেট্রোর মধ্যে কমানো হচ্ছে সময়ের ব্যবধান। ব্যস্ত সময়ে ১০ মিনিট অন্তর চলবে মেট্রো। অন্য সময়ে দুটো মেট্রোর ব্যবধান হবে ১২ মিনিট।
দিনে একশ ট্রেন
মেট্রো সূত্রের খবর, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পরিষেবায় দিনে ১০০টি ট্রেন চলবে। ৫০টি শিয়ালদহ থেকে এবং ৫০টি পাঁচ নম্বর সেক্টর থেকে। তবে আপাতত রোববার মেট্রো বন্ধ থাকবে। যাত্রীসংখ্যা বাড়লে ভবিষ্যতে রোববারও মেট্রো চালু থাকবে।
কাচের দেওয়াল
মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা আটকাতে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সবকটি স্টেশানের প্ল্যাটফর্মে কাচের দেওয়াল লাগানো। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এলেই কাচের দরজা খুলে যায় এবং যাত্রী ট্রেনে উঠতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১১ জুলাই গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন এক মহিলা।
সময় বাঁচবে
নিত্যযাত্রীদের একাংশের দাবি, শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভ মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ায় তাদের সময় অনেকটাই বাঁচবে। ইছাপুরের বাসিন্দা ঋতব্রত সাহা এবং রাজশ্রী কানুনগো আগে বিধাননগরে নেমে অটো ধরে সেক্টর ফাইভের অফিসে পৌঁছতেন। এখন থেকে অন্তত আধ ঘণ্টা সময় বাঁচবে এবং অটোর লাইনেও দাঁড়াতে হবে না।
খুশি যাত্রীরা
চন্দননগরের রক্তিম মুখোপাধ্যায়ের অফিসও সেক্টর ফাইভে। তিনি আশা করে আছেন কবে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত পুরো পরিষেবা চালু হবে। যেটুকু হয়েছে তাতেও তিনি খুশি।
ভিন্নমতও আছে
তবে অন মতও রয়েছে। কিছু যাত্রী বলছেন সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরের মেট্রো স্টেশনটি উইপ্রো মোড়ের কাছে, অথচ কলেজ মোড় বা এসডিএফের কাছে প্রচুর অফিস রয়েছে। এই অবস্থায় যদি মেট্রো থেকে নেমে অফিস পৌঁছাতে আবার অটো বা রিকশা ধরতে হয়, তার থেকে বিধাননগরে নেমে বাসে বা অটোয় আসাই ভালো। খরচও কম হবে তাতে।
অটোচালকদের ক্ষোভ
মেট্রো শিয়ালদহ পর্যন্ত চালু হওয়ায় রুটিরুজিতে টান পড়বে বলে মনে করছেন কয়েকটি রুটের অটোচালকেরা। তাদের মত অনুযায়ী, ফুলবাগান-করুণাময়ী রুটের অবস্থা তো আগেই শেষ, এখন বেঙ্গল কেমিক্যাল-কাইজার স্ট্রিটের অবস্থাও খারাপ হবে। শিয়ালদহ যাওয়ার জন্য নিত্যযাত্রীরা অটোর পরিবর্তে বেঙ্গল কেমিক্যাল থেকে মেট্রোয় উঠবে।
স্টেডিয়ামে আসার সুবিধা
সল্টলেক যুবভারতী স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা এখন অনেক বেশি সুবিধেজনক হবে। উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলির মানুষ শিয়ালদহে নেমে মেট্রোয় চেপে সরাসরি স্টেডিয়ামে পৌঁছতে পারবেন।
যাত্রী বাড়বে
এত দিন ফুলবাগান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় যেখানে দৈনিক আড়াই হাজার যাত্রী হতো, সেখানে শিয়ালদহ পর্যন্ত পরিষেবা সম্প্রসারণের পরে সেই সংখ্যা এক ধাক্কায় ৩৫ হাজারে পৌঁছে যাবে বলে অনুমান মেট্রো কর্তাদের। বছরদুয়েকের মধ্যে হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পরিষেবা শুরু হলে ২০২৫ সালের পরে শুধু শিয়ালদহতে দৈনিক যাত্রী সংখ্যা দুই লাখ হতে পারে বলে অনুমান।
যাত্রীদের সুবিধার জন্য
যাত্রীদের সুবিধার জন্য আছে এসকেলেটর। আছে লিফট এবং বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা।
সুন্দর স্টেশন
শিয়ালদহ থেকে সল্টলেক পাঁচ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত পথে চলবে অত্যাধুনিক ট্রেন। আর স্টেশনগুলিও শিল্পসম্মত এবং নির্মাণে রয়েছে অভিনবত্ব।