ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় গৃহকর্মী নির্যাতনের পর পলাতক বাংলাদেশের ক্রিকেটার শাহাদাত ও তাঁর স্ত্রী-এর বিষয়ে পোস্টটি পড়ে সুমন নিনাদ মতামত জানিয়েছেন বিস্তারিকভাবে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘আজকাল আর অবাক হই না, চমকে উঠি না, চিন্তা করে রোমকূপ শিহরিত হয় না৷ দিন দিন গায়ে সয়ে যাচ্ছে৷ শুধু বারবার মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়৷ আমাদের পূর্বপুরুষরা কি বর্বর ছিলেন? আমরা কি হালাকু খান, চেঙ্গিস খান বা আফ্রিকার জঙ্গলের মানুষখেকোদের উত্তরাধিকার? হঠাৎ করে কী শুরু হলো দেশে? হঠাৎ শুরু হলো? নাকি অনেক দিন ধরেই চলে আসছিল? আর আমরা আমাদের চর্মচক্ষু দিয়ে তা উপেক্ষা করে এসেছি? শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ কিংবা চ্যালা, প্রবাসী কিংবা শ্রমিক, স্কুলমাস্টার কিংবা ক্রিকেটার সবাই এক কাতারে৷ মনুষ্যত্ব, মানবিকতা কিংবা ভালোবাসা – এই শব্দগুলো আজ বাংলাদেশে সমাহিত হয়ে গেছে৷ বাংলাদেশ যেন আজ শিশু নির্যাতনের গোরস্থান৷ ছি!!!! ঘেন্না করতেও ঘেন্না হয় আমার! শাহাদাত হোসেন রাজিব!!! আপনি না বাংলাদেশের হাজার লাখো শিশুর রোল মডেল? কত শিশুই না জানি বড় হয়ে আপনার মতো পেস বোলার হতে চেয়েছিল৷ একজন রোল মডেল হিসেবে চমৎকার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেন ওদের সামনে৷ লজ্জা করে না আপনার পালিয়ে বেড়াতে?
-
ক্যামেরার চোখে বাংলাদেশে শিশু শ্রম
বেলুন কারখানায় শিশু শ্রমিক
ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের একটি বেলুন তৈরির কারখানায় কাজ করছে দশ বছরের এক শিশু৷ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪৫ লাখেরও বেশি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত, যার প্রায় ১৭ লাখেরও বেশি শিশু শ্রমিক খোদ রাজধানীতেই৷
-
ক্যামেরার চোখে বাংলাদেশে শিশু শ্রম
নেই কোনো নজরদারি
কামরাঙ্গীর চরের এই বেলুন কারখানায় খোলামেলাভাবে নানা ধরনের রাসায়নিকের মাঝে কাজ করে শিশু শ্রমিকরা৷ বাংলাদেশ সরকার ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি কাজে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করলেও আদতে তা মানা হচ্ছে না৷ সরকারিভাবে নেই কোনো নজরদারির ব্যবস্থা৷
-
ক্যামেরার চোখে বাংলাদেশে শিশু শ্রম
সিংহভাগই শিশু শ্রমিক
ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে কমপক্ষে দশটি বেলুন তৈরির কারখানা আছে, যেগুলোর সিংহভাগেই শিশু শ্রমিক কাজ করে৷ সড়ক থেকে একটু আড়ালে ভেতরের দিকেই কাজ করানো হয় শিশুদের৷ সপ্তাহে সাত দিনই সকাল-সন্ধ্যা কাজ করতে হয় তাদের৷ তবে শুক্রবারে আধাবেলা ছুটি মেলে৷
-
ক্যামেরার চোখে বাংলাদেশে শিশু শ্রম
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
ঢাকার কেরাণীগঞ্জে সিলভারের তৈজসপত্র তৈরির কারখানায় কাজ করে শিশু শ্রমিক আলী হোসেন৷ মারাত্মক উচ্চ শব্দের মধ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয় তাকে৷
-
ক্যামেরার চোখে বাংলাদেশে শিশু শ্রম
ট্যানারি কারখানায় শিশু শ্রমিক
ঢাকার হাজারীবাগের একটি ট্যানারি কারখানায় বাইরে কাজ করে নোয়াখালীর আসিফ৷ বয়স মাত্র বারো৷ রাসায়নিক মিশ্রিত চামড়া শুকানোর কাজ করে সে৷ দিনে ১২ ঘণ্টারও বেশি কাজ করে সামান্য যে মজুরি পায় তা দিয়ে সংসার চালাতে মাকে সাহায্য করে আসিফ৷
-
ক্যামেরার চোখে বাংলাদেশে শিশু শ্রম
মায়ের সঙ্গে রাব্বি
কামরাঙ্গীর চরের একটি প্লাস্টিক বোতল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে মায়ের সঙ্গে কাজ করে চাঁদপুরের রাব্বি৷ এই কেন্দ্রের মালিক নাকি শিশু শ্রমিক নিয়োগের বিরোধী৷ মায়ের অনুরোধে রাব্বিকে কাজ দেয়া হয়েছে বলে দাবি তাঁর৷ কারণ রাব্বির মা সারাদিন খেটে যে মজুরি পান তাতে সংসার চলে না৷ সংসার চালাতে তাই কাজ করতে হচ্ছে রাব্বিকে৷
-
ক্যামেরার চোখে বাংলাদেশে শিশু শ্রম
হিউম্যান হলারে শিশু হেল্পার
ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী হিউম্যান হলারগুলোতে শিশু শ্রমিক চোখে পড়ার মতো৷ বাহনগুলো দরজায় ঝুলে ঝুলে কাজ করতে হয় এ সব শিশুদের৷ চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকারও হয় এসব শিশুরা৷
-
ক্যামেরার চোখে বাংলাদেশে শিশু শ্রম
ব্রিক ফিল্ডে শিশুরা
ঢাকার আমিন বাজারের বিভিন্ন ব্রিক ফিল্ডেও কাজ করে শিশু শ্রমিকরা৷ প্রতি হাজার ইট বহন করে পারিশ্রমিক পায় ১০০-১২০ টাকা৷ একটি কাঁচা ইটের ওজন কমপক্ষে তিন কেজি৷ একেকটি শিশু ৬ থেকে ১৬টি ইট এক-একবারে মাথায় নিয়ে পৌঁছে দেয় কমপক্ষে ৫০০ গজ দূরে, ইট ভাটায়৷ তাদের কোনো কর্মঘণ্টাও ঠিক করা নেই৷ একটু বেশি উপার্জনের আশায় রাত পর্যন্ত কাজ করে তারা৷
-
ক্যামেরার চোখে বাংলাদেশে শিশু শ্রম
লেদ কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুরা
পুরনো ঢাকার লালবাগের একটি লেদ কারখানায় কাজ করে ১১ বছরের শিশু রহিম৷ সারাদিন লোহা কাটা, ভারি যন্ত্রপাতি মেরামত, হাতুরি পেটানোসহ নানা রকম ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে সে৷
লেখক: মোস্তাফিজুর রহমান (ঢাকা)
হ্যাপি নামের যে বাচ্চাটার উপরে আপনি ও আপনার পরিবার নির্যাতন করতেন, তার পেটে আপনি লাথি মারতেন, তাই না? আসলে আপনি লাথি মেরেছেন বাংলাদেশের মানচিত্রে! আপনি লাথি মেরেছেন লাল-সবুজের পতাকায়৷ আপনি লাথি মেরেছেন কোটি শিশুর স্বপ্নে, যারা বড় হয়ে আপনার মতো হতে চাইত৷''
‘‘মনুষ্যত্ব, মানবিকতা কিংবা ভালোবাসা – এই শব্দগুলো আজ বাংলাদেশে সমাহিত হয়ে গেছে৷'' সুমনের এই মন্তব্যের সাথে একমত পাঠক জালাল বরুয়া যোগ করেছেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষের মানবতা আজ ঘুমিয়ে আছে৷''
ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন ও তাঁর স্ত্রী শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলার আসামি হওয়ার পর আলোচনায় উঠে এসেছে গৃহকর্মী নির্যাতনের ভয়াবহতা৷ জাতীয় দলের ক্রিকেটার মানেই ‘বীর'৷ তাই বীরের ‘অপকর্ম' সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারছেন না৷
এ সম্পর্কে ডয়চে ভেলের পুরনো বন্ধু অসিত কুমার দাস মিন্টু বলছেন, ‘‘গৃহকর্মী নির্যাতনের পলাতক ক্রিকেটারের শাস্তি হওয়া উচিত৷ যারা অসহায় গৃহকর্মীদের নির্যাতন করে তাদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি হওয়া দরকার৷'' এসএম নাসির উদ্দিন, রুবেল হওলাদার, আনোয়ার হোসেন এবং জুনায়েদেরও একমত৷
এর উত্তরে কামাল হোসেন, ‘‘বাংলাদেশের আইন টাকার কাছে পাইকারি দরে বিক্রি হয়৷''
বাংলাদেশের আইন নিয়ে সন্দিহান অন্যদের মতো হাবিবুল্লাহ হাবীবও৷ বাংলাদেশের পুলিশের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তার মন্তব্য, ‘‘এদের কথা কি বলবো? শুনেছি আসামি না পেলে পুলিশ তার মা, বাবা, ভাইকে ধরে জিজ্ঞাসা করে, এর মা বাবা নাই, না জারজ?''
-
ভারতের নিখোঁজ শিশুরা
ভাগ্যের লিখন
ভারতে ‘শিশু বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের একটি সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে যে, ভারতে প্রতি ঘণ্টায় ১১ জন শিশু নিখোঁজ হয়ে থাকে৷ এদের মধ্যে কমপক্ষে চারজনকে আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায় না৷
-
ভারতের নিখোঁজ শিশুরা
বন্দিদশা
দিল্লির একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ১৬ বছর বয়সি মেয়ে পিংকিকে খুঁজে পাওয়া গেছে অপরিচিত একটি বাড়িতে৷ সেখানে ওকে জোর করে ঘরের কাজ করানো হচ্ছে এবং বলা বাহুল্য, কোনো বেতন ছাড়াই৷
-
ভারতের নিখোঁজ শিশুরা
দেশব্যাপী অনুসন্ধান
ছবিটিতে এক বাবার হাতে তাঁর হারিয়ে যাওয়া ছেলের ছবি আর তাঁর অন্য হাতে একটি বাক্স৷ সে বাক্সে রয়েছে মানুষের সাহায্য করা অর্থ, যে অর্থ দিয়ে এই বাবা তাঁর ছেলেকে খুঁজে বের করতে সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাবেন বলে ঠিক করেছেন৷
-
ভারতের নিখোঁজ শিশুরা
পালিয়ে যায়
যেসব শিশুরা বাড়ি থেকে নিজের ইচ্ছায় চলে যায় বা পালিয়ে যায়, ওরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরবর্তীতে কাজের ছেলে-মেয়ে হিসেবে বা এ ধরণেরই কোনো কাজ করে থাকে৷ যেমন চায়ের দোকান, পেট্রোল পাম্প বা কার্পেট তৈরি কারখানায়৷ ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লির একটি পেট্রোল পাম্প থেকে এমনই কিছু শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ৷
-
ভারতের নিখোঁজ শিশুরা
ধৈর্য ধরে থাকা
ছেলেটির হাতে ছয় বছর আগে ওর হারিয়ে যাওয়া বোনদের ছবি৷ ওদের খুঁজে পাবে এই আশায় এখনো বুক বেধে আছে ছেলেটির পুরো পরিবার৷ নিখোঁজ বোনদের ফিরে পাওয়ার জন্য পরিবার থেকে মাঝে মাঝেই বোনদের ছবি এবং নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিসহ প্রচারপত্র বিলি করা হয়৷
-
ভারতের নিখোঁজ শিশুরা
দীর্ঘ প্রতিক্ষা
নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এই শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া গেছে অবশেষে৷ শিশুটি ওর বাবা-মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য ঠিক এ জায়গাতেই অপেক্ষা করছে গত প্রায় এক বছর যাবত৷ কবে শেষ হবে এই অপেক্ষার পালা?
-
ভারতের নিখোঁজ শিশুরা
খুশির দিন ফিরে এসেছে
নিখোঁজ হয়ে যাওয়া অর্জুন আবারো মায়ের কোলে ফিরে এসে অত্যন্ত আনন্দিত, ভীষণ খুশি৷ অর্জুন ওর মাকে তার কষ্টের কথা জানিয়েছে৷ বলেছে, গত দু’বছর ওকে বেধে রাখা হয়েছিল এবং কাজ করতে বাধ্যও করা হয়েছিল৷ তবে ওর মা কিন্তু অর্জুনকে ফিরে পাবার আশা কখনো ছেড়ে দেয়নি৷
-
ভারতের নিখোঁজ শিশুরা
অতিরিক্ত সাবধানতা
এই মা তাঁর কয়েকজন শিশুর মধ্যে একজনকে হারিয়েছেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘আর কখনো আমি আমার শিশুদের চোখের আড়াল হতে দেব না৷ উল্লেখ্য, ‘শিশু বাঁচাও আন্দোলন’ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে www.bba.org.in ঠিকানায়৷
লেখক: বিজয়েতা দাস/ক্রিস্টিয়ান ইগনাটসি/এনএস
বন্ধু লিটন আহমেদ বলতে চাইছেন যে, ‘‘গৃহকর্মী নির্যাতনকারী আজ যদি জামাত শিবির বিএনপির কোনো লোক হতো, তাহলে পুলিশলীগ আসামি না পেলে তার মা-বোন-বাবা-ভাই কাউকে আটক করে নিয়া আসতো৷'' তাই লিটনের এখন প্রশ্ন, ‘‘শাহাদাত গ্রেপ্তার করতে এতদিন লাগে কেন?....পুলিশ মনে করে বাংলার জনগণ এখনও বোকা রয়েছে৷''
ইশতিয়াক হোসেন আর কী বলবেন? দেশে আইন-শৃঙ্খলা আর বিচার আচার কিছু নেই৷ কী আর বলবেন, তাই নিজের দেশকে ‘রহস্যময় দেশ' বলে মন্তব্য ইশতিয়াক হোসেনের৷
বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটারের ঘরে শিশু নির্যাতন! বিষয়টি খুবই লজ্জাকর বলে মন্তব্য করেছেন ইকবাল আহমেদসহ অনেক পাঠক৷
শুকুমার সরকারের একটাই প্রশ্ন ‘‘এই নির্যাতনের শেষ কোথায়?''
ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাঠক সজীব ইসলাম তো গৃহকর্মী না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন৷ অর্থাৎ তিনি বলতে চাইছেন যে,‘‘ইউরোপ/অ্যামেরিকার লোকজন ফুলটাইম জব করেও নিজেদের কাজ (রান্না-বান্না, কাপড় কাঁচা, বাজার) করতে পারলে, আমরা বাংলাদেশিরা কেন পারবো না? সুযোগ আছে জন্যই কি গৃহকর্মী রাখছি আর ইচ্ছামত নির্যাতন করছি?''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ