শান্তি প্রতিষ্ঠায় চাই নারীর অগ্রণী ভূমিকা
১৩ নভেম্বর ২০১০মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন জানিয়েছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় নারীর স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে৷ যে শান্তি প্রচেষ্টায় নারীদের কোন ভূমিকা থাকবে না, তাদের অধিকার রক্ষা করা হবে না বা নারীর স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবে – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন অবস্থাতেই সেই শান্তি প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে না৷ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এ কথাই জানিয়েছেন সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন৷ এখন প্রশ্ন হল - শান্তি প্রতিষ্ঠায় নারীরা কোন ধরণের ভূমিকা রাখতে পারেন?
আফগানিস্তানে নারীদের স্বাধীনতা কতটুকু? নয় বছর ধরে দেশটিতে চলছে সংঘর্ষ আর সংঘাত৷ সার্বক্ষণিকভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে শান্তি প্রতিষ্ঠার৷ কিন্তু কিছুতেই কোন সুরাহা হচ্ছে না৷ ন্যাটো সেনাদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষও প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিদিন৷ মুখ থুবড়ে পড়েছে শান্তি প্রচেষ্টা, স্বাধীনতা আর স্বাভাবিক জীবন যাত্রা৷ আর এসবের চরম মূল্য দিচ্ছে আফগান নারীরা৷ তাদের অধিকার প্রতিদিনই একটু একটু করে খর্ব করা হচ্ছে৷ তাদের অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে৷
গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোয় ধর্ষণ কমেনি
হিলারী ক্লিন্টন জানান, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোয় এ বছরের শুরুতে কয়েকশ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিল৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের সাহায্য বা রক্ষা করতে সক্ষম হয়নি৷ কঙ্গোর এসব নারীরা সংঘর্ষ এবং সংঘাতের অসহায় শিকার৷
এসব এলাকায় নারীদের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার ওপর জোর দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নারীদের আগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নারী এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ একটি বিতর্ক আলোচনায় হিলার ক্লিন্টন এ কথাগুলো বলেন৷
জাতিসংঘের ১৩২৫ নম্বর প্রস্তাব নিয়েই নিরাপত্তা পরিষদে শুরু হয় এই বিতর্ক৷ এই প্রস্তাবে পরিষ্কার জানানো হয়েছে, যে কোন সংঘাত এবং সংঘর্ষ নিরসনে নারীদেরও যুক্ত করতে হবে, শান্তি প্রতিষ্ঠায় তারা যেন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সে ব্যবস্থা থাকতে হবে৷
নারীদের সক্রিয়তাই অল্পবয়স্ক মেয়ে এবং অন্যান্য মহিলাদের সাহায্য করবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে৷ কারণ, একজন নারীই ভাল করে বুঝতে পারে যে, সংঘাত বা সংঘর্ষের সময়ে তার ওপর কোন ধরণের আঘাত আসতে পারে৷ হিলারি ক্লিন্টন প্রসঙ্গত বারবার গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোয় নারীদের ধর্ষণের কাহিনী উল্লেখ করেন৷
কেন নারীরা এগিয়ে আসছে না?
প্রশ্ন উঠতে পারে যাদের সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসার জন্য বলা হচ্ছে তাঁরা কোথায়? তাঁরা কেন এগিয়ে আসছে না? কেন সবসময়ই অন্য কেউ তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে, তাদের হয়ে কথা বলছে? ২০১০ সালের শন ম্যাক ব্রাইড শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ভারতের বিনালক্ষী নেপ্রাম জানান কেন এসব ভুক্তভোগী নারীরা এগিয়ে আসছে না৷ বিনালক্ষী বললেন, ‘‘প্রথমত এশিয়ার অনেক দেশই নতুন করে জেগে উঠছে৷ কিন্তু এখানকার প্রতিটি দেশেই পুরুষসাসিত সমাজ বিদ্যমান৷ একারণেই একটি জাতির গঠনে, একটি সুস্থ সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীদের কখনোই উদ্বুদ্ধ করা হয়নি এগিয়ে আসার জন্য৷ এমন কি সংঘর্ষ-সংঘাত মোকাবেলা বা শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও নয়৷ দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি সংঘর্ষের মূলেই রয়েছে পুরুষরা৷ তাদের হাতেই অস্ত্র, তাদের ডাকেই শুরু হয় সংঘাত আবার তাদের আহ্বানেই শান্তির জন্য সবাই গোল হয়ে এক টেবিলে বসে৷ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল বা আফগানিস্তান – যেখানেই তাকানো হোক না কেন আমরা দেখবো নারীরা সহিংসতার শিকার, কিন্তু তারা কখনোই সক্রিয়ভাবে সংঘর্ষ রোধে এগিয়ে আসছে না৷ শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠা নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যনীতি, সামাজিক সুযোগ-সুবিধা সব কিছুতেই মেয়েরা পিছিয়ে৷ এই দিকটি আগে ঠিক করতে হবে৷''
গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোয় গত জুলাই-আগাস্ট মাসেও কয়েক'শ মহিলা গণধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ বিভিন্ন জঙ্গি দল বিভিন্ন সময়ে দল বেঁধে এসব মহিলার ওপর চড়াও হয়৷ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেনি৷ এর ফলে এসব রক্ষী বাহিনী সহ জাতিসংঘ কঠিন সমালোচনার মুখে পড়ে৷
এই ব্যর্থতা কার?
হিলারি ক্লিন্টন বলেন, এসব ধর্ষণের ঘটনা আমাদের ব্যর্থতা, আন্তর্জাতিক ব্যর্থতাকেই প্রমাণ করে৷ এসব মহিলা এবং শিশুকে নিরাপত্তা প্রদানের ওপর জোর দেন তিনি৷ একই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোয় সংঘর্ষ নিরসনের উল্লেখ করেন৷ বিভিন্ন মানবাধিকতার সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে আরো সক্রিয়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি৷ যে বা যারা কঙ্গোয় এ ধরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের শাস্তির দাবি করেন হিলারি ক্লিন্টন৷
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দুঃখজনক ব্যাপার হল গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এসব অন্যায়-অত্যাচার নিয়ে যেন কোন মাথাব্যথা নেই৷ কেউই তা থামানোর চেষ্টা করছে না৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক