শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য তৎপরতা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮সোমবার ঢাকায় ডেমেক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শান্তিতে বিজয়' শীর্ষক একটি নির্বাচনি ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হয়৷ আর সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ৪০টি জেলা থেকে আসা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রায় চারশ' রাজনৈতিক নেতা অংশ নেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও ছিলেন সেখানে৷ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন৷ অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস নির্বাচনের শপথ নেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রাজনৈতিক নেতারা৷
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ন ও আদর্শ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকার সবসময় আন্তরিক রয়েছে৷ আগামীতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য ভুল ও মিথ্যা প্রচারনা থেকে সকলকে দূরে থাকতে হবে, বিদ্বেষ ছড়ানোর পথ থেকেও দূরে সরে আসতে হবে৷''
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘‘অনুষ্ঠানটি অদ্বিতীয়, কারণ, এখানে সারা দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের নেতারা এক ছাদের নীচে একত্রিত হয়েছেন৷ আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, একই সাথে নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই৷ তবে শান্তির পূর্বশর্ত হলো সামাজিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার৷''
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, ‘মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে থাকা বাংলাদেশের জন্য অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় পরিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা থাকা উচিত৷''
তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী ও সমর্থকদের অবশ্যই মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা, প্রচারণা চালানো, ভয়ভীতি, প্রতিশোধ বা জবরদস্তিমূলক বিধিনিষেধ ছাড়াই সমাবেশ করার স্বাধীনতা থাকা উচিত৷ বাংলাদেশিদের অবশ্যই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে নির্বাচনের আগে, নির্বাচন চলাকালে এবং নির্বাচনের পরে সংশ্লিষ্ট অহিংস আচরণের আহ্বান জানাতে হবে৷''
ব্রিটিশ হাই কমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণের প্রাপ্য৷ আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে সমর্থন করি৷ আজকে আমরা সবাই শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এবং রাজনীতি দেশের সবার উজ্জল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে৷ আজকে আমরা সবাই এখানে একত্রিত হয়েছি, কারণ, আমরা সবাই একই আকাঙ্খা ধারণ করি৷''
মঙ্গলবার ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক আমিনুল এহসান অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শান্তিতে বিজয় ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনগুলো যেন শান্তিপূর্ণ হয়৷ এজন্য বাংলাদেশের প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে সহনশীলতার চর্চা দরকার, সেই চর্চায় উদ্বুদ্ধ করা৷ পাশাপাশি মানুষও চায় তারা পরস্পরের সঙ্গে বসুক , কথা বলুক, আলোচনা করুক৷ সংলাপের মাধ্যমে তাদের দ্বন্দ্বগুলো নিরসন হোক৷ সেটা যেন কোনোভাবেই সহিংসতায় পরিণত না হয়৷ আমরা গতকালের (সোমবার) অনুষ্ঠানে দেশের সাধারণ মানুষের এই নয়ে বক্তব্য ভিডিও'র মাধ্যমে তুলে ধরেছি৷''
তিনি জানান, ‘‘আমাদের এই কাজ আরো বাড়বে৷ আমরা ‘শান্তিতে বিজয়' এই ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে এখন ৪০ জেলার প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে বসাবো৷ সাধারণ মানুষ তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরবেন নেতাদের কাছে৷ এর বাইরে আমরা পিস র্যালির আয়োজন করছি৷ রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের কর্মসূচি নিচ্ছি৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,‘‘স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ প্রকল্পের আওতায় আমরা এই ক্যাম্পেইন করছি৷ এখানে ইউএসএআইডি ও ইউকেএইড আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে৷ তাই ইউএস এবং ইউকেসহ অন্যান্য দেশের কূটনীতিকরা এই অনুষ্ঠানে থাকেন৷ তবে আরেকটা দিক হলো বিদেশি কূটনীতিকরাও তো বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও সহনশীল রাজনীতির বিষয়ে অ্যাডভোকেসি করছেন৷ তাঁরাও তো এই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলছেন৷ তাঁরাও এই বিষয়ে স্টেকহোল্ডার৷ তাই একসঙ্গে কথা বলা৷ আমরা যা বলছি, তা যদি রাষ্ট্রদূতরা বলেন, তার প্রভাব বেশি পড়ে৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞার বিভাগের শিক্ষক ড. শান্তনূ মজুমদার একই প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ফোরাম সক্রিয় হবে, এতে দোষের কিছু নেই৷ আমরা তো আর দরজা-জানালা বন্ধ করে থাকতে পারব না৷ ডিআই বা ইউএন বডি এরা কথা বলতেই পারে৷ তা নিয়ে সন্দেহের কিছু নেই৷ যদি আমরা ঠিক থাকি, তাহলে তো আর কোনো সমস্যা নেই৷ একটি দেশের নির্বাচন বা অন্য আরো অনেক বিষয় নিয়ে অন্য দেশ বা আন্তর্জাতিক সংগঠন কথা বলতেই পারে৷ তবে তা আইনের বাইরে গেলে সেটা ভিন্ন কথা৷ আমরা দেখি যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার বা অন্য বিষয় নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে৷ আবার চীনও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে৷ সেটা হয়তো আমাদের চোখে পড়ে না৷''