শব্দে স্বাদ আনে যে আশ্চর্য রোগ
বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম ‘সিনেসথেশিয়া’, যা থাকলে মাথায় ঘেঁটে যায় শ্রবণ, স্বাদ, দৃষ্টি ও ঘ্রাণশক্তি৷
শব্দের রঙ আসলে কেমন?
সংগীতশিল্পী কেটলিন হোভা সুরের মধ্যে রং দেখতে পান৷ চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় তিনি একজন ‘সিনেসথেট’, যাদের মাথায় প্রতিটি নির্দিষ্ট সুরের সাথে একটি করে রঙের চিত্র ভেসে ওঠে৷ বিশ্বের চার শতাংশ মানুষের মধ্যে কেটলিন একজন, যিনি সিনেসথিশিয়ায় ভোগেন৷ সাধারণ মানুষকে নিজের দুনিয়ার এক ঝলক দেখাতে তিনি তৈরি করেছেন রঙিন আলোয় আলোকিত এই বেহালা, যেখানে ফুটে ওঠে কেটলিনের মাথার ভেতর খেলতে থাকা রঙ৷
সংখ্যারও রঙ আছে
কারোলিনে বায়ার হামবুর্গে বসবাসরত একজন ডাক্তার৷ তিনি বলেন যে এই রোগ তাঁকে ছোটবেলায় অনেক সাহায্য করেছে৷ প্রতিটি অক্ষর বা সংখ্যার সাথে মাথায় একটি নির্দিষ্ট রঙ ফুটে উঠতো কারোলিনের ছোটবেলায়৷ সে কারণেই স্কুলে পড়া মনে রাখতে পারতেন অন্যদের তুলনায় বেশি৷
অঙ্ক হয়ে যায় সহজ
আঠেরোর সাথে আঠেরো গুণ করলে কত হয়? অন্য বাচ্চাদের তুলনায় সহজেই এমন অঙ্ক কষতে পারেন কারোলিনে৷ তাঁর মস্তিষ্কে, এই অঙ্কের সমাধান ৩২৪ আসলে হলুদ-সাদা ডোরাকাটা দোকানে রাখা দুটি সবুজ শশার মতন৷
সংগীতশিক্ষিকার জীবনে রঙ আনলো যে
স্টুটগার্টে অল্পবয়েসি ছেলেমেয়েদের গান শেখান আলেকজান্ড্রা কিরশনার৷ নিজে সিনেসথেট হবার কারণে খুব সহজেই চিনতে পারেন কোন কন্ঠ কার৷ কারণ, আলেকজান্ড্রার মাথায় প্রতিটি কন্ঠের জন্য বরাদ্দ আছে একটি বিশেষ রঙ৷
উঁচুতে হলুদ, নীচুতে নীল
অনেক উঁচু স্বর ছুঁতে পারে যে সব কন্ঠ, তাদের জন্য আলেকজান্ড্রার মাথায় খেলে হলুদ রঙ৷ বাকিদের জন্য নীল৷ কোনো স্বর বেসুর হলেই আলেকজান্ড্রার চোখে তা হয়ে যায় ধূসর, ঝাপসা৷
স্পর্শের স্বাদ, রঙ?
শুধু সুরের ক্ষেত্রেই নয়, স্পর্শের সাথেও রঙ মেলে আলেকজান্ড্রার মাথায়৷ মাঝে মাঝে কিছু নির্দিষ্ট স্বাদও পান তিনি৷ যেমন খুব জোরে তাঁর হাতে চিমটি কাটলে তিনি দেখতে পান হালকা গোলাপি ও নীল রঙ৷ গোলাপি রঙের সোয়েটার দেখলেই তাঁর জিভে ঠেকে স্ট্রবেরির স্বাদ!
রঙ থেকেও সুর আসে
আরেক সংগীতশিল্পী কাটিয়া ক্র্যুগের রঙ দেখে সুর চিনতে পারেন৷ সিনেসথেশিয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মিশরের নেফারতিতির একটি মূর্তির বিভিন্ন রঙের ভিত্তিতে গোটা একটি ‘কনচের্তো’ রচনা করে ফেলেছেন তিনি৷
অনেক রকমের সিনেসথেশিয়া একসাথে
মার্টিন শ্মিডেরার একাধারে বিজ্ঞানী ও তাত্ত্বিক৷ তাঁর রয়েছে প্রায় ২১ রকমের সিনেসথেশিয়া৷ এর ফলে, একই সাথে একটি শব্দ থেকে তার রঙ, স্বাদ পান তিনি৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও, মাথার ভেতর কখনোই ‘সেন্সরি ওভারলোড’ বা অনুভূতির আধিক্য হয় না৷
আসলেই কি ‘রোগ’?
অনেকে মনে করেন সিনেসথেশিয়া আসলে কোনো রোগ নয়৷ বরং এটি শুধুই একটি বিশেষ স্নায়বিক ক্ষমতা, যা চেষ্টা করলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন সিনেসথেট ব্যক্তি৷ একসাথে একাধিক অনুভূতি ভিড় করে আসলেও, সময়ের সাথে সাথে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, বলছেন শ্মিডেরার ও কিরশনার৷
বিখ্যাত যত সিনেসথেট
সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রায়ই একটি ধারণা থাকে যে সিনেসথেশিয়া আসলে স্নায়বিক মরীচীকা৷ কিন্তু একাধিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, সিনেসথেটদের মস্তিষ্কের কিছু অংশ থাকে ভিন্নভাবে সক্রিয়, যা কখনও জিনগতভাবে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে বাহিত হতে পারে৷ লেডি গাগা বা ফ্যারেল উইলিয়ামসের মতো বিখ্যাত তারকারাও যে সিনেসথেট, জানতেন কি?