লোহার আকরিকের সন্ধান মিলেছে দিনাজপুরে
১৯ জুন ২০১৯প্রকল্পে খনন কাজে নেতৃত্ব দেয়া, জিএসবির উপ পরিচালক প্রকৌশলী মাসুদ রানা জানিয়েছেন, তিন মাস ধরে কূপ খনন আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর তারা এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন৷
ডয়চে ভেলেকে মাসুদ রানা বলেন, ‘এ বছরের ১৯ এপ্রিল খনন কাজ শুরু করে জিএসবি৷ ১৩৩৪ ফুট গভীরতায় আকরিকের সন্ধান পাওয়া গেছে৷ পরে জয়পুরহাটের বিসিএসআইআর পরীক্ষাগার এবং খনন এলাকায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় উপাদান৷‘
তার ভিত্তিতে ইসবপুরে লোহা আকরিকের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর৷
আরো সাত বছর আগে আকরিকের সন্ধানে নেমেছিল জিএসবি৷ ২০১২-১৩ সালে, হাকিমপুরে ভূতাত্ত্বিক জরিপ হয়৷ ২০১৩ সালে প্রথমে মুশিদপুরে আকরিকের সন্ধান পায় তারা৷ কিন্তু সেখানে লোহার পরিমাণ ছিল খুব কম৷ তারপর বিরতি দেড় কিলোমিটার দূরে ইসবপুরে এ বছরের এপ্রিলে আবারো খনন শুরু করে সংস্থাটি৷
ইসবপুরকে এখনও আকরিক খনি বলতে নারাজ জিএসবি কর্মকর্তা মাসুদ রানা৷ তিনি বলছেন, জরিপ কাজ এখনও শেষ হয়নি৷ যদিও লোহার উপস্থিতির বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হয়েছেন তারা৷
তিনি জানান, ‘১৩৩৪ ফুট থেকে ১৭৮৬ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করেছি৷ এই গভীরতায় বিভিন্ন স্তরে আকরিক আছে৷ যার পুরুত্ব প্রায় ৪০০ ফুট৷'
পৃথিবীর খুব কম দেশে লোহার খনির পাওয়া যায়৷ এখন পর্যন্ত ক্যানাডা, অ্যামেরিকা, সুইডেন, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়ার মতো হাতে গোণা কয়েকটি দেশে এর সন্ধান মিলেছে৷ এই প্রকৌশলী বলছেন, ‘তুলনামূলক কম গভীরতায় আমরা লোহার আকরিকের সন্ধান পেয়েছি, যা বিরল৷ পৃথিবীর অন্য দেশে আরো অনেক গভীর পর্যন্ত খনন করতে হয়৷ '
মাসুদ রানা আশা করছেন, ‘এই খনি এলাকার ব্যাপ্তি ৫-৮ কিলোমিটার বিস্তৃত হতে পারে৷' তবে আরো পাঁচ থেকে সাতটি খনন শেষ করতে পারলে, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য দেয়া যাবে৷ তিনি বলছেন, খনি এলাকার ব্যাপ্তি ৫ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেলে এবং পুরুত্ব ৪০০ ফিট থাকলে, অবশ্যই এটাকে বড় মজুদ বলা যাবে৷
৫০০-৬০০ মিলিয়ন টন লোহা মজুদের যে খবরটি এসেছে, তা আমলে নিচ্ছেন না এই কর্মকর্তা৷ তাঁর দাবি, 'মাত্র দ্বিতীয় খনন চলছে৷ ফলে, আরো পাঁচ থেকে সাতটি খনন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই খনির ব্যাপ্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে না৷ ফলে খনিতে আকরিকের মজুদের পরিমাণও নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না৷'
খনন কাজ শেষ হলেই মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে জানিয়ে মাসুদ রানা বলেন, খনন কাজটা সময় সাপেক্ষ৷ তাঁর মতে, এপ্রিলে খনন শুরু করে, তা শেষ হতে জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছ৷ ফলে আশানুরূপ খনন শেষ করতে দীর্ঘ সময় দরকার৷
লোহার মান নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট এই কর্মকর্তা৷ তিনি বলছেন, পরীক্ষাগারের রিপোর্টে দেখা গেছে, আকরিকের লোহার পরিমাণ প্রায় ৬০ ভাগ৷
লোহার পাশাপাশি কপার, নিকেল আর ক্রোমিয়ামের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে এই খনিতে৷ জিএসবি কর্মকর্তাদের মতে তার পরিমাণ খুবই কম৷
জিএসবি উপপরিচালক মাসুদ রানা জানান, সব কাজ শেষ হলে, এই খনি থেকে লোহা উত্তোলনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে৷ বাংলাদেশ নিজে সেটা তুলতে পারবে৷ বাইরের কোনো দেশের সাহায্যের প্রয়োজন হবে না৷
তিনি বলেন, বাংলাদেশ দুইটা মাইনিং চলছে, আরো দুটো প্রক্রিয়াধীন আছে৷ ফলে আকরিক উত্তোলনের সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে৷