1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লেজার রশ্মির ৫০ বছর

২ জুন ২০১০

দেখতে দেখতে লেজার রশ্মির ৫০ বছর পূর্ণ হলো৷ জীবনযাত্রার অনেক ক্ষেত্রে লেজারের প্রয়োগ ছড়িয়ে পড়লেও এখনো আরও চমকের অপেক্ষা করছেন বিজ্ঞানীরা৷

https://p.dw.com/p/NfFi
লেজার’এর প্রয়োগ আজ প্রায় সব ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে পড়েছেছবি: picture-alliance/ ZB

ইতিহাস

১৯৬০ সালের ১৬ই মে ৩৩ বছর বয়স্ক মার্কিন পদার্থবিদ থিওডোর মেম্যান ক্যালিফোর্নিয়ার ম্যালিবু'তে একটি চৌকো ক্রিস্ট্যাল নিয়ে এক পরীক্ষা চালান৷ সেসময়ে অস্বাভাবিক ঘনত্বের উজ্জ্বল এক আলোর ছটা বেরিয়ে আসে৷ সেটাই ছিল লেজার রশ্মির জন্মলগ্ন৷ এরপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে লেজার'এর প্রয়োগ ছড়িয়ে পড়েছে৷ মোবাইল ফোনের ব্যাটারি থেকে শুরু করে হৃদযন্ত্রের পেসমেকার যন্ত্র – লেজার ছাড়া প্রায় কিছুই ভাবা যায় না৷ ভবিষ্যতে লেজার প্রযুক্তির প্রয়োগের সীমা আরও সম্প্রসারিত হতে চলেছে৷

নতুন প্রয়োগ

মিউনিখ'এর কাছে মাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউট লেজার সংক্রান্ত মৌলিক গবেষণার জন্য গোটা বিশ্বে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে৷ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ফেরেন্টস ক্রাউস নিজে অতি দ্রুত গতির সংক্ষিপ্ত লেজার বিচ্ছুরণের ক্ষেত্রে একজন নামী বিশেষজ্ঞ৷ বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ক্ষেত্রকে বলা হয় ‘অ্যাটোসেকেন্ড ফিজিক্স'৷ কয়েক বছর আগে এই শাখার পত্তন করেছিলেন অধ্যাপক ক্রাউস স্বয়ং৷ গবেষণাগার ঘুরে দেখানোর আগে তিনি বললেন, ‘‘নিরাপত্তার কারণে আমাদের এখানে বিশেষ লেজার চশমা ব্যবহার করতে হয়৷ এটা খুব একটা স্বস্তিকর নয়৷ তবে আমার মনে হয় এটা পরে নেওয়াই ভালো৷''

GUINNESS WORLD RECORDS EHRT GARCHINGER ATTOSEKUNDENPHYSIKER
গিনিস বুকের সার্টিফিকেট হাতে অধ্যাপক ফেরেন্টস ক্রাউসছবি: Thorsten Naeser

অধ্যাপক ফেরেন্টস ক্রাউস'এর দপ্তরে শোভা পাচ্ছে ‘গিনিস বুক অফ রেকর্ডস'এর একটা সার্টিফিকেট৷ ২০০৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট লেজার রশ্মি তৈরির কৃতিত্বের জন্যই এই স্বীকৃতি৷ এই লেজার রশ্মির স্থায়িত্ব ছিল সেকেন্ডের ৮,০০০ কোটি ভাগের মাত্র এক ভাগের ৮,০০০ কোটি ভাগ৷ হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন৷ বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় ৮০ অ্যাটোসেকেন্ড৷ অণু বা পরমাণুর ইলেক্ট্রনের ছবি তুলতে চাইলে সময়ের এমন সূক্ষ্ম হিসেব নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়৷ বলাই বাহুল্য, এমন সূক্ষ্ম স্তরে কাজ করতে হলে চাই গবেষণাগারের বিশেষ পরিবেশ৷ বিশাল ঐ গবেষণাগার সম্পূর্ণ অন্ধকার৷ বাতাসের মৃদু শব্দ শোনা যাচ্ছে৷ প্রায় ১০ মিটার লম্বা এক টেবিলে ৩ তরুণ বিজ্ঞানী কাজ করে চলেছেন৷ চারিদিকে পরিমাপের যন্ত্র, তার, সরঞ্জাম ও মনিটরের ছড়াছড়ি৷ অধ্যাপক ক্রাউস জানালেন, ‘‘বাস্তবে এই জটিল সাজ-সরঞ্জামকে এককথায় বর্ণনা দেওয়া যায়৷ এটা আসলে এক অতি দ্রুত গতির ক্যামেরা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ এই ক্যামেরার ফ্ল্যাশ লাইটের স্থায়িত্ব মাত্র এক অ্যাটোসেকেন্ড৷'' এক বিশাল বায়ুশূন্য আধারের মধ্যে গবেষকরা অ্যাটোসেকেন্ড মাপের লেজার রশ্মি সৃষ্টি করছেন৷ উত্তেজিত পরমাণুর মধ্যে ইলেক্ট্রনের ছবি তুলতেই ‘স্ট্রোবোস্কোপ'এর মতো এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়৷

Deutschland Taufliegen Bild gewann Fotowettbewerb wissenschaft visuell 99 Flash-Galerie
শরীরে ক্যান্সারের আশঙ্কা সম্পর্কে আগাম তথ্য পেতে লেজার সহায়ক হতে পারেছবি: picture alliance / dpa

গবেষণার গুরুত্ব

প্রশ্ন উঠতে পারে, পরমাণু গবেষণায় ইলেক্ট্রনের চালচলন জানা কেন এত জরুরি? এতকাল অণু-পরমাণুর মধ্যে ইলেক্ট্রনের গতি-প্রকৃতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করেই বিজ্ঞানীদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল৷ এখন গবেষকরা নিজেরাই ইলেক্ট্রনের গতি নির্ধারণ করতে চাইছেন৷ কৃত্রিম উপায়ে এই কাজ করতে পারলে অনেক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে বলে তাঁদের ধারণা৷ অন্যদিকে মাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউট'এর বিজ্ঞানীরা চিকিৎসার ক্ষেত্রেও লেজার'এর নতুন প্রয়োগের বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করছেন৷ অতি ক্ষুদ্র লেজার রশ্মির মাধ্যমে তাঁরা ইলেক্ট্রনের গতি এতটাই বাড়িয়ে দিতে চান, যাতে তা লেজারের মতো এক্স-রে সৃষ্টি করে৷ শরীরে ক্যান্সারের আশঙ্কা সম্পর্কে আগাম তথ্য পেতে এই প্রযুক্তি অত্যন্ত কাজে লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ অধ্যাপক ক্রাউস'এর মতে, ‘‘কোনোদিন যদি আমরা এই লক্ষ্য পূরণ করতে পারি, তখন আমরা এমন এক ছোট আকারের যন্ত্র তৈরি করতে পারবো, যার মাধ্যমে চিকিৎসার কাজে বিশেষ শক্তিশালী এক্স-রে সৃষ্টি করা সম্ভব হবে৷ তখন ক্যান্সার সনাক্ত করার কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে৷''

মৌলিক গবেষণার এমন স্তর সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা বরাবরই সীমিত৷ তবে লেজার নিয়ে মিউনিখের এই গবেষণা হয়তো কোনোদিন যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার