1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লিও টলস্টয় নিজ বাসভূমে পরবাসী

২০ নভেম্বর ২০১০

মাত্র এক শতাব্দী আগেও রাশিয়ার কিংবদন্তিপ্রতিম লেখক লিও টলস্টয়ের মৃত্যুতে গোটা দেশটি যেন এক গভীরতর বেদনায় শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল৷ কিন্তু সময়ে বদলেছে সবকিছুই৷ আজ স্বদেশেই বিস্মরণ আর অনাদরের ধূলোয় ঢাকা পড়েছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/QEDa
Leo Tolstoi, Sophia, Bers, Anna Karenina, Russian author, Tolstoy, War and Peace, স্ত্রী, সোফিয়া বের্স, লিও টলস্টয়
স্ত্রী সোফিয়া বের্স এর পাশে লিও টলস্টয়ছবি: dpa

বাড়ি থেকে একরকম একবস্ত্রে পালিয়ে ছুটতে ছুটতে ‘ওয়ার এ্যান্ড পিস' কিংবা ‘আনা কারেনিনা'র মতো অসাধারণ গ্রন্থের লেখক রাশিয়ার যে স্থানটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন৷ ঠিক যে স্থানটিতে তাঁর জীবনাবসান ঘটেছিল৷ মৃত্যুর অব্যবহিত পরের ক্ষণটিতে সেই পাড়াগাঁ'র জলাকীর্ণ ছোট্ট রেলওয়ে স্টেশনটির ওপরে শোকাচ্ছন্ন গোটা রাশিয়াই যেন উবু হয়ে নুয়ে পড়েছিল বেদনায়৷ কিন্তু আজ মাত্র এক শতাব্দী পেরোতে না পেরোতেই রাশিয়ার এই মহান লেখক নিজবাসভূমে পরবাসী প্রায়৷ স্বদেশে তাঁর এই বিস্মরণের প্রেক্ষিতে বলা চলে পশ্চিমেই তিনি সমধিক আদৃত যেনবা৷

আজ থেকে ঠিক একশো বছর আগের এমনই এক শনিবারে মৃত্যুবরণ করেছিলেন তিনি৷ পকেটে মাত্র পঞ্চাশ রুবল নিয়ে, বাড়ি থেকে পালিয়ে, সস্ত্রীক বিরাশি বছরের প্রবীণ হন্যমান টলস্টয় এক মনাস্ট্রি থেকে আরেকটিতে ছুটতে ছুটতে পালাতে পালাতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন৷ শেষতক আস্টাপভো নামের ছোট্ট সেই রেলওয়ে স্টেশনটির কাছে এসে আর পারেননি৷ শীত কাবু করে ফেলেছিল তাঁকে৷

শেষপর্যন্ত অসুস্থতার একপর্যায়ে সেই স্টেশনেই শীতল এক মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন এই মহান লেখক৷ আজকের রাশিয়ায়, এইদিনে, এই শনিবারের সংবাদমাধ্যমগুলোর অনুষ্ঠান কিংবা আয়োজনের দিকে তাকালে বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয় যে এই মানুষটি ছিলেন রাশিয়ার গর্ব৷ টেলিভিশনের অনুষ্ঠানমালায় যাকে বলে প্রাইমটাইম, সেখানে টলস্টল অনুপস্থিত, তাঁর স্মৃতির যেন কোনো লেশমাত্র নেই! না কোনো রেট্রোসপেক্টিভ না অন্যকোনো আয়োজন৷

প্রচণ্ড একরোখা মানুষ ছিলেন বটে, সরকারের কোনকিছুই, বলা চলে যে কোনো ধরণের রাষ্ট্রযন্ত্রেই তাঁর ছিল অনাস্থা৷ কোনো সরকার ব্যবস্থাকেই ঠিক পছন্দ করতেন না৷ কিন্তু তাই বলে যে অঢেল রত্নের প্রাচুর্য তিনি রাশিয়াকে দিয়ে গেছেন তাঁর সুবিশাল, মহৎ সৃষ্টি, সমুদয় সাহিত্যকর্ম বাবদ৷ তাতেও কি কিছুটা কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধা জানানো উচিৎ ছিল না৷ না, তাও হয়নি৷ এক শতাব্দী আগে যেমন ছিলেন, আজো ঠিক তেমনি এক অস্বস্তিকর মানুষই যেন রয়ে গেলেন এই মহান লেখক৷

মস্কোর টলস্টল জাদুঘরের পরিচালক রেমিজভ বলেছেন, তাঁর এই মৃত্যু গোটা পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল৷ তাঁর এ'মৃত্যু যেন এক রূপক, যেন প্রতীকি বিষয়৷ হেলেন মিরেন অভিনীত হলিউডি ছবি ‘দ্য লাস্ট স্টেশন' রাজধানীর পয়ত্রিশটি বড়পর্দায় টলস্টয়কে স্মরণ করলেও রাশিয়ার স্টুডিওগুলো যেন বোবা-কালা-স্থানুবৎ হয়ে গেছে৷ তারা কিছুই করেনি৷ অথচ ১৯৯৯ সালে, রাশিয়ার আরেকজন খ্যাতিমান, কবি আলেক্সান্দর পুশকিনের বাই সেন্টেনিয়েল ঢাকঢোল বাজিয়েই হয়েছিল৷ সেসময়ের আয়োজনে কোন খামতি ছিলো না৷ রাজকীয় সেই স্মরণযজ্ঞে অফিসিয়েলি পুশকিন দিবসের ঘোষণাও এসেছিলো৷

অথচ আজ এক শতাব্দী পেরিয়ে নীতিবান টলস্টয়ের মৃত্যুদিনে অনীহ রাশিয়া অদ্ভুত এক শৈত্যময় নীরবতায় যেন তাঁকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে৷ অবশ্য আজকের রাশিয়ায় এমনটিই হওয়ার কথা বটে৷ কি দর্শনে, কি জীবনাচরণে টলস্টয়ের মতোন একরোখা, নীতিবান এক মহান লেখককে আজকের রাশিয়া কি ধারণে সক্ষম! হয়তো তাই এই জোর করে ভুলে থাকা, অপাঙ্গে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার এই আরোপিত নীরবতা৷

প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক