লাল থেকে সবুজ হওয়া বাংলায় দায়িত্বের পাহাড়ের ওপর মমতা
১৪ মে ২০১১জোটের হাতে ২২৭, তৃণমূল একাই ১৮৪
গোটা পশ্চিমবঙ্গেই বদলে গেছে পুরো ছবি৷ শেষ নির্বাচনেও যেখানে বামজোটের দখলেই ছিল সব, মাত্র পাঁচ বছরের কম সময়ে সেই পশ্চিমবঙ্গের হাওয়া পুরো ঘুরে গিয়েছে বিরোধীদের দিকে৷ খুলে বললে, বাম বিরোধীতার দিকে৷ শেষ পর্যন্ত বামপন্থী জোট মাত্র ৬২টি আসনের দখল রাখতে পেরেছে৷ যাতে সিপিআইএমের আসন ৪০টি৷ হেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য সহ আবাসন মন্ত্রী গৌতম দেব, অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত৷ নামজাদা নেতাদের হারের তালিকাটা এতটাই দীর্ঘ যে তার থেকে এটা স্পষ্ট প্রমাণ হয়ে গেছে যে গোটা মন্ত্রিসভাটাকেই দূরে ঠেলে দিয়েছেন রাজ্যের মানুষ৷ আর মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন পেয়ে বাংলার রাজনীতির রঙকে লাল থেকে সবুজে বদলে ফেলেছে মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস আর কংগ্রেসের জোট৷ কংগ্রেস এককভাবে জিতেছে মোট ৪২ টি আসন৷ এর বাইরে এস ইউ সি একটি এবং দুটি আসন নির্দলের দখলে আর পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দখলে তিনটি আসন৷ মোট ২৯৪ আসনের বিধানসভায় এমন পরিপূর্ণ ভরাডুবির মুখে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর বামফ্রন্ট৷
বিরোধীতার রাজনীতি থেকে এবার দায়িত্বের রাজনীতি
সেই ১৯৮২ সাল থেকে প্রায় ছাত্র অবস্থাতেই রাজনীতিতে এসেছিলেন যে তরুণী, সেদিনের সেই মমতা ব্যানার্জ্জীই আজ হতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী৷ কলকাতার দক্ষিণাঞ্চলের কালিঘাটের সামান্য নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে তাঁর রাজনৈতিক উত্থান আসলে শুধুমাত্র বাম বিরোধীতায় ভর করেই৷ সারা জীবন প্রতিবাদের রাজনীতি করে, কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে নিজের আলাদা দল গড়ে তিনি অবশেষে প্রমাণ করে দিলেন, বামদুর্গে ফাটলই শুধু নয় , গোটা দুর্গটাকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়াও সম্ভব৷ তারই প্রতিফলন ঘটে গেল বামফ্রন্টের জন্য গতকালের তেরো মে'র কালো শুক্রবারে৷ লহমায় ইতিহাস তৈরি হল গোটা দুনিয়ার সামনে৷ কিন্তু তারপরের দায়িত্বটা অনেক বেশি বড়৷ সেকথা জানেন বলেই ইতিমধ্যে সেই চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী৷ রাজ্যের উন্নয়ন আর মা মাটি মানুষের জন্য সুশাসনই হবে তাঁর নতুন সরকারের মূল মন্ত্র৷ একথা ঘোষণা করেই বলে দিয়েছেন, চ্যালেঞ্জ আছে তা তিনি জানেন৷ তবে, সেটাকে কিভাবে মোকাবিলা করা যায় তাও তাঁর জানা আছে৷
হারের ব্যাখ্যা নাকি দোষারোপ
কিন্তু কেন এই শোচনীয় ফলাফল বামেদের? এর জবাবে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব বাবুর মন্তব্য, ‘বুঝতে পারিনি৷' রাজ্য সিপিএমের প্রধান ব্যক্তিত্ব বিমান বসু ইতিহাসের স্মরণাপন্ন হয়ে বলেছেন, ‘এমন হয়৷ ইন্দিরা গান্ধীকেও হারতে হয়েছিল৷' আর এবারের নির্বাচনী যুদ্ধে বাম সেনাপতি আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেবের বক্তব্য, ‘মানুষ আমাদের কথা বিশ্বাস করেন নি৷' তবে, কেন এই হার তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ এখনও শুরু করতেই পারে নি বামেরা৷ বরং তার বদলে যেটা এই মুহূর্তে চলছে, তা হল এই হারের জন্য একে অপরকে দোষারোপের কূট তর্কাতর্কি৷ যদিও, দীর্ঘ ৩৪ বছরের শাসনের পর বামেদের সামনে অপেক্ষা করছে বিরোধী আসনে বসার তিক্ততা৷ গঠনমূলক বিরোধীতার কথা শোনা যাচ্ছে নেতাদের মুখে৷
কিন্তু বদলটা ঘটে গেছে৷ আর সেটা সত্যিই ‘গঠনমূলক৷' আর যাই হোক, এই বিপুল জনসমর্থনের জনাদেশ কখনোই ‘অমূলক' নয়৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: জান্নাতুল ফেরদৌস