লারা ক্রফ্ট: বড় স্তন থেকে বাদামি নারী
কম্পিউটার গেমের নায়িকা লারা ক্রফ্ট আবারো বড় পর্দায় ফিরেছেন৷ ‘টুম্ব রেইডার’ নামের নতুন ছবিতে তার চরিত্রে অভিনয় করেছেন এলিসিয়া ভিকান্দার৷ কম্পিউটার গেমের এই নায়িকার বড় পর্দায় পরিবর্তন নিয়ে এই ছবিঘর৷
দুর্ঘটনায় পাওয়া ‘সম্পদ’
কম্পিউটারের পর্দায় লারা ক্রফ্ট প্রথম স্থান পায় ১৯৯৬ সালে৷ সেসময় এই নায়িকার বড় স্তন থাকার ব্যাপারটি অনেকের চোখে পড়েছিল৷ অথচ এই চরিত্র যখন পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তখন তাতে মাত্রাতিরিক্ত বড় এমন কিছুর স্থান ছিল না৷ কিন্তু কোডিংয়ে এক ভুলের কারণে সেটা পেয়ে যায় চরিত্রটি৷ আর যে প্রোগ্রামার ভুলটা করেছিলেন, তাঁর পুরুষ সতীর্থরা লারা ক্রফটের বড় স্তন পছন্দ করেন৷ এভাবেই তা জায়গা করে নেয় ইতিহাসে৷
অ্যাকশন-বার্বি
প্যাক-ম্যান এবং সুপার মারিয়োর পর নব্বইয়ের দশকে বাজারে আসে লারা ক্রফ্ট৷ সেসময়কার পুরুষের আধিপত্য থাকা কম্পিউটার গেমের জগতে সাড়া জাগায় চরিত্রটি৷ পর্দায় তাঁকে যে শুধু শক্তিশালী এবং সাহসী মনে হতো, তাই নয়, তার ছিল এক বার্বি পুতুলের মতো অবাস্তব দৈহিক গঠন: বড় স্তন, সরু কোমর এবং নজরে পড়ার মতো পশ্চাৎদেশ৷
অতঃপর এলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
কম্পিউটার গেমের সফল চরিত্রটির বড় পর্দায় হাজির হতে খুব বেশি সময় লাগেনি৷ লারা ক্রফ্টের চরিত্রে রুপালি পর্দায় হাজির হন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি৷ টুম্ব রেইডারের দু’টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি৷
বড় পর্দায়ও সফল
প্রথম ‘লারা ক্রফটের টুম্ব রেইডার’ ছবি মুক্তি পায় ২০০১ সালে৷ লারা তার মৃত বাবার বাড়িতে একটি ঘড়ি পেয়েছিলেন৷ সেই ঘড়িতে গোপন একটা কিছু লুকানো ছিল যার সূত্র ধরে আগাতে থাকেন তিনি৷ সেসময়কার দর্শকরা যা যা চেয়েছিল সবই ছিল ছবিতে: হটপ্যান্ট, বন্দুক, অ্যাকশন এবং শ্বাসরুদ্ধকর সব চিত্রায়ন৷ তা সত্ত্বেও ছবিটি নিন্দুকদের মন জয় করতে পারেনি, তবে আয় করেছে ২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
জুটল না অস্কার
কম্পিউটার গেমটির আদলে তৈরি দ্বিতীয় ছবি ‘টুম্ব রেইডার - দ্য ক্র্যাডল অফ লাইফ’ মোটামুটি ব্যবসা সফল ছিল৷ জোলি চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে তাঁর দক্ষতার পুরোটাই উজাড় করে দিয়েছিলেন, কিন্তু তাতে অস্কার জোটেনি৷ বরং ‘সবচেয়ে খারাপ অভিনেত্রী’ হিসেবে এক অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়নের তালিকায় নাম উঠেছিল তাঁর৷ আসলে চরিত্রটির কোনো গভীরতা ছিল না৷ বরং দ্বিতীয় ছবিতেও আকর্ষণীয় নারী, অ্যাকশন এবং বিনোদন প্রাধান্য পেয়েছিল৷
বাস্তব জীবনের লারা
২০০৬ সালে, অর্থাৎ প্রথম টুম্ব রেইডার গেম মুক্তির একদশক পর বাজারে আসে ‘টুম্ব রেইডার - দ্য লিজেন্ড’ গেমটি৷ এই গেমে অবশ্য চরিত্রটিকে কিছুটা বাস্তবের নারীর মতো করে গড়ে তোলা হয়৷ তাঁর দেহের নানা অংশকে স্বাভাবিক নারীর আদল দেয়ার চেষ্টা করা হয়৷ গেমটির প্রসারে মডেল করিমা আদিববকে (ছবিতে দেখা যাচ্ছে) সেসময় দেখা গেছে বাস্তব জীবনের লারা ক্রফ্ট হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে৷
পুরোই বদলে গেলেন লারা
‘টুম্ব রেইডার’ গেমের নির্মাতারা ২০১৩ সালে এক নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন৷ গেমের কেন্দ্রীয় চরিত্রটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন তারা৷ সেক্সি চরিত্রের বদলে এক কঠোর, ছিমছাম এবং বুদ্ধিমান চরিত্র গড়ে তোলা হয়৷ গেমটিতে দেখানো হয় কিভাবে একজন অনভিজ্ঞ গবেষক মহৎ যোদ্ধায় পরিনত হন যিনি কিনা যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতেও টিকে থাকতে জানেন৷
ছবির চেয়ে গেমে বেশি খরচ
সেসময় অবশ্য একটি কম্পিউটার গেম তৈরিতে সিনেমার চেয়ে বেশি খরচ করতে শুরু করেছেন নির্মাতারা৷ লারা ক্রফ্টের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ প্রযুক্তির উন্নয়ন তখন এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে কম্পিউটার গেমের লারাকে দেখতে মোটামুটি বাস্তবের এক মানবী মনে হতে শুরু করে৷
বড় পর্দায় নতুন লারা
কম্পিউটার গেমের ছিমছাম লারাকে বাস্তবের চরিত্রে রূপ দিতে বেছে নেয়া হয় সুইডিশ অভিনেত্রী এলিসিয়া ভিকান্দারকে৷ শারীরিক গঠনের দিক থেকে চরিত্রটির সঙ্গে তাঁর বেশ মিল রয়েছে৷
সবচেয়ে সফল নায়িকা
‘লারা ক্রফট’ সিরিজের সর্বশেষ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে কিছুদিন আগে৷ গত দুই দশকের বেশি সময়ে গেমটি ‘গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে’ ছয়বার জায়গা পেয়েছে৷ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল ভিডিও গেম চরিত্র লারা ক্রফ্ট৷ প্রশ্ন হচ্ছে, রুপালি পর্দায়ও কি সেই চরিত্রকে সবচেয়ে সফল করতে পারবেন ভিকান্দার?