1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লকডাউন বহু প্রাণ বাঁচিয়ে দিয়েছে

২১ মে ২০২০

ঝড়ে পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৭২ জনের। লকডাউনের কারণে অধিকাংশ মানুষ ঘরে ছিলেন। তাই সম্ভবত মৃতের সংখ্যা হাজারে পৌঁছয়নি।

https://p.dw.com/p/3caCJ
ছবি: Reuters/

আমফানের দাপটে পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতাতেই মারা গিয়েছেন ১৫ জন। হাওড়ায় সাত জন। উত্তর ২৪ পরগনায় ১৭ জন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৮ জন। পূর্ব মেদিনীপুরে ছয় জন। হুগলিতে দুই জন। অধিকাংশ লোকই বাড়ির দেওয়ালে চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

যে কোনও মৃত্যুই দুঃখের। আমফান আসার আগে থেকেই উপকূলবর্তী সমস্ত এলাকায় মাইকিং করে পুলিশ এবং প্রশাসন সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছে। সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রশাসন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে নিয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও মৃত্যু এড়ানো গেল না।

আসলে মৃত্যু এড়ানো যায় না। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, যে ঝড় বুধবার পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে, তাতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হওয়ার কথা। ৭২ সেখানে সত্যিই খুব বেশি নয়। হয়তো মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। আরও মৃত্যুর খবর পাওয়া যাবে। কিন্তু তা হাজারের কাছাকাছি পৌঁছবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

লকডাউন বহু মানুষকে প্রাণে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, মার্চের শেষ থেকে দেশ জুড়ে করোনা-লকডাউন শুরু হয়েছে। কাজে যেতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। অধিকাংশই বাড়িতে আটকে আছেন। একমাত্র পরিযায়ী শ্রমিকরাই এই পরিস্থিতিতে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেছেন। সুন্দরবন থেকেও বহু শ্রমিক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শ্রমিকের কাজ করতে যান। তাঁদের অনেকেই কিছু দিন আগে গ্রামে ফিরতে পেরেছেন। কেউ কেউ এখনও আটকে রাস্তায়। কিন্তু অধিকাংশ লোকই বাড়িতে। জেলেরা মাছ ধরতে বেরতে পারেননি। জঙ্গলে মধু আনতে যেতে পারছেন না সুন্দরবনের বহু মানুষ। মাছের মিন ধরা থেকে কাঁকড়া শিকার-- সবই বন্ধ। শুধু তাই নয়, কলকাতা শহরেও কার্যত সকলে গৃহবন্দি। অফিস এখনও খোলেনি। ফলে ঝড়ের সময় প্রায় সকলেই বাড়িতে ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কারণেই বহু মানুষ প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন।

কী হয় সাধারণত? পূর্ব অভিজ্ঞতা বলছে, আমফানের চেয়ে অনেক কম গতির ঝড়েরও বহু মানুষের মৃত্যু হয়। বিপদ সংকেত থাকা সত্ত্বেও মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়েন জেলেরা। সাধারণ কালবৈশাখীর পরেও খবর পাওয়া যায় বহু জেলে নৌকো নিখোঁজ। কখনও কখনও শোনা যায়, ঝড়ের দাপটে তাঁরা বাংলাদেশে পৌঁছে গিয়েছেন। কখনও নৌকো উল্টে মৃত্যুর খবর আসে। জঙ্গলে হারিয়ে যান বহু মানুষ। শহর মফস্বলে রাস্তায় থাকা মানুষরা গাছ চাপা পড়ে মারা যান। দোকানের উপর গাছ বা ল্যাম্পপোস্ট পড়ে অনেকের মৃত্যু হয়। যাত্রী বোঝাই বাসের উপর গাছ পড়ে যায়, বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বহু মানুষের।

লকডাউনের জেরে গত কয়েক মাস ধরে রাস্তাঘাটে বাস নেই। জেলেরা নৌকো তুলে রেখেছেন। শহরে অধিকাংশ মানুষ বাড়িতে বসে কাজ করছেন। বহু মানুষ কাজ হারিয়ে গৃহবন্দি। ফলে প্রশাসনের অসুবিধা হয়নি, বাড়িতে থাকা লোকেদের ঝড়ের সময় বাড়িতেই আটকে রাখতে। বুধবার দুপুর থেকে শহরে এবং গ্রামে রাস্তাঘাটে কার্যত কোনও লোক দেখা যায়নি।

আমফান পশ্চিমবঙ্গকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। এরপর কী ভাবে রাজ্যটি আবার ঘুরে দাঁড়াবে, তা বলা কঠিন। লকডাউনের পরে যাঁরা কাজে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মানুষ ঘর হারিয়েছেন, সম্পত্তি হারিয়েছেন। অপূরণীয় ক্ষতি। তবে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। 

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো