1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লকডাউন-ই শেখাল মানুষের পাশে দাঁড়াতে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৪ মার্চ ২০২১

দেশের নাগরিকদের বিদেশির তকমা দিতে পারে না রাষ্ট্র৷ এই প্রচার সামনে রেখে একজোট হয়েছিল কিছু মানুষ৷ লকডাউন বদলে দিয়েছে লড়াইয়ের পথ৷

https://p.dw.com/p/3qCnZ
ছবি: Payel Samanta/DW

লকডাউনে যে লড়াই শুরু

লকডাউনের আগের পর্বের কথা৷ জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে ভারতে হইচই৷ তখন বাংলাতেও তীব্র আন্দোলন চলছে৷ রাজনৈতিক দলগুলির বাইরে বিভিন্ন সংগঠন ও গোষ্ঠী আন্দোলনে নেমেছে৷ হঠাৎই বদলে যায় ছবিটা৷ করোনার জেরে লকডাউন করতে হয় কেন্দ্রীয় সরকারকে৷ বদলে যায় আন্দোলনের অভিমুখ৷ শুরু হয় এক অন্য লড়াই৷ আর্থিকভাবে দুর্বল, রোজগারহীন মানুষের জীবনযুদ্ধই বড় হয়ে ওঠে৷ মানুষের স্বার্থে গড়ে ওঠে ‘হিউম্যানস অফ পাটুলি'-র মতো সংগঠন৷ নজর পড়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে৷ বেঁচে থাকার লড়াই অগ্রাধিকার পায়, পাশাপাশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াইও চলতে থাকে৷

লকডাউনে শিকেয় উঠেছিল পড়াশোনা৷ আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েরা এর ফলে বেশি সমস্যায় পড়েছে৷ অনলাইন পঠনপাঠনের পরিকাঠামো তাদের হাতে নেই৷ এই পড়ুয়াদের অভিভাবকরা অধিকাংশই লকডাউনে রোজগার হারিয়েছেন৷ এই পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নের হাসি, রেজারেকশন, হিউম্যানস অফ পাটুলির মতো সংগঠন৷

রোকেয়া শিক্ষা কেন্দ্র

ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার ঘোষিত প্রকল্পে দ্বাদশ শ্রেণির ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য ট্যাবলেট দেওয়া শুরু করেছে৷ এর থেকে নিচু ক্লাসে যারা পড়াশোনা করে, তাদের অবস্থা এখনো তথৈবচ৷ এদের সঙ্কটের গভীরতা লুকিয়ে আছে এই পরিবারগুলির আর্থিক অবস্থায়৷ অভিভাবকদের সেই সামর্থ্যই নেই৷ বেশিরভাগ পড়ুয়ার বাবা-মা হয় রাজমিস্ত্রি বা গাড়িচালক, নয় ঠিকে শ্রমিক বা গৃহসেবিকার কাজ করেন৷ এমন অস্থায়ী কাজের সঙ্গে যুক্ত যারা, তাদের দিনের লড়াই শুরু হয় সংসার চালানোর কথা ভেবে৷ পড়াশুনা তাই দূর অস্ত৷ অথচ লকডাউনের আগে এরা নিয়মিত পড়াশুনা করত, স্কুলে যেত, স্কুলের হোমওয়ার্ক করত৷ বেশিরভাগ পড়ুয়ারাই ফার্স্ট জেনারেশন পড়ুয়া৷ এদেরই পড়াশোনার ভার এক মাস আগে নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে হিউম্যানস অফ পাটুলির রোকেয়া শিক্ষাকেন্দ্রের ২০ জন শিক্ষক৷ দুটি কক্ষে তাঁরা পড়ান জনা পঞ্চাশ পড়ুয়াকে৷ ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে পড়ুয়াদের বসার জন্য বেঞ্চ বা টেবিল নেই, মাটিতে শতরঞ্জি পেতে পড়ানোর ব্যবস্থা৷ সঙ্গে রয়েছে একটা ছোট্ট পাঠাগার৷ অষ্টম শ্রেণির নীচে পড়ুয়াদের খরচ ৫০ টাকা৷ তার উপরে ১০০ টাকা৷

আমাদের এই অঞ্চলে স্বল্প আয়সম্পন্ন ৩ হাজার পরিবার আছে: কস্তুরী বসু

বাংলার নারীশিক্ষা জগতের পথিকৃৎ রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনের নামে গড়ে ওঠা রোকেয়া শিক্ষা কেন্দ্র আদতে গড়িয়া অঞ্চলের পাটুলির একতলার একটি অ্যাপার্টমেন্টে ৫০ জন পড়ুয়ার শিক্ষার পুনর্বাসন কেন্দ্র৷ করোনা যাদের পড়াশোনা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল৷ কমিটির সদস্য, তথ্যচিত্র নির্মাতা কস্তুরী বসু বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলে স্বল্প আয়সম্পন্ন ৩ হাজার পরিবার আছে৷ অসংগঠিত ক্ষেত্রে এরা কাজ করে থাকেন৷ এদের বাচ্চারা এক বছরের উপরে স্কুলে যায়নি৷ অথচ পড়াশোনাটা একটা নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া৷ এই বাচ্চাদের বাড়িতে পড়া দেখিয়ে দেবারও কেউ নেই৷ ফলে লকডাউনে এরা অনেকটা পিছিয়ে গেল৷ ওদের জন্যই কমিউনিটি থেকে আমাদের এই উদ্যোগ৷’’ এই কেন্দ্রে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা এসে স্বেচ্ছায় পড়িয়ে যান৷ এক বছরের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি ভবিষ্যৎটাও আরও মজবুত করে তোলার জন্য ইংরাজি ব্যাকরণ থেকে ছবি আঁকা সবটাই পাঠক্রমে রাখা হয়েছে৷        

আবার লকডাউনে মালদার কিছু ছাত্র নিজেদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে লকডাউনে বিপর্যস্তদের সাহায্যে নেমে পড়েছিল৷ ক্ষমতা সীমিত হলেও মনে ছিল তরুণ স্বপ্ন, ‘স্বপ্নের হাসি’ তারই ফল৷ 

লকডাউনের কষ্ট আমাদের আরও বেশি করে মনে করিয়ে দিয়েছে কর্তব্য: নাজমা রায়

রেজারেকশন

লকডাউনে শেফালি ভুঁইয়া পরিচারিকার কাজটি হারিয়েছেন৷ অথচ তাঁর মেয়ে প্রিয়াংকার পাঠ্যবইয়ের খুব দরকার৷ তাই বালিয়া নফরচন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এই ছাত্রীটির মতো অন্যদেরও এই সমস্যা দূর করতে শিক্ষকেরাই উদ্যোগ নেন৷ তাঁরাই দ্বারস্থ হন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেজারেকশন-এর৷ গড়িয়ার পাঁচপোতায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ১১টি স্কুলের এমনই ২৯জন পড়ুয়ার হাতে চারটি পাঠ্যবিষয়ের বই তুলে দিল রেজারেকশন৷ লকডাউনে এই সংস্থা কাজ হারানো মানুষের পাশে চাল, ডাল, চিকিৎসার খরচ নিয়েও দাঁড়িয়েছিল৷ সংস্থার তরফে নাজমা রায় বলেন, ‘‘লকডাউনের কষ্ট আমাদের আরও বেশি করে মনে করিয়ে দিয়েছে কর্তব্য৷ মানুষ হিসেবে মানুষের কাজে লাগাটা লকডাউনই শিখিয়েছে৷’’