1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা আসায় ‘পেঁপে কিনে খেতে হয়’

আরাফাতুল ইসলাম কক্সবাজার থেকে ফিরে
১০ ডিসেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাড়তি বোঝা মনে করছেন টেকনাফ সীমান্ত পাড়ের বাসিন্দারা৷ তাদের মতে, কয়েকলাখ শরণার্থীকে দীর্ঘমেয়াদে আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়৷ কেননা রোহিঙ্গাদের জন্য স্থানীয়রা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/2p6md
খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় খুশি বিক্রেতারাছবি: DW/A. Islam

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নাফ নদী৷ মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের মাঝে এই নদীর অবস্থান৷ ওপারে মংগদু৷ কিছুদিন আগেও সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে৷ সাবরাং সীমান্তে (গুগল ম্যাপস অবশ্য বলছে জায়গাটার নাম নয়া পাড়া) থাকে একটি ওয়াচ টাওয়ার দিয়ে মিয়ানমার সীমান্তের বেশ খানিকটা অংশ পরিষ্কার দেখা যায়৷ বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীদের হালকা বারণ সত্ত্বেও সেই টাওয়ারে ওঠার লোভ সামলানো গেলো না৷

না, ওপারে এখন আর আগুন জ্বলছে না৷ কিংবা মানুষের ভিড়ও দেখা যায় না৷ বরং বেশ শান্ত এক পরিস্থিতি৷ অথচ কিছুদিন আগেও সাবরাংয়ের এই সীমান্তে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভিড় ছিল৷ নৌকার পাশাপাশি তেলের কন্টেইনার দিয়ে তৈরি ভেলায় ভেসে তারা নাফ পাড়ি দিয়ে এখানে প্রবেশ করতো৷ শরণার্থীদের ব্যবহার করা অনেক নৌকা, ভেলা এখনো সেখানে পরে আছে৷ আছে রোহিঙ্গাদের ফেলে দেয়া কাপড়, জুতোর পাটি৷

Myanmar Bangladesch - Grenze | Situation der Rohingya - Flüchtlinge
এসব ভেলায় ভেসে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীছবি: DW/A. Islam
Myanmar Bangladesch - Grenze | Situation der Rohingya - Flüchtlinge
নদীতে এখন মাছ ধরা নিষেধ, তাই এসব নৌকা কোন কাজে আসছে না ছবি: DW/A. Islam

বাংলাদেশ অংশে সীমান্ত রক্ষীদের অবস্থা বেশ নাজুক৷ কার্যত পুরো সীমান্তই অরক্ষিত সেখানে৷ এক কিলোমিটারের মধ্যে দু'টি চেকপোস্ট রয়েছে বটে, তবে তাতে সিপাহীর সংখ্যা সাকুল্যে চারজন৷ এমন অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে যে কোনো সময়ই যে কারো প্রবেশ করা অসম্ভব নয়৷ তাছাড়া স্থানীয়রাও সেখানে স্বাধীনভাবে বিচরণে সক্ষম৷

সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, নভেম্বরের মাঝামাঝি অবধি এই এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে৷ এখন আর কেউ আসছে না৷ তবে শাহপরীর দ্বীপ, যেটি সাবরাং থেকে মাত্র আধাঘণ্টা হাঁটার দূরত্বে অবস্থিত, সেখান থেকে রাতের বেলা রোহিঙ্গারা প্রবেশ করছে, সংখ্যাটা অবশ্য এখন বেশ কম৷

Myanmar Bangladesch - Grenze | Situation der Rohingya - Flüchtlinge
নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের মংগদু এলাকায় কোন ভিড় দেখা যাচ্ছে না ছবি: DW/A. Islam
Myanmar Bangladesch - Grenze | Situation der Rohingya - Flüchtlinge
বাংলাদেশ সীমান্তের একটি নিরাপত্তা চেকপোস্টে মাত্র দু’জন সিপাহী অবস্থান করছিলেনছবি: DW/A. Islam

সাবরাং সীমান্তে চৌকির কাছে নৌকা তৈরি করছিলেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা৷ তাদের কাছে রোহিঙ্গাদের কথা জানতে চাইলে এড়িয়ে গেলেন৷ বোঝা গেলো, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে বারণ আছে তাদের৷ তবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন কথা বললেন সাবলীলভাবে, তুলে ধরলেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আসায় স্থানীয়দের সমস্যার নানা দিক৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে টেকনাফ এবং উখিয়া উপজেলার বারোটি ক্যাম্পে সবমিলিয়ে আমাদের হিসেবে ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গা অবস্থান করছে৷ এর বাইরে স্থানীয় বাসিন্দার সংখ্যা ছয় লাখ৷ অর্থাৎ এখানে প্রতি তিনজনের দু'জনই রোহিঙ্গা৷''

রোহিঙ্গাদের এই ব্যাপক উপস্থিতির কারণে খাদ্যদ্রব্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে বলে জানান নুর হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই এলাকার মানুষরা কোনো দিন পেঁপে কিনে খাই নাই৷ এখন এক কেজি পেঁপে ৫০-৬০ টাকায় কিনে খেতে হচ্ছে৷ আলুর কেজি একশ' দশ টাকা৷''

Myanmar Bangladesch - Grenze | Situation der Rohingya - Flüchtlinge
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করছেন সাবরাং উপজেলার চেয়ারম্যান নুর হোসেনছবি: DW/A. Islam

সীমান্ত এলাকা টেকনাফে অবৈধ মাদক ব্যবসার কারণে আগে থেকেই নাফ নদী এবং সমুদ্রে মাছ ধরার ক্ষেত্রে কিছুটা বিধিনিষেধ ছিল৷ এখন রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে মাছ ধরার উপর পুরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ায় স্থানীয়রা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি৷ তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েকমাস ধরে নাফ নদীতে আমাদের জেলেরা মাছ ধরতে পারছে না৷ এটা আমাদের এক বড় সমস্যা৷ তাছাড়া আগে স্থানীয় দিনমজুররা দিনে গড়ে চার-পাঁচশ' টাকা করে রোজগার করতে পারতো৷ এখন রোহিঙ্গারা সেই কাজ করছে দু-তিনশ' টাকায়৷ ফলে সেখানেও আমাদের লোকশান হচ্ছে৷''

রোহিঙ্গারা পরিবেশের ক্ষতি করছে বলেও মত দিলেন নুর হোসেন৷ আর তাঁর কথায় সায় দিয়েছেন তাঁর সঙ্গে থাকা স্থানীয় কয়েকজন৷ তাঁদের কথায়, রোহিঙ্গাদের মধ্যে উগ্র মানসিকতা রয়েছে৷ তারা অল্পতেই ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ করে৷ রোহিঙ্গাদের সংস্কৃতিও ইতিবাচক নয় বলে মত সাবরাংয়ের স্থানীয় বাসিন্দাদের৷

অবশ্য, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর যে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, অনেককে যে হত্যা করা হয়েছে, সেসম্পর্কেও সচেতন এসব মানুষ৷ সীমান্তের এপাড়ে দাঁড়িয়ে ওপারে একের পর এক গ্রাম জ্বলে যেতে দেখেছেন তাঁরা৷ তাই কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও রাতারাতি রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে রাজি নন সীমান্তের এই মানুষরা৷ বরং আন্তর্জাতিক স্তর থেকে একটি সমাধান চান তাঁরা৷ যাতে রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশে ফিরে গিয়ে শান্তিতে থাকতে পারে৷ প্রশ্ন হচ্ছে, সেটা কী আদৌ কোনোদিন হবে?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য