অনলাইনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় রেড ক্রসের সংগ্রহশালায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ২০ লাখ যুদ্ধবন্দিদের সেই সব খোঁজখবর ফাইল ও ইন্ডেক্স কার্ড হিসেবে জমা রয়েছে উঁচু উঁচু কাচের আলমারিতে৷ সে পাহাড় প্রমাণ তথ্য নাকি ৬০ লাখ কার্ড ছাড়িয়ে যাবে৷
যুদ্ধের সময়ে এই সব কার্ডে তথ্য নথিবদ্ধ করতেন প্রধানত মহিলারা, কেননা সুইজারল্যান্ডের ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সি সব কর্মঠ পুরুষদের সীমান্তরক্ষার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল৷ রেড ক্রসের মহিলা কর্মীরা যুদ্ধবন্দিদের খোঁজখবরের যে বর্ণানুক্রমিক সূচি সৃষ্টি করেন, তা-তে সৈনিকের নাম, রেজিমেন্ট, বন্দি হবার তারিখ ও স্থান এবং বন্দিকে কোথায় অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে, এই সব তথ্য রাখা হত৷
এটা প্রাক-কম্পিউটার যুগের কথা৷ পৃথিবীর ইতিহাসে এর আগে কখনো এই পরিমাণ আন্তর্জাতিক তথ্য একটি স্থানে সংগ্রহ করা হয়নি৷ ইন্ডেক্স কার্ডগুলোর হাল ফেরাতে সময় লেগেছে তিন বছর, সেগুলিকে ডিজিটাল তথ্যে পরিণত করতে আরো তিন বছর৷ এ কাজে যে ৪৩ লাখ ডলার খরচ পড়েছে, তা দিয়েছেন সুইস সরকার৷ তাই আজ আইসিআরসি ডট অর্গ স্ল্যাশ ডাব্লিউডাব্লিউওয়ান, এই ঠিকানায় ক্লিক করলেই রেডক্রসের ইন্ডেক্সে পৌঁছানো যাবে – যে ইন্ডেক্সকে ২০০৭ সালে ইউনেস্কো-র ‘‘মেমরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড'' বা ‘বিশ্বের স্মৃতি' তালিকায় তোলা হয়েছে৷
১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সাল অবধি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধের সব পক্ষ রেড ক্রসের কাছে যুদ্ধবন্দিদের তালিকা পাঠাত৷ অপরদিকে যুদ্ধবন্দি অথবা নিখোঁজ সৈনিকদের পরিবারবর্গ স্থানীয় রেড ক্রসের কাছে যে সব অনুসন্ধানের আবেদন পাঠাতেন, সেগুলো মিলিয়ে দেখা হত যুদ্ধবন্দিদের কেন্দ্রীয় তালিকার সঙ্গে৷ আইসিআরসি তখন খবর দিত: ‘আপনার পিতা বেঁচে আছেন৷ তাঁকে অমুক ক্যাম্পে রাখা হয়েছে৷' অর্থাৎ রেড ক্রস ছিল যুদ্ধবন্দি ও তাদের পরিবারবর্গের মধ্যে একটা অদৃশ্য যোগসূত্র৷ অপরদিকে আইসিআরসি যুদ্ধবন্দিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও শিবিরের পরিস্থিতির উপরেও নজর রাখত৷
ইতিহাসও উঁকিঝুঁকি মারছে এই সব কার্ড থেকে৷ ধরা যাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সের ‘হিরো' এবং যুদ্ধপরবর্তী প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গল-এর কথা৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে দ্য গল ছিলেন সৈনিক – ক্যাপ্টেন দ্য গল, যিনি ১৯১৬ সালে আহত হন এবং শত্রুর হাতে ধরা পড়েন৷ যুদ্ধের বাকি বছরগুলো তাঁর কাটে এক পর্যায় বন্দিশিবিরে, যদিও তিনি বারংবার পালানোর চেষ্টা করেছিলেন৷ রেড ক্রসের সংগ্রহে দ্য গল-এর যে কার্ড রয়েছে, তার ওপর কলম দিয়ে লেখা রয়েছে: ‘‘নিয়মিত বাড়িতে চিঠি লেখেন৷''
এসি/ডিজি (এএফপি)