রুশ উলকি শিল্পী ক্ষত ঢাকতে প্রজাপতি আঁকেন
রাশিয়ায় পারিবারিক সহিংসতা একটি ব্যাপক সমস্যা; এমনকি সম্প্রতি কয়েক ধরনের নিপীড়নকে অপরাধ নয় বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ উলকি শিল্পী ইয়েভগেনিয়া জাখার নিপীড়িত মহিলাদের তাদের ক্ষত ঢাকতে সাহায্য করেন৷
ক্ষত ঢাকতে উলকি
রুশ সংসদের নিম্নকক্ষ ‘দুমা’-য় একটি বিতর্কিত আইন পাশ হয়েছে, লোকমুখে যার নাম ‘চড় মারার আইন’৷ এই আইন অনুযায়ী কোনো পুরুষ যদি তার স্ত্রীকে মারধোর করে, কিন্তু তার ফলে শুধু কালশিটে পড়ে অথবা ছড়ে যায়, তাহলে সেটা অপরাধ বলে গণ্য করা হবে না৷ উলকি শিল্পী ইয়েভগেনিয়া জাখার নিপীড়িত মহিলাদের ঠিক এ ধরনের ‘লজ্জা’ ঢাকতে সাহায্য করেন৷
মক্কেলদের কাহিনি শোনাটাও ইয়েভগেনিয়ার কাজ
গতবছর ইয়েভগেনিয়া তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পেজে একটি ঘোষণা পোস্ট করেন: তিনি নিপীড়িত মহিলাদের বিনা খরচায় উলকি করে দেবেন৷ ইয়েভগেনিয়া ধারণাটি পান ব্রাজিলের এক উলকি শিল্পীর কাছ থেকে৷ শীঘ্রই ইয়েভগেনিয়ার কাছে অসংখ্য অনুরোধ আসতে শুরু করে৷ কিন্তু এই সব নিপীড়িতাদের কাহিনি শোনা ইয়েভগেনিয়ার পক্ষে এতই বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে যে, তিনি এখন সপ্তাহে একজনের বেশি এ ধরনের মক্কেল নেন না৷
দ্বিতীয়বার যন্ত্রণা
পেটে উলকি করার সময় গুলদার যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠেন৷ ইয়েভগেনিয়া বলেন, ‘‘আমি এতো মক্কেল আসবে বলে মনে করিনি৷ দিনে দুই থেকে চারজন মহিলাকে উলকি করতে হয়েছে৷ সমস্যাটা যে কত ব্যাপক, তা দেখলে আর এই সব মহিলাদের কাহিনি শুনলে রীতিমতো ভয় করে৷’’ ইয়েভগেনিয়ার বাস মস্কো থেকে ১,২০০ কিলোমিটার দূরে, উফা শহরে৷
প্রতি বছর হাজার হাজার মহিলার নিপীড়নে মৃত্যু
রাশিয়ায় পারিবারিক সহিংসতা একটি পুরনো সমস্যা৷ ৪০ শতাংশ সহিংসতার ঘটনা পরিবারের অভ্যন্তরে ঘটে, বলে পুলিশের ধারণা৷ শুধুমাত্র ২০১৩ সালে প্রায় ৯,১০০ রুশি মহিলা পারিবারিক সহিংসতার কারণে প্রাণ হারান, আহত হন আরো ১১,৩০০ মহিলা – বলে জানিয়েছেন মানবাধিকার আইনজীবী আনা রিভিনা৷ তিনি ‘নাসিলিয়ু.নেট’ (‘নো টু ভায়োলেন্স’) প্রকল্পটির প্রধান৷
নিপীড়নের চিহ্ন
ইয়েভগেনিয়া তাঁর মক্কেল লিলিয়া-র চোটের দাগগুলো দেখালেন৷ মহিলারা নাকি তাদের নিপীড়নের চিহ্ন ঢাকার জন্য প্রজাপতি বা ফুলের উলকি পছন্দ করেন৷ তারা তাদের নিপীড়নের কাহিনি শোনান উলকি শিল্পীকে৷ নিপীড়নের চিহ্নকে তাদের নিজের পছন্দের কিছু একটায় পরিণত করতে পেরে তাদের আত্মমর্যাদাবোধ বাড়ে, নিপীড়নের অবমাননা ভুলতে সাহায্য করে৷
পুলিশের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাবার উপায় নেই
ইয়েভগেনিয়া এক মক্কেলকে জড়িয়ে ধরলেন....এ পর্যন্ত তিনি এক হাজারের বেশি মহিলাকে বিনা খরচায় উলকি করেছেন৷ তাদের মধ্যে একজনও পুলিশের কাছ থেকে সাহায্য পাবার কথা বলেনি৷ ‘‘মেয়েরা শেষবারের মতো তাদের ক্ষত সম্পর্কে কথা বলতে চায় – কেননা এর পরে তারা শুধু তাদের সুন্দর উলকিটার কথা বলবে৷’’
প্রতিবেদন: নাডিনে ব্যার্গহাউসেন/এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ