রিও ডি জেনিরোর বস্তিতে মাদক চক্রের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান
২৬ নভেম্বর ২০১০গতকাল সন্ধ্যায় রিও ডি জেনেরোর একটি বস্তিতে পুলিশ মাদক পাচারকারী এবং সন্ত্রাসীদের আটক করতে অতর্কিতে হামলা চালায়৷ সাঁজোয়া গাড়ির বহর নিয়ে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই অভিযান চালানো হয়৷
হামলা শুরুর পরপরই পুরো এলাকা গোলাগুলির শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে৷ নিরাপদ আশ্রয়ে পালাতে শুরু করে ভিলা ক্রুজেইরোর মানুষরা৷ ছয়জন এমওয়ানওয়ান থ্রি অফিসার পয়েন্ট ফিফটি ক্যালিবারের মেশিনগান নিয়ে এগিয়ে যান৷ রাতে পুলিশের মুখপাত্র রদ্রিগো অলিভেইরা ঘোষণা দেন,‘ভিলা ক্রুজেইরো এখন আমাদের দখলে৷' তবে নিরাপত্তা বাহিনী সতর্কাবস্থায় রয়েছে৷
এই অভিযানের জবাব দিতে মাদক সন্ত্রাসীরাও পাল্টা আক্রমণ চালায়৷ তারা বেশ কয়েকটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়, পুলিশচৌকিগুলোর ওপর গুলি চালায় তারা৷ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় রিও ডি জেনিরোর আকাশ৷
বেশ কিছু টেলিভিশনের হেলিকপ্টার খবর সংগ্রহ করতে আকাশে উড়তে থাকে৷ তারা গোলাগুলির বেশ কিছু দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে৷ দেখানো হয়, বস্তির পেছনের পাহাড় থেকে অটোমেটিক রাইফেলের গুলি ছোঁড়া হচ্ছে আর এর হাত থেকে বাঁচতে অসংখ্য মানুষ গাড়ি বা মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাচ্ছে৷
নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান হোসে বেল্টরাম জানান, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি কিন্তু সবকিছু এখনো শেষ হয়নি৷ আমরা জিতেছি তা জোর দিয়ে এখনো বলা যাচ্ছে না৷ তিনি আরো জানান, বেশ কিছু লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মাদক এবং অস্ত্র আটক করা হয়েছে তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হল আটককৃতদের এই এলাকা থেকে নিরাপদে বের করে নিয়ে যাওয়া৷ বলা প্রয়োজন, ভিলা ক্রুজেইরো হচ্ছে রিও ডি জেনিরোর সবচেয়ে বড় বস্তি৷
ব্রাজিলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরো আটশো জন পুলিশ এবং নিরাপত্তা কর্মী সহ দশটি অস্ত্রে সজ্জিত বহর নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন৷ এর সঙ্গে দেওয়া হয়েছে এয়ার ফোর্সের দুটি হেলিকপ্টার৷
এলাকার সাধারণ মানুষ পুরো ঘটনায় একেবারে হতবাক হয়ে যায়৷ ৪৪ বছর বয়স্ক একজন স্কুল প্রধান জানান, আমার জীবনে এ ধরণের ঘটনা আমি দেখিনি৷ তবে এর প্রয়োজন ছিল৷ অন্য কোন ভাবে মাদক পাচারকারীদের প্রতিরোধ করা সম্ভব হত না৷ ২৭ বছর বয়েসি একজন বার টেন্ডার জানান, আরো অনেকে মারা যাবে, কিন্তু তারপরেও আমি বলবো এখানে এতদিন ধরে যা চলছে তা পরিবর্তনের প্রয়োজন৷
গোটা এলাকা মাদক পাচারকারী এবং সন্ত্রাসীদের দখলে চলে যাওয়ার এই পরিস্থিতির জন্য কর্তৃপক্ষকেই অনেকে দায়ী করছে৷ তারা আশংকা প্রকাশ করে জানান, ব্রাজিলে চার বছরেরও কম সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বকাল ফুটবল আর এর দু'বছর পর অলিম্পিক৷ আর এসময়ে এধরণের ঘটনা ঘটল৷
রিও ডি জেনিরোর জনপ্রিয় ফুটবল তারকা রোনাল্ডো তার টুইটার ব্লগে লিখেছেন, যে সব পরিবার তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছে, তাদের প্রতি রইল আমার গভীর সমবেদনা৷
পুলিশের এই অভিযানে প্রায় ১৮০ জনকে আটক করা হয়েছে৷ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রায় ৬০ টি গাড়ি এবং বাস৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক