এ যুগের বিদ্যাসাগর
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩পড়ার পর মনে হলো শিশুটির সঙ্গে কথা বলা দরকার৷ তাই যোগাযোগ করলাম পোস্ট দাতাদের সঙ্গে৷ তাদের মাধ্যমেই রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০ টায় কথা হয় রাজু নামের ঐ শিশু ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে৷
তাদের সঙ্গে কথা বলার আগে ফেসবুকেই আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেল৷ যেমন রাজু তার তিন ভাইবোন ও মা সহ থাকে ঢাকার উত্তরার সোনারগাঁ জনপথ রোডের পাশে একটি ঝুপড়ি ঘরে৷ গুগল ম্যাপের সহায়তা নিয়ে তাদের ঘরের আসল জায়গাটা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন পোস্ট দাতারা৷ আরও জানা গেল, রাজুরা আসলে ছিল সাত ভাইবোন৷ এর মধ্যে একজন মারা গেছে৷ বাকি বড় দুই ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকছে৷ তারা পরিবারের খোঁজখবর নেন না৷ রাজুর বাবা বছর চারেক আগে মারা গেছেন সম্ভবত ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে৷
সাক্ষাৎকারে রাজু জানালো সে পড়ে স্থানীয় একটি সরকারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে৷ সকাল আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত ক্লাস করার পর সে চলে যায় ওয়ার্কশপে কাজ করতে৷ সেখানে থাকে রাত আটটা পর্যন্ত৷ মাঝে দুপুর দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত মসজিদে যায় আরবি শিখতে৷ এরপর রাত আটটায় ঘরে ফিরে পড়াশোনা করে৷ কিন্তু ঘরে শুধু একটা আলোর ব্যবস্থা থাকায় মা সেটাতে কাজ করেন৷ তাই পড়ালেখা করতে তাকে চলে যেতে হয় ফুটপাতে, যেখানে রাস্তার লাইটের আলো আছে৷ রাজুর সঙ্গে পড়ে তার বোন বৃষ্টি ও ছোট ভাই ভান্ডারি৷ বৃষ্টি একই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে৷
কথা প্রসঙ্গে রাজু জানালো, রাস্তার পাশে পড়ার সময় ধুলাবালির কারণে তার সমস্যা হয়৷ যে ওয়ার্কশপে সে কাজ করে সেখান থেকে কোনো টাকা পয়সা দেয় না৷ শুধু ঈদে জামাকাপড়, জুতা দেয়৷ এ প্রসঙ্গে রাজুর মা জানালেন, ‘‘আমি অসুস্থ৷ না জানি কখন কি হয়৷ তখন ছেলেমেয়েদের কি হবে৷ আমার তো জমিজমা, ঘরবাড়ি নাই৷ তাই কাজ শিখুক৷ যদি কাজে লাগে?'' এরপর এই অশিক্ষিত মা বললেন, ‘‘কাজ না করলে সেই সময়টা দুষ্টু ছেলেপিলের সঙ্গে মিশে খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে৷''
রাজুর মা জানালেন তাঁর কানের নীচে টিউমারের মতো হয়েছে৷ তিনি হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাচ্ছেন৷ কিন্তু অর্থের অভাবে নিয়মিত খেতে পারছেন না৷ ইটভাঙার কাজ করে পাঁচজনের সংসার চালান রাজুর মা৷
রাজু তার মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী পড়ালেখা করে ভবিষ্যতে জজ হতে চান৷ আর বৃষ্টি ও ভান্ডারি ডাক্তার হয়ে মায়ের চিকিৎসা করতে চায়৷
কিন্তু তাদের এই স্বপ্নগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে? আশার কথা, যাঁরা ফেসবুকে ছবি দিয়ে বিষয়টি অনেকের নজরে এনেছেন তাঁরাই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ এ নিয়ে তাঁরা ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলেছেন৷ সেখানে অনেকে আশার কথাও শুনিয়েছেন৷
সাক্ষাৎকার: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন