1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাষ্ট্রবিরোধী মামলা ভয় ছড়ানোয় সফল

৭ মে ২০২০

রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারের অভিযোগে করা মামলায় মঙ্গলবার কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী মুশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার আটক করা হয় মিনহাজ মান্নানকে।

https://p.dw.com/p/3bssc
Indien, Dhaka: Journalisten halten Banner und Plakate, während sie vor dem Presseclub gegen das kürzlich verabschiedete Gesetz zur digitalen Sicherheit protestieren
ফাইল ফটোছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকম জানায়, বিএলআই সিকিউরিটিজের কর্ণধার মিনহাজ মান্নান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের একজন পরিচালক। মিনহাজের ভাই ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নানকে ২০১৬ সালে জঙ্গিরা হত্যা করেছিল।

এই মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে, তার মধ্যে জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, সুইডেনে থাকা সাংবাদিক তাসনিম খলিলও রয়েছেন। 

আসুন আমরা খবরটিকে বিশ্লেষণ করি৷ মানে, যা বলা হয়েছে, যা আমাদের জানানো হয়েছে তা ধরে এগোই৷ আমার একজন সহকর্মী আমাকে তাদের বিরুদ্ধে করা এজাহারের কপি দিয়েছেন৷ রেফারেন্স হিসেবে সেটাও পাশে রাখলাম৷

শুরুতে আমরা অভিযোগটি দেখি আর তা হলো রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার৷ এরকম একটি অভিযোগই বলে দেয়, সরকার কাজটিকে খারাপ মনে করে বলে এর বিরুদ্ধে তরতাজা একটি আইনও করেছে৷ তার মানে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার হোক সেটি তারা চায় না৷ তাই সরকার বা তার র‌্যাব তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে, ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে৷

কিন্তু যে কেউই চোখ মেলে বা সামান্য পর্যবেক্ষেণে দেখবেন যে, এদের গ্রেপ্তার করার ফলে যে পরিমাণ রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার পেয়েছে তার ভগ্নাংশও এতদিন ধরে অর্জিত হয় নাই৷ সেইটা গ্রেপ্তার কার্টুনিস্ট কিশোরের কার্টুন বা অভিযুক্তদের আরো যেসব কনটেন্ট সামাজিক মাধ্যমে এর মধ্যেই শেয়ার হয়েছে তার পরিমাণ দেখেই বলে দেওয়া যায়৷ আরো একটি বিষয় হলো, সরকার যতবার এই মান-মর্যাদা রক্ষা জাতীয় বিষয়ে ডিজিটাল আইনে মোকদ্দমা করে বা এরে তারে জেলে পাঠায়, ততবার দেশে-বিদেশে এই রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার বেশি শুনতে, দেখতে আর মানতে দেখা যায়৷ এমনকি তখন তা আর প্রচার থাকে না ,বরং তা-ই হয়ে দাঁড়ায় পরিচয়৷ ডিজিটাল আইনে এই গ্রেপ্তারকাণ্ডের পর  যে শব্দগুলো বেশি শুনছি তার মধ্য থেকে তিনটি এরকম- নিপীড়ক, নিপীড়ক এবং নিপীড়ক৷

আসুন এবার আমরা কারণ বিশ্লেষণ করি৷ এ কাজ করে যে, রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার থামে না, বরং বাড়ে, সেটা কি আমাদের বুদ্ধিমান এলিট ফোর্স র‌্যাব বা তাদের কর্তারা জানে না, বুঝতে পারে না? আমরা কেউ কেউ মজা নেই বা দুঃখ পাই এই বলে যে, আহারে উহারা কী বোকা!

জ্বি না ম্যাডাম/স্যার ওরা বোকা নন৷ ওরা জানেন, আমরা এরকম আচরণ নিয়ে অনেক সমালোচনা করবো, আমাদের কল্পিত দাঁত-নখ নিয়ে বাঘের ছবির উপর ঝাঁপিয়ে পড়বো প্রবল বীরত্বে৷ অতীতেও আমরা এরকমটাই করেছি৷ কিন্তু তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না৷ তারা বড়জোর বলবেন, কাজ করলে একটু-আধটু ওরকম শুনতে হয়, অত ধরলে চলে? 

Khaled Muhiuddin
খালেদ মুহিউদ্দীন, প্রধান, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগছবি: DW/P. Böll

তারপর ডিজিটাল অপরাধীরা জেলে থেকে যাবেন৷ রোমহর্হষক অনেক তথ্য় দেবেন সেইসব আউট ল'রা৷ তাদের দেওয়া তথ্যে দেশ জাতি রাষ্ট্র বেঁচে যাবে৷ পদক বা প্রমোশন পাবেন কঠিন এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎকারীরা৷ হয়ত কয়েক দিন. মাস বা বছর পর তারা একসময় বেরিয়ে আসবেন৷ তখন অন্য কোনো প্রবল ইস্যু না থাকলে টিভি ক্যামেরা থাকবে সামনে গোটাকয়৷ দর্শক জানবেন, তারা ক্লান্ত, কয়টা দিন পরিবারের সঙ্গে থাকতে চান৷ 

আর সবাই শিক্ষা পাবেন৷ কমে যাবে আরো কার্টুনের সম্ভাবনা৷ কেউ কেউ আগে থেকেই বুদ্ধিমান৷ যেমন শিশির ভট্টাচার্য৷ তিনি কার্টুন আঁকা ছেড়েছেন, অন্তত প্রথম আলোতে তার কার্টুন দেখি না অনেকদিন৷ এর জন্য প্রথম আলোর প্রচার সংখ্যা কমেছে এরকম তো শুনি নাই৷ শুধু ওই পত্রিকা কেন কোনো পত্রিকারই প্রচার সংখ্যা দেশে কমেছে এরকম শুনি নাই৷ সব পত্রিকারই প্রচার সংখ্যা বেড়েছে৷ বেড়েছে পত্রিকার সংখ্যাও৷ অন্তত তথ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নথি তো তাই বলে৷ কারণ, সেখানে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার থাকে না৷ সেগুলো আমাদের জন্য ক্ষতিকর না৷

সকলের শিক্ষা সম্পন্ন হোক, আর রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার না হোক, সব কিছু মেনে নেওয়ার শক্তি হোক৷

Khaled Muhiuddin
খালেদ মুহিউদ্দীন ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত।