1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রানা প্লাজা

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৪ জুন ২০১৫

রানা প্লাজা ধস সংক্রান্ত দু'টি মামলায় আদালতে চার্জশিট দেয়া হয় সোমবার৷ আসামি ৪২ জন৷ তবে সাভার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলেও অব্যাহতি দেয়া হয়৷এতে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া৷

https://p.dw.com/p/1FbkQ
Bangladesch Demonstration der Textilarbeiter in Dhaka
ছবি: Imago/Xinhua

দু'টি মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় ভবনের মালিক সোহেল রানাসহ আসামি করা হয়েছে ৪১ জনকে ও সাক্ষী করা হয়েছে মোট ৫৯৪ জনকে৷ এছাড়া ইমারত নির্মাণ আইনে করা মামলায় ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে৷ এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ১৩০ জনকে৷

হত্যা মামলার ৪১ জন আসামির মধ্যে পলাতক ২৫ জন৷ ইমারত নির্মাণ আইনে করা মামলার ১৮ জন আসামির মধ্যে পলাতক আছেন সাতজন৷ দুই মামলায় মোট আসামি ৫৯ জন৷ তবে একই আসামি দুই মামলায় থাকায় আসামির সংখ্যা ৪২ জন হিসেবে গণনা করা হয়েছে৷ মাহাবুবুল আলম নামে এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ীকে দণ্ডবিধির মামলায় আসামি করা না হলেও, ইমারত আইনের মামলায় আসামি করা হয়৷

মামলার তদন্তে ১৩ জন সরকারি কমর্কর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও, ছ'জন সরকারি কর্মর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিটের অনুমতি দেয়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়৷ তাঁরা হলেন, সাভারের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির উদ্দিন সরদার, শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক ইউসুফ আলী ও সহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিভাগীয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান দপ্তরের যুগ্ম শ্রম পরিচালক এম এ জামশেদুর রহমান, শ্রম মন্ত্রণালয়ের টঙ্গীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (আইআরআই) প্রকল্পের পরিচালক বেলায়েত হোসেন এবং সাভারে রাজউকের ইমারত পরিদর্শক আওলাদ হোসেন৷

সিআইডি শেষ পর্যন্ত অনুমতি না পেলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে বাকি ১২ জন সরকারি কর্মকর্তাকে চার্জশিটে অন্তর্ভূক্ত করেছে৷ তাহলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কেন বাদ দেয়া হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি-র সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারা অনুসারে সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তরের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ মোট ১৩ জন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়৷ তাঁদের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ছ'জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটের অনুমতি দেয়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়৷ তারপরও আমরা শুধু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে বাকি পাঁচজনকে চার্জশিটে অন্তর্ভূক্ত করেছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘তবে এই পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তাকে চার্জশিটে যুক্ত করা হলেও সরকারের পূর্ব অনুমতি না থাকায় আদালত তা আমলে নিতে পারবেন বলে মনে হয় না৷ ঐ পাঁচ আসামি মামলার শুরুতেই অব্যাহতি পেতে পারেন৷''

তবে চার্জশিটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নাম বাদ দেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রানা প্লাজার ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা৷ নিহত খালেদার স্বামী সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একে তো এখনো ক্ষতিপূরণের টাকা পাইনি৷ তার ওপর মামলা নিয়ে টালবানা চলছে৷ আমাদের দেখার কেউ নেই৷''

নিহত মনোয়ারা বানুর মা আয়েশা বেগম বলেন, ‘‘যারা যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী সবার বিচার চাই৷ কাউকে বাদ দিলে তো আর ন্যায়বিচার হয় না৷''

সাভারের সাংবাদিক নাজমুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রানা প্লাজা ধসের আগের দিনই ভবনে ফাটল দেখা দেয়৷ ঐ দিন বিকেলে তখনকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির উদ্দিন সরদার ভবন পরিদর্শনে গিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি৷ উল্টো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে আমাদের জানান৷ তিনি যদি সময়মত ব্যবস্থা নিতেন, তাহলে এত মানুষের প্রাণহানি হতো না৷ মামলার চার্জশিট থেকে তাঁর নাম বাদ যাওয়া তাই কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷''

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম রনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে এই চার্জশিট গ্রহণযোগ্য নয়৷ আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই যাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চার্জশিটে অন্তর্ভূক্ত করার অনুমতি দেয়া হয়৷ এখনো সময় আছে৷ আদালতে আমরা এই চার্জশিটে নারাজি দেবো৷''

২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে মোট নিহতের সংখ্যা ১,১৩৬ জন৷ ধ্বংসস্তূপ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়৷

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ২১ জন আসামির মধ্যে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক ওরফে খালেক কুলুসহ আটজন জামিনে রয়েছেন৷ জামিনে থাকা অপর সাতজন আসামি হলো সাভার পৌরসভার বরখাস্ত হওয়া মেয়র ও সাভার পৌর বিএনপির সভাপতি রেফাতউল্লাহ, সোহেল রানাকে যশোরে আত্মগোপনে থাকতে সহায়তাকারী অনিল দাস, শাহ আলম ও আবুল হাসান, রানা প্লাজার অনুমোদন ও নির্মাণ প্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্বে থাকা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এমতেমাম হোসেন, রানা প্লাজার নকশা অনুমোদনের জন্য সুপারিশকারী সাভার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কমিশনার ও পৌরসভা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খান এবং সাভার পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান৷

তখন ভবন ধসে প্রানহানির ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন সাভার থানার এসআই ওয়ালী আশরাফ৷ পরে অবশ্য মামলাটিতে অপরাধজনক প্রাণনাশেরও অভিযোগ আনা হয়৷

এছাড়া ইমারত বিধি মেনে রানা প্লাজা নির্মাণ করা হয়নি – এমন অভিযোগে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করেন রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল আহমেদ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান