1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযোদ্ধা সাবিত্রী বিশ্বাস

১৯ এপ্রিল ২০১২

রাজশাহীর গর্ব বীর সাহসী নারী মুক্তিযোদ্ধা সাবিত্রী বিশ্বাস৷ বাবার উৎসাহে মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ শুরু করেন৷ আগরতলায় অবস্থিত হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে৷

https://p.dw.com/p/14gom
ছবি: Rabiul Anowar Tomy,

রাজশাহীতে ১৯৫৪ সালের ২১শে অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন সাবিত্রী বিশ্বাস৷ বাবা মহেন্দ্রনাথ পোদ্দার এবং মা নিহারবালা পোদ্দার৷ ১৯৭১ সালে ১৭ বছর বয়সের তরুণী সাবিত্রী৷ মানসমন্দির বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন৷ গ্রামের মেয়ে হিসেবে খুব সাদাসিধে ও সহজ-সরল মেয়ে ছিলেন তিনি৷ তবে ২রা এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজশাহীর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আইনজীবী বিরেন্দ্রনাথ সরকার ও সমাজসেবী সুরেশ পান্ডেকে হত্যা করলে এ ঘটনা তাঁর মনেও দাগ কাটে৷ তার সাথে ছিল মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করার ব্যাপারে বাবার উৎসাহ৷

পরের দিন ৩রা এপ্রিল তিনি মা, বাবা ও অন্যদের সাথে পরনের এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন৷ পদ্মা নদীর চর দিয়ে সীমান্তের দিকে দলের সাথে এগিয়ে যান সাবিত্রী৷ বিদায় জানান প্রিয় জন্মভূমিকে৷ দেশ ছেড়ে ভারত পাড়ি দেওয়ার ঘটনা স্মরণ করে সাবিত্রী বিশ্বাস বলেন, ‘‘রাজশাহীর আলুপট্টির ধার দিয়ে হাটতে হাটতে পদ্মা নদী পাই৷ সেখানে একটি নৌকায় করে আমরা নদী পার হই৷ আবারো পায়ে হেটে কাতলামারী সীমান্তে পৌঁছাই৷ কিন্তু ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী প্রথমে ভারতে ঢুকতে বাধা দেয়৷ দীর্ঘ অপেক্ষার পর অনুমতি পেয়ে ভারতের পশ্চিমবাংলার মুর্শিদাবাদে যাই পরিচিতজনদের কাছে৷''

Bangladesch Monument Jatiyo Smriti Soudho
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জিইয়ে রাখার নানা প্রচেষ্টা চলছেছবি: National Monument of Savar

বাবা মহেন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণায় কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন নারীদের প্রশিক্ষণ শিবিরে নিজের নাম নিবন্ধিত করেন সাবিত্রী৷ প্রাথমিক পরীক্ষার পর তাঁকে কলকাতায় গোবরা নারী মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য পাঠানো হয়৷ সেখানে আত্মরক্ষা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার উপর প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে আগরতলা বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ এসময় তাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সাবিত্রী বলেন, ‘‘আমার বাবা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রশিক্ষণ শিবিরের খোঁজ পেয়ে আমাকে নিয়ে সেখানে গেলেন৷ বাবা বললেন, দেশের জন্য কিছু করো মা, না হলে তো হবে না৷ তুমি কি শুধু শুধু বসে থাকবে একা? তখন আমি সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে চিকিৎসা সেবা শুরু করি৷ আহত মুক্তিযোদ্ধাদের ওষুধ খাওয়ানো, ইঞ্জেকশন দেওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ সবকিছুই করেছি৷ একদিন বুলেটবিদ্ধ একজন মুক্তিযোদ্ধার দুই হাত থেকে গুলি বের করতে গিয়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলাম৷ পুরো অজ্ঞান না হলেও খুব সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম৷ খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার৷''

১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হবার পর কুমিল্লা দিয়ে প্রথমে ঢাকায় ফিরে আসেন সাবিত্রী এবং তাঁর সঙ্গীরা৷ ঢাকায় এক মাস থেকে নওগাঁর নারী মুক্তিযোদ্ধা আরতী এবং সাবিত্রী রাজশাহী যান৷ ১৯৭৩ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগ পান নারী মুক্তিযোদ্ধা সাবিত্রী বিশ্বাস৷ সেই থেকে মানবসেবায় রত সাবিত্রী ২০১১ সালে অবসর নেন৷

১৯৯৬ সালে নারী প্রগতি সংঘ ঢাকায় গোবরা নারী মুক্তিযোদ্ধা শিবিরের নারী মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলা বেতারের নারী শিল্পীদের সংবর্ধনা দিয়েছিল৷ সেই অনুষ্ঠানে অন্যদের সাথে নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংবর্ধনা পান সাবিত্রী বিশ্বাস৷ এছাড়া রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনও তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংবর্ধনা দিয়েছে৷

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪১ বছরে দেশের অর্জন এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর প্রত্যাশা সম্পর্কে সাবিত্রী বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা আর কীভাবে ভালো থাকলাম, আমাদের আর কতটুকুই বা মূল্যায়ন হলো? তবে দেশের কলঙ্ক রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে আমরা শান্তি পাবো৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান