1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌রাজনৈতিক তৎপরতার বছর

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২ জানুয়ারি ২০১৮

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল ২০১৭৷ তাই নতুন বছর কেমন হবে, তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে জল্পনা-কল্পনা৷ বলা বাহুল্য ভারতের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বছর হতে চলেছে ২০১৮৷ কারণ ২০১৯ সালের সংসদীয় নির্বাচন৷

https://p.dw.com/p/2q7sR
ছবি: Reuters/A.Dave

২০১৭ সালের শেষ মাসে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ২০১৮ সালের রাজনৈতিক তৎপরতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছে৷ এই নির্বাচনে কয়েকটা বিষয় নিশ্চিতভাবে প্রমাণ হয়েছে৷ এক, মোদী-ম্যাজিক আর ততটা জোরদার নেই৷ দুই, মোদীর গুজরাট-মডেল আর কাজ করছে না৷ ভোটাররা এবার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতি, দেনা-পাওনার হিসেব মিলিয়ে নিতে শুরু করেছেন৷ তিন, রাহুল গান্ধী অবশেষে তাঁর রাজনৈতিক দক্ষতা খুঁজে পেয়েছেন, যা হলো অবিরত জনসংযোগ৷ চার, রাহুলের নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে৷ এবং পঞ্চম আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গুজরাটে জিগনেশ মেওয়ানি, হার্দিক প্যাটেলের মতো নবীন নেতার উত্থান, কোনো রাজনৈতিক মদত ছাড়াই৷ এই প্রেক্ষাপটে নরেন্দ্র মোদীর নিজের রাজ্যে বিজেপি শেষ পর্যন্ত জিততে পারলেও বড় ধাক্কা দিয়েছে কংগ্রেস৷ এই পরিবর্তনশীলতাই সক্রিয় থাকবে গোটা ২০১৮ সাল জুড়ে, যার পরের বছরই ভারতে সংসদীয় নির্বাচন৷

‘নিজেদের হারানো রাজনৈতিক জমি অনেকটাই খুঁজে পাবে কংগ্রেস’

পশ্চিমবঙ্গের জন্যেও ২০১৮ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে, কারণ পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ এই রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় এক সময় বামপন্থিদের যে নিরঙ্কুশ দাপট ছিল, তার আজ চিহ্নমাত্র নেই৷ সেই জায়গায় দখল বসিয়েছে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস এবং বাকি জমি কেড়ে নিতে উদ্যোগী হয়েছে বিজেপি৷ কারণটা সহজবোধ্য৷ যে দল পঞ্চায়েতে নিজেদের দখল কায়েম করতে পারবে, ২০১৯ সালের আসন্ন লোকসভা নির্বাচন, বা ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নিজেদের কর্তৃত্ব জাহির করার কাজটা ততই সহজ হবে৷ যে কারণে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি এখন পঞ্চায়েত নির্বাচনকেই পাখির চোখ করেছে৷

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানালেন, তাঁরা পঞ্চায়েতেও বুথ-ভিত্তিক কমিটি গড়ার কাজ শুরু করে দিয়েছেন, যা আগের নির্বাচন পর্যন্ত ছিল না৷ এ রাজ্যে একদা ক্ষমতায় থাকা বামপন্থিরা এখন গুরুত্ব হারিয়ে কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ায় বিজেপি-ই যে পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী শক্তি, এটা কার্যত স্বীকৃত৷

‘২০১৮ সাল জুড়েই বিজেপির নানা ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা চালু থাকবে’

বিজেপি এবার চাইছে, ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে রাজ্যের মূল রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠার৷ কাজেই ২০১৮ সাল জুড়েই বিজেপির নানা ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা চালু থাকবে৷ তার মধ্যে যেমন মিটিং, মিছিল, ধর্না, ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি থাকবে, তেমনি অন্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার হারও বাড়বে৷ ডয়চে ভেলেকে খোলাখুলিই জানিয়েছেন দিলীপ ঘোষ৷

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানালেন, গুজরাটের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস যে ধাক্কা দিয়েছে বিজেপিকে, তা এবার আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে৷ কংগ্রেসের নির্বাচনি ফলাফল ক্রমশ আরও ভালো হবে, নিজেদের হারানো রাজনৈতিক জমি অনেকটাই খুঁজে পাবে কংগ্রেস৷ তবে এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাব যে আগামী এক বছরে খর্ব করা যাবে না, সেটা খোলাখুলি মেনে নিয়েছেন প্রদীপ ভট্টাচার্য৷ রাজ্যে তৃণমূলের এই দাপটের মুখে একই রকম গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন বামপন্থিরা৷ কিন্তু অন্তত একটি ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে তাঁরা আশাবাদী যে, গুজরাট বিধানসভার ভোটে প্রমাণ হয়েছে, কট্টর হিন্দুত্বের রাজনীতি ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে৷

‘গুজরাটে জিগনেশ, হার্দিকের মতো তরুণ প্রজন্মের নেতাদের উত্থান এক অন্যতর রাজনৈতিক সম্ভাবনার জন্ম দিচ্ছে’

ডয়চে ভেলেকে বললেন সিপিআইএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম৷ তাঁদের কাছে এটাও খুব আশাজনক, যে নরেন্দ্র মোদীর অপরাজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে না পড়লেও, গুজরাট নির্বাচনে তাতে আঁচড়ের দাগ পড়েছে, ফাটল দেখা যাচ্ছে৷ এবং দেশের অর্থনীতি ক্রমশ যে দুরবস্থার মধ্যে চলে যাচ্ছে, তার যে একটা তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে জনমানসে, সেটাও বামপন্থিদের বিশ্বাস৷ চাকরি নেই, ব্যবসা মার খাচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে এবং লোক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে ক্রমশ৷ বামপন্থিরা সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় এই রাগটাকে ঠিক খাতে যে বইয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, সেটা নিজেই স্বীকার করেছেন মহম্মদ সেলিম৷ তবে গুজরাটে জিগনেশ, হার্দিকের মতো তরুণ প্রজন্মের নেতাদের উত্থান এক অন্যতর রাজনৈতিক সম্ভাবনার জন্ম দিচ্ছে, যা ২০১৮ সালে আরও প্রসার পাবে৷ এমনই বিশ্বাস বামপন্থিদের৷

এ বিষযে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য