মধ্যপ্রাচ্যে পোপ ফ্রন্সিস
২৮ মে ২০১৪তিনটি ধর্মের কাছে যে স্থান পবিত্র, সে স্থানে যাত্রা একজন ক্যাথলিক পোপের কাছে একদিকে যেমন সমস্যাকর, অন্যদিকে তেমন সংঘাতের পরিবর্তে শান্তি ও সম্প্রীতির নতুন প্রতীকী ব্যঞ্জনার একটা সুযোগ৷ ঠিক সেটাই করে দেখালেন নতুন পোপ৷
তিনি শুধু তীর্থযাত্রী হিসেবে ‘হোলি ল্যান্ড'-এ যাত্রা করছেন, বলেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস৷ অথচ তাঁর সেই তীর্থযাত্রা রাজনীতির ক্ষেত্রেও অসাধারণ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে৷ নয়ত পোপ বিশ্বের মানচিত্রে এমন একটি স্থানে পদার্পণ করেছেন, সেখানে প্রতি পদে আক্রোশ, উষ্মা, ভুল-বোঝাবুঝির সম্ভাবনা, যেন সর্বত্র মাইন-বোমা পোঁতা রয়েছে৷ তবুও পোপ তাঁর এই দ্বিতীয় বিদেশি সফরে এতটুকু ভুল করেননি৷ ভুল করেননি তো বটেই, বরং তাঁর প্রতিটি ভাব, ভঙ্গি, মুদ্রা মানুষের মনে ও অন্তঃকরণে নাড়া দিয়েছে ও ছাপ রেখে গেছে৷
মাত্র তিনদিনের সফর৷ কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে যাননি বলেই হয়ত রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর সেই সংক্ষিপ্ত সফর এতটা সফল হয়েছে৷ স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে পোপ ফ্রান্সিস একাধিক চিহ্ন রেখে গেছেন: বেথলেহেমে ইসরায়েলের নির্মিত প্রাকারের সামনে দাঁড়িয়ে, কংক্রিটের উপর হাত রেখে নীরব প্রার্থনায় মগ্ন থেকেছেন৷ জেরুসালেমের ‘ওয়েলিং ওয়াল' বা অশ্রুর প্রাকারের সামনে অতীত জীবনের এক ইহুদি ও একজন মুসলমান বান্ধবকে যুগপৎ আলিঙ্গণাবদ্ধ করেছেন এই পোপ৷ আর্জেন্টিনার পরিচিত বন্ধু এঁরা৷
সবশেষে ইয়াদ ভাশেম স্মৃতিসৌধে হলোকস্টের জীবিত সাক্ষীদের হস্তচুম্বন করেছেন পোপ ফ্রান্সিস৷ শোয়া-র ৬০ লক্ষ নিহতদের স্মরণে পোপের ভাষণে প্রার্থনার সঙ্গে মিশেছে হতাশা: ‘‘মানুষ এ কি হয়ে দাঁড়িয়েছে?'' ‘‘ঈশ্বর, এ যেন আর কখনো না ঘটে!'' অন্যায়, দ্বেষ ও সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন প্রত্যক্ষভাবে, তারা যে বাস্তব, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন৷
পোপের সর্বশেষ ‘চিহ্ন' হলো: ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি এলাকার দুই প্রেসিডেন্টকে একটি ‘শান্তি প্রার্থনার' জন্য ভ্যাটিকানে আসতে আমন্ত্রণ জানানো৷ শিমন পেরেজ ও মাহমুদ আব্বাস, উভয়েই সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন – অর্থাৎ পোপের এই শান্তি দৌত্য অথবা শান্তি আহ্বানও ব্যর্থ হয়নি৷ রাজনীতি, সংঘাত ও সহিংসতার অপরপারেও যে দুনিয়ায় কিছু একটা আছে, সেটাই যেন আবার প্রমাণ করে দিলেন এই পোপ৷
সরকারিভাবে পোপ কিন্তু গেছিলেন গ্রিক সনাতনপন্থি গির্জার সঙ্গে ৯৬০ বছর বিচ্ছিন্নতার পর এক নতুন সম্প্রীতির খোঁজে৷ চারবার তিনি পেট্রিয়ার্ক বার্থোলোমেয়স-এর সঙ্গে মিলিত হয়েছেন৷ তার বাস্তব ফল হয়ত এই মুহূর্তে দৃষ্টিগোচর হবে না, কিন্তু পোপ এবং পেট্রিয়ার্ক যে যিশু খ্রিষ্টের সমাধিতে পরস্পরকে সর্বপ্রথমে প্রবেশের সম্মান দিতে সচেষ্ট ছিলেন, সেই ছোট্ট ভব্যতাটাই যেন জেরুসালেমের তপ্ত গ্রীষ্মে বসন্তের ছোঁয়া এনে দিয়েছিল৷
এই সফর ৭৭ বছর বয়সি পোপকে ক্লান্ত করেছে বৈকি৷ কিন্তু সে নিশ্চয় এক মধুর ক্লান্তি, যা শুধুমাত্র সার্থকতার মধুর আবেগ ও অনুভূতি থেকে আসতে পারে৷