রঙে রঙে রাঙানো ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপের দিন
১২ জুলাই ২০১০আশেপাশের দেশগুলোতেও নাকি ছিল একই অবস্থা৷ এমনটাই বলছেন সেখানকার সাধারণ মানুষ৷
বিশ্বকাপের আয়োজন ঠিকঠাক করার ব্যাপারে বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ ছিল আফ্রিকার জন্য৷ দক্ষিণ আফ্রিকা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে সফলতার সঙ্গেই৷ কিন্তু যে অঞ্চলে ক্ষুধা-দারিদ্র্য এখনও জেঁকে বসে আছে, হানাহানি চলছে জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে, ঘটছে আইন বিরোধী নানা ধরণের কার্যকলাপ, সেখানে আবার কি ফিরে আসবে অশান্তি? অনেকেই এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, হয়তো আবারও ফিরে আসবে৷ তবে অন্তত এই একটি মাস বেশ শান্তিপূর্ণ ছিল৷ ছোটখাট ঘটনা যে বিশ্বকাপ চলাকালে ঘটেনি, তা নয়৷ বলা হচ্ছে, ১৯ তম বিশ্বকাপের আয়োজনে সব দিক থেকেই সফল দক্ষিণ আফ্রিকা৷
প্রথম পর্ব থেকেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা৷ কিন্তু তাতে মোটেই উৎসব থেকে পিছিয়ে পড়েনি সেখানকার জনগণ৷ প্রতিদিন নানা রঙ-বেরঙের পোষাক পরে, হাতে ভুভুজেলা নিয়ে, নিজস্ব সব সনাতন বাদ্যযন্ত্র আর নানা ধরণের সাজ-সজ্জার মধ্য দিয়ে যে সমস্ত স্থানে খেলা হয়েছে, সেই সব জায়গায় নাচ গান করে আগত ফুটবলপ্রেমীদের শুভেচ্ছা-স্বাগত জানিয়েছেন তারা৷ বলে রাখা ভালো, এই একমাসে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে, তা হলো ভুভুজেলা!
বিশ্বকাপ উপলক্ষে নানা ধরণের ব্যবসা বেশ জমে উঠেছিল গত এক মাসে৷ এছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ আগত অতিথিদের পর্যটনে উৎসাহী করতে নানা ধরণের প্যাকেজ ছেড়েছিল৷ তাই খেলা দেখার সঙ্গে সঙ্গে আফ্রিকার সিংহ, চিতাবাঘ, হরিণ কিংবা হাতি দেখতে জঙ্গল চষে বেড়িয়েছেন অনেকেই৷ ফলে এ খাতে বেশ আয়ও হয়েছে দেশগুলোর৷ একই সঙ্গে আফ্রিকার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিমান সংস্থাও দিয়েছিল প্যাকেজ৷ আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার একটি সংবাদপত্রের কলাম লেখক ওতুমো ওংগালার কথায়, ‘আফ্রিকা যে বিশ্বকাপের মতো বড় আসর সফলতার সঙ্গে আয়োজন করতে পারে, এবার সেটাই প্রমাণ হলো৷ এক কথায়, ‘ইয়েস উই ক্যান,আমরাও পারি৷'
আফ্রিকার দেশ গাবনের বালাইসি মাকাসা এই একমাসকে তুলনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিজয়ের সেই আনন্দময় সময়ের সঙ্গে৷ তবে বিষাদও ভর করেছে কারও কারও মনে৷ নাইজেরিয়ার গায়ক ইয়ামিসি রানসাম কুটি মনের দু:খকে মুখের কথায় প্রকাশ করলেন তাই এভাবে,'‘আবার হয়তো এই আফ্রিকা ফিরে যাবে আগের সেই সময়ে, আবার দেখা দেবে নানা ধরণের অপরাধ, যা আমরা কখনোই চাই না৷'
বর্ণবাদ বিরোধী নেতা ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আর্চ বিশপ ডেসমন্ড টুটুর কথায়,‘খুবই চমৎকার হয়েছে আফ্রিকার বিশ্বকাপ আয়োজন৷ তবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে এখনো আফ্রিকার অধিকাংশ মানুষের নেই কোন বাস্তুভিটা, অধিকার নেই স্কুলে যাবার, সুযোগ নেই চিকিৎসার, সুপেয় পানীয় জলের রয়েছে তীব্র সংকট৷'
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক