1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রক্ত সংগ্রহে ‘দ্য গুড ভ্যাম্পায়ার্স'

৪ জুন ২০১৯

একটি ঘটনা পালটে দিতে পারে মানুষের জীবনের গতি ও দিক৷ এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল অস্ট্রেলিয়ার ১৪ বছর বয়সের জেমস হ্যারিসনের সঙ্গে৷ ভয়াবহ এক অসুখে তাঁর ফুসফুসের এক অংশ কেটে বাদ দিতে হয়েছিল৷ তারপরের গল্পটা দারুণ৷

https://p.dw.com/p/3JawZ
India Diabetes Diabetes Test in Hyderabad
ছবি: Getty Images/AFP/N. Seelam

ফুসফুস কেটে বাদ দেয়ার অপারেশনটি খুব জটিল৷ তিন মাস হাসপাতালে থাকতে হয় ছোট্ট জেমসকে, বুকে দিতে হয় ১০০টি সেলাই৷ সে অপারেশনে জেমসের শরীরে ১৩ ইউনিট রক্ত দিতে হয়৷ এর পরিমাণ প্রায় ১৩ লিটার৷

জেমসকে এ বিপুল পরিমাণ রক্ত দিয়ে সহায়তা করেছিলেন কিছু মানুষ, যাঁদের আসলে তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ চিনতেন না৷ জেমস পরবর্তীতে বলেছিলেন, তিনি জানতেও পারেননি, তাঁকে বাঁচাতে ঠিক কতজন মানুষের রক্ত প্রয়োজন হয়েছে৷ তাঁদের সাথে তাঁর কখনও পরিচয়ও হয়নি৷

এই বিষয়টি দাগ কেটেছিল ছোট্ট জেমসের মনে৷ এরপর ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর থেকেই রক্ত দান শুরু করেন তিনি৷ টানা ১১ বছর নিয়মিত রক্ত দানের পর নিজের শরীর সম্পর্কে নতুন তথ্য জানতে পারেন জেমস৷

দীর্ঘদিন ধরে গর্ভবতী মায়েদের রক্তে আরএইচ ইনকম্প্যাটিবিলিটি নিয়ে ভুগছিলেন ডাক্তাররা৷ রক্তের এই ফ্যাক্টরটিই ঠিক করে দেয়, কারো রক্ত পজিটিভ হবে, নাকি নেগেটিভ৷ কোনো মায়ের রক্ত পজিটিভ আর তাঁর গর্ভের সন্তানের নেগেটিভ হলে ঘটে ভয়াবহ সমস্যা৷ মায়ের রক্তের আরএইচ, ভ্রুণের পজিটিভ রক্তকণিকাকে আক্রমণ করে মেরে ফেলতে থাকে৷ ফলে গর্ভের ভ্রুণ বাঁচাতে হিমশিম খেতে হয় ডাক্তারদের৷

জেমসের শরীরের রক্ত পরীক্ষা করে পাওয়া গেল বিরল আরএইচ (ডি) ইমিউন গ্লোবিউলিন বা সংক্ষেপে অ্যান্টি ডি৷ এই অ্যান্টি ডি থামিয়ে দিতে পারে গর্ভাবস্থায় পজিটিভ আর নেগেটিভ রক্তকণিকার মধ্যের সংঘাত৷ ডাক্তারদের ধারণা, ১৪ বছর বয়সে জেমসকে যারা রক্ত দিয়েছেন, তাঁদের কারো কাছ থেকে এটি চলে এসেছে তাঁর শরীরে৷ এরপর থেকে আরএইচ রোগে আক্রান্তদের জন্যও নিয়মিত রক্ত ও প্লাজমা দান করে আসছেন জেমস৷ ধারণা করা হয়, জেমসের দেয়া রক্তে প্রাণ বেঁচেছে প্রায় ২০ লাখ শিশুর৷

৬৩ বছরের টানা রক্তদান শেষে ৮১ বছর বয়সে ২০১৮ সালে রক্তদান থেকে অবসর নেন জেমস৷

এই গল্পটা বলার কারণ একটাই৷ বিশ্বজুড়ে রক্তদানের বর্তমান পরিস্থিতি৷

HA Asien | Anupam Deb Kanunjna
অনুপম দেব কানুনজ্ঞ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বছরে প্রায় ১২ কোটি রক্তদানের মধ্যে ৪২ শতাংশই হয় উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে৷ অথচ এই দেশগুলোতে বাস করেন পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র ১৬ শতাংশ৷ তবে আশার কথা ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে স্বেচ্ছায় রক্তদানের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে৷

বিশ্ব রক্তদান দিবস উপলক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশের সবশেষ অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের উন্নতির কথা বলা হলেও স্বেচ্ছা রক্তদানের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার কথাও বলা হয়েছে৷

২০১৬ সালে আট লাখ ইউনিটের চাহিদা থাকলেও সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগ মিলিয়ে সংগ্রহ হয়েছে কেবল ছয় লাখ ইউনিট৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সংগৃহীত রক্তের কেবল ৩১ শতাংশ এসেছে স্বেচ্ছা রক্তদান থেকে৷ দুই-তৃতীয়াংশ রক্তই রোগীর আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে৷ অথচ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডেও স্বেচ্ছা রক্তদান দেশের চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশ পূরণ করে৷

এর আগের বছরের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে চালানো এক জরিপের কথা বলা হয়েছে৷ ২০টি জেলার হাসপাতালের তথ্য নিয়ে দেখা গেছে, কেবল অর্ধেক পরিমাণ সরকারি হাসপাতালে রক্তদান ও রক্ত সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রেই রক্ত সংগ্রহ ও দানের জন্য আলাদা ইউনিট ও কর্মী রয়েছে৷

জেলাগুলোর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে কেবল অর্ধেকে পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য রক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে৷

আমি জানি আমাদের দেশেও অনেক জেমস হ্যারিসন রয়েছেন৷ সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় এমন অনেক ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে পরিচয় আছে পড়াশোনা-চাকরির পাশাপাশি শখই হচ্ছে অপরিচিতদের জন্য রক্তের জোগান দেয়া৷ এমনকি এমন অনেককে আদর করে বন্ধুমহলে ‘দ্য গুড ভ্যাম্পায়ার', ‘ব্লাডবয়', ‘রক্তকন্যা' – এমন নামও দেয়া হয়েছে৷

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, যে কোনো অল্প জটিল চিকিৎসার জন্যও গ্রামের মানুষকে শহরমুখী হতে হয়৷ এখনও গ্রাম-শহরে আমরা সমান স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চত করতে পারিনি৷ জনসংখ্যার যে সংখ্যাগুরু অংশ আমাদের চাইলেই ‘হাতের নাগালে সর্বাধুনিক চিকিৎসার' বাইরে অবস্থান করছেন, তাঁদের জন্য নিরাপদ রক্তের সরবরাহ ও যোগান নিশ্চিই করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ৷

গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ুক দ্য গুড ভ্যাম্পায়ারস৷

ব্লগপোস্টটি কেমন লাগলো জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান