যে প্রাচীর মানুষে-মানুষে বিভাজন সৃষ্টি করে
শরণার্থীদের দূরে রাখতে হাঙ্গেরি ইউরোপের দক্ষিণে কাঁটাতারের বেড়া গড়ে তুলেছে৷ তবে মানুষে-মানুষে বিভাজন সৃষ্টি করতে প্রাচীর গড়ার দৃষ্টান্তের অভাব নেই৷ বার্লিন থেকে শুরু করে পশ্চিম তীর – যুগে যুগে এমন উদ্যোগ দেখা গেছে৷
পূর্ব-পশ্চিম জার্মানি
১৯৬১ সালের ১৩ই আগস্ট তৎকালীন পূর্ব জার্মানি বার্লিন প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু করে৷ ১৯৬১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৬ লক্ষ পূর্ব জার্মান নাগরিক পশ্চিমে পালিয়ে যায়৷ কমিউনিস্ট নেতৃত্বের ভয় ছিল, এমনটা চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে৷ ১৯৮৯ সালের ৯ই নভেম্বর সেই প্রাচীর ভেঙে দেওয়া হয়৷
মরক্কো-স্পেন
আফ্রিকার ভূখণ্ডে এক টুকরো ইউরোপ শরণার্থীদের যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে৷ মরক্কো উপকূলে স্পেন নিয়ন্ত্রিত দুই ছিটমহল সেউটা ও মেলিয়া-কে ১৯৯৩ সালে কার্যত দুর্গে পরিণত করা হয়৷ ৬ মিটার উঁচু কাঁটাতারের বেড়া আফ্রিকার শরণার্থীদের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে দূরে রাখবে – এটাই ছিল উদ্দেশ্য৷
গ্রিস-তুরস্ক
শরণার্থীদের দূরে রাখতে গ্রিস ২০১৩ সালে তুরস্ক সীমান্তে প্রায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ানের বহির্সীমা মজবুত করতে সে দেশের সরকার সীমান্তবর্তী এক নদীর উপরেও টহলদারি বাড়িয়ে দেয়৷
ইরান-পাকিস্তান
বেআইনি অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান বন্ধ করতে ইরানের সরকার ২০০৭ সাল থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাকিস্তান সীমান্তে বেড়া তৈরির কাজ শুরু করে৷
ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন
সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধ করতে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ২০০৩ সাল থেকে পশ্চিম তীরের সীমান্তে প্রায় ৮ মিটার উঁচু প্রাচীর নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷ এ ভাবে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সীমা আগেভাগেই স্থির করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷
ভারত-বাংলাদেশ
ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু অংশেও কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে৷ কিন্তু ফেলানির মর্মান্তিক মৃত্যুর মতো ঘটনা এমন প্রাচীরের অমানবিক দিকও তুলে ধরে৷ তা সত্ত্বেও প্রায় চার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের বাকি অংশেও কাঁটাতারের বেড়া লাগানো এবং নদীনালা বা জলাভূমির উপরেও বিশেষ বেড়া লাগানোর উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে৷
ভারত-পাকিস্তান
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা কোনোকালই দূর হয় না, শুধু বাড়ে বা কমে৷ বিশেষ করে বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলে ‘লাইন অফ কন্ট্রোল’ বা নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ছোটবড় সংঘর্ষ লেগেই আছে৷ বিপুল সেনা তৎপরতার মধ্যে সাধারণ মানুষের পক্ষে সেই সীমান্ত পেরোনোর সুযোগ নেই বললেই চলে৷