আলীমের মৃত্যু
৩০ আগস্ট ২০১৪হাসপাতালের পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল মজিদ ভূঁইয়া জানান, শনিবার বেলা সোয়া ১টার দিকে তিনি মারা যান৷ আর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ফরমান আলীও তার মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছেন৷
তিনি বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় গত মঙ্গলবার তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছিল৷ এই কয়দিন তিনি লাইফ সাপোর্টেই ছিলেন৷ শনিবার সোয়া ১টায় লাইফ সাপোর্ট খুলে দিলে চিকিত্সকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷''
এদিকে আলীমের মরদেহ শনিবার হিমঘরে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান৷ তিনি বলেন, ‘‘রোববার একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে৷''
তবে আব্দুল আলীমের স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তরের আবেদন করেছেন৷ আলীমের ছেলে খালিদ বিন আলীম জানান, যেহেতু চিকিত্সক জানিয়ে দিয়েছেন ক্যান্সারের কারণে আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে, তাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেছি৷ এখন দেখা যাক কি হয়৷
তিনি জানান, লাশ পেলে বনানীতে একটি জানাজা করে জয়পুরহাট নিয়ে যাওয়া হবে৷
তবে কারা কতৃপক্ষ জানিয়েছেন, চিকিত্সকরা জানিয়েছেন আব্দুল আলীম দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন৷ তবে আইন অনুযায়ী ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই৷ এ জন্য উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে৷ নির্দেশনা পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের নেতা হিসাবে একাত্তরে জয়পুরহাটে রাজাকার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক নিধনযজ্ঞ চালানোর দায়ে আলীমকে গত বছরের ৯ই অক্টোবর আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল৷ তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৭টি অভিযোগের নয়টি আদালতে প্রমাণ হয়েছে৷ হত্যা, গণহত্যার মতো অপরাধে ‘মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য হলেও' বয়স ও পঙ্গুত্বের কথা বিবেচনায় নিয়ে ৮৩ বছর বয়সি এই যুদ্ধাপরাধীকে বাকি জীবন কারাগারে কাটানোর এই সাজা দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২৷ বয়স ও স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে রায়ের দিন থেকেই তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে রাখা হয়েছিল৷
মামলা ও রায়
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১১ সালের ২৭ মার্চ জয়পুরহাটের বাড়ি থেকে আলীম গ্রেফতার করা হয়৷ ৩১শে মার্চ তাকে ১ লাখ টাকায় মুচলেকায় আর ছেলে ফয়সাল আলীম ও আইনজীবী তাজুল ইসলামের জিম্মায় জামিন দেন ট্রাইব্যুনাল৷ এরপর কযেক দফায় জামিনের মেয়াদ বাড়ানোয় ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ছেলের বাড়িতেই ছিলেন৷
গত বছরের ১৫ই মার্চ আলীমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন, যাতে হত্যা, লুণ্ঠনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৮টি অভিযোগ আনা হয়৷
গত বছরের ১১ জুন ৭ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ১৭টি অভিযোগে আলীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়৷ চলতি বছরের ২২শে অগাস্ট প্রসিকিউশনের ৩৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়৷
অন্যদিকে আসামিপক্ষে তার ছেলে সাজ্জাদ ছাড়াও সাক্ষ্য দেন জয়পুরহাটের বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী ও মো. মোজাফফর হোসেন৷ সাফাই সাক্ষ্য চলে ২৭শে আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত৷ ৪ঠা সেপ্টেম্বর থেকে ২২শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গতবছরের ৯ই অক্টোবর মামলার রায় হয়৷
মুসলিম লীগ থেকে বিএনপি
১৯৩০ সালের ১লা নভেম্বর জয়পুরহাটে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল আলীম৷ তার বাবা আবদুল ওয়াহেদ ছিলেন জয়পুরহাট শহরের থানা রোডের ইসলামিয়া রাইস মিলের মালিক৷ আদি বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় হলেও দেশ বিভাগের পর ১৯৫০-৫১ সালে তাদের পুরো পরিবার তখনকার জয়পুরহাটে চলে আসে৷
১৯৫৮ সালে মুসলিম লীগে যোগ দেয়ার চার বছরের মাথায় দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি৷১৯৭১ সালে তার নেতৃত্বে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ব্যাপক ধরপাকড়, লুটপাট, নির্যাতন এবং হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটায়৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছিল আলীমের বিরুদ্ধে৷
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর এবং ১৯৭৭ সালে দুই দফা জয়পুরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলীম৷ ১৯৭৯, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিনি বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ জিয়াউর রহমানের সরকারে প্রথমে বস্ত্রমন্ত্রী এবং পরে যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন আলীম৷