যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত নিয়ে সিনেমা
নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই আলোচনায় আছে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত৷ সেই ট্রাম্প এখন প্রেসিডেন্টের আসনে৷ তবে এই সীমান্তে প্রথম ট্রাম্পই নজর দেননি, বহু সিনেমায়ও দেখানো হয়েছে এটা৷
যুদ্ধক্ষেত্রে জন ওয়েন
টেক্সাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮তম অঙ্গরাজ্য৷ ৪৫ জন মার্কিন রাষ্ট্রপতির তিনজন এসেছেন এই রাজ্য থেকে৷ তবে স্বাধীনতার সময় থেকে এই রাজ্য যুক্তরাষ্ট্রে ছিল না৷ এটি পরে যুক্ত হয়েছে৷ এলাকাটি কয়েক বছরে স্বাধীনও ছিল৷ এই অঞ্চলের দখল নিয়ে অনেক লড়াই হয়েছে৷ এই ভূমির অধিকার দাবি করে এই সংঘাতেও জড়িয়েছিল মেক্সিকো৷ ১৮ শতকের লড়াইয়ের গল্প নিয়ে মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা জন ওয়েন নির্মাণ করেন ‘দি আলামো’ (১৯৬০)৷
শয়তানের সঙ্গ
মেক্সিকো সীমান্ত নিয়ে নানা গল্প আছে৷ অনেকই এটাকে দুর্নীতি, মাদক পাচার আর অপরাধের আখড়া মনে করেন৷ সীমান্তের দুই পাড় ঘিরে এ রকম একটি রোমাঞ্চকর গল্প নিয়ে পরিচালক ওরসোন ওয়েলস বানিয়েছেন ‘টাচ অব ইভিল’৷ ১৯৫৮ সালের এই সিনেমায় জার্মান অভিনেত্রী মারলেনে ডিট্রিশ অতিথি শিল্পী হিসাবে অভিনয় করেই সাড়া ফেলে দেন৷
দ্যা রিও গ্রান্ডে
জন ওয়েনের ‘দি আলামো’ যখন দেখা যায়, তখন পশ্চিম আমেরিকান চলচ্চিত্রের অসাধারণ সময় প্রায় শেষ৷ এরপরও এটি ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছিল৷ নদীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি চলচ্চিত্রটির নাম রাখেন ‘দ্যা রিও গ্রান্ডে’৷
রক্তসিক্ত মহাকাব্য
স্যাম পেকিনপাহ’র পরিচালনায় ১৯৬৯ সালে মুক্তি পায় ‘ওয়াইল্ড বাঞ্চ’৷ মনোযোগহীন অঞ্চল কিভাবে আইনহীন এলাকায় পরিণত হয়, সে একটি রক্তসিক্ত মহাকাব্য এটি৷
আধুনিক বৈচিত্র্য
আমেরিকান পরিচালক রবার্ট অ্যান্থনি রডরিগুয়েজের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে একটা তাড়না কাজ করে৷ নিজের মেক্সিকান শেকড়ের কারণেও এটা হতে পারে৷ তাঁর নানা চলচ্চিত্রে সীমান্তের সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব উঠে এসেছে৷ ১৯৯৬ সালের চলচ্চিত্র ‘ফ্রম ডাস্ক টিল ডন’-সে রকমই একটি দৃষ্টান্ত৷
বেড়ে ওঠার জায়গা নেই
‘নো কান্ট্রি ফর ওল্ড ম্যান’-২০০৭ সালের অস্কার বিজয়ী সিনেমা৷ দুই ভাই জোয়েল এবং ইথান কোয়েন এটি পরিচালনা করেন৷ মাদক, মাফিয়া, খুন এবং প্রতারণা নিয়ে এই সিনেমা নির্মিত হয়েছে৷ ছবিতে খুবই মারাত্মক একটি জায়গার কথা বলা হয়েছে৷ সেখানে মৃত্যু খুবই স্বাভাবিক বিষয়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের খুব কম মানুষই পরিণত বয়সে যেতে পারে৷
আলবাকুয়ের্কের দক্ষিণে
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে ‘ব্রেকিং ব্যাড’ নামে একটা টিভি সিরিজ খুবই জনপ্রিয়৷ ২০০০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যবর্তী সময়ে এটি নির্মিত হয়৷ মাদক নিয়ে এই অঞ্চলের বহু গল্পকে এখানে তুলে আনা হয়েছে৷ আলোচিত এই সীমান্তটি এলাকাটির দক্ষিণে বেশি দূরে নয়৷
সীমান্ত বাণিজ্যের অন্তরালে
বাভারিয়ান পরিচালক মার্কো ক্রয়েৎসপাইন্টনার ২০০৭ সালে ‘ট্রেড’ নির্মাণ করেন৷ যেসব মেক্সিকান শিশুদের যৌনদাস বানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করা হয়– তাদের গল্প তিনি এখানে তুলে ধরেছেন৷
সীমান্তে মাদক যুদ্ধ
‘সিকারিও’ সিনেমায় অ্যারিজোনা এবং মেক্সিকোর সীমান্তের মাদক-যুদ্ধের ফল বিশ্লেষণ করা হয়৷ ক্যানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা ডেনিস ভিলেনয়েভ ২০১৫ সালে এই থ্রিলারটি তৈরি করেন৷ দক্ষিণ অ্যারিজোনাতে এর চিত্র ধারণ করা হয়৷
নেশায় বুঁদ পরিচালকরাও
পরিচালকদেরকেও এখানকার মাদক কারবারের জাদু এক ধরণের মোহে আটকে ফেলে৷ তাই তাঁরা এখানে ছুটে আসেন বারবার৷ ব্রিটিশ হলিউড চলচ্চিত্র নির্মাতা রিডলি স্কট ‘কাউন্সিলর’ নামে একটা সিনেমা বানান৷ ব্র্যাড পিট, মাইকেল ফাসবেন্ডার এতে অভিনয় করেন৷ এল-পাসো, টেক্সাস এবং স্পেনে এই চলচ্চিত্রের চিত্র ধারণ করা হয়৷
অপরাধ এবং রাজনীতি
স্টিভেন সোডারবার্গ ১৭ বছর আগে ‘ট্রাফিক’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন৷ সেখানে তিনি পুলিশ, মাদক কারবারি, রাজনীতিবিদ এবং কর্তৃপক্ষের মধ্যকার জটিল সম্পর্ক চিত্রায়িত করেছে
সীমান্তের গোয়েন্দা গল্প
এই সীমান্ত ঘিরে বেশ কিছু গোয়েন্দা গল্প এবং হত্যা-রহস্য রয়েছে৷ এ রকম বিষয় নিয়ে ১৯৭৩ সালে রবার্ট আর্টম্যান একটি সিনেমা তৈরি করেন৷ এর নাম ‘দ্যা লং গুডবাই’৷ রেমন্ড চ্যান্ডলারের উপন্যাসের ভিত্তিতে এটা তৈরি করা হয়েছে৷
বিশ্বায়নের সময়ের সীমান্ত
মেক্সিকোর তারকা পরিচালক আলেসান্দ্রো গঞ্জালেস ইনারিটু ‘বাবেল’ নামে একটি নাটক বানান৷ এতে বিশ্বায়নের সময়ে সীমান্ত মানুষের কাছে কোন ধরণের অর্থ বহন করে, তার জবাব খোঁজা হয়েছে৷
সীমান্ত প্রহসন
সীমান্ত সম্পর্কে তামাশা করার মতো বেশি কিছু থাকে না৷ অধিকাংশ সিনেমাতেই গুরুগম্ভীরভাবে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে৷ কিন্তু ২০০৪ সালে জ্যামস এল ব্রুকস ‘স্প্যাংলিশ’ নামে একটা প্রহসনধর্মী ছবি নির্মাণ করেন৷ একজন ধনী আমেরিকান এবং একজন মেক্সিকান পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে ঘিরে ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে৷
অভিবাসন নাটক
সাম্প্রতিক সময়ে এই অঞ্চলের দারিদ্র্য এবং অভিবাসন নিয়ে অনেক সিনেমা হচ্ছে৷ গত বছর জার্মান-ফরাসি-মেক্সিকান যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ‘সয় নেরো’ বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভালে দেখানো হয়৷ ভালো জীবনের সন্ধানে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত অতিক্রম করা এক তরুণ মেক্সিকান সম্পর্কে একটি গল্প এখানে তুলে ধরা হয়৷ ইরানি বংশোদ্ভূত পরিচালক রাফি পিটস এটি পরিচালনা করেন৷
আধুনিক ক্লাসিক
দক্ষিণ থেকে উত্তরে অভিবাসন নিয়ে সবচেয়ে আকর্ষণীয় সিনেমাটি সম্ভবত ২০০৯ সালে কেরি ফুকুনাগা নির্মাণ করেন৷ এই সিনেমার নাম ‘সিন নমব্রে’৷ এতে বেশ কয়েকজন যুবকের জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়৷ তারা সবাই মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার চেষ্টা করে৷ তাদের কেউ নিজ শহরের অপরাধী দলের সঙ্গ ত্যাগ করতে, কেউ দুনিয়াতেই স্বর্গসুখ লাভের আশায় এই চেষ্টা করে৷