যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা হল ফায়সালের
৬ অক্টোবর ২০১০আদালতে আত্মবিশ্বাসী ফায়সাল
নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানে বিচারপতি মিরিয়াম সেডারবাউমের আদালতে ফায়সালের সাজা ঘোষণা মঙ্গলবার হয়ে যায় ঠিক আধঘন্টায়৷ হাতে হাতকড়া পরিয়ে নীল জেলখানার পাতলুন আর শাদা টিউনিক পরা লম্বা চুল, একমুখ দাড়ি ফায়সালকে যখন আনা হয় আদালতে, তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, সে খুব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷ সে জানে সে কী করেছে৷ বিচারক তাকে তার অপরাধ ব্যাখ্যা করলে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই ফায়সাল জানিয়ে দেয়, বিশ্বের কোন বিচারশালা মুসলিমদের বিচার করার যোগ্য নয়৷ সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সে বলে, ইসলামের সঙ্গে পশ্চিমের যুদ্ধ সবেমাত্র শুরু হয়েছে৷ ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিল পাকিস্তানি ফায়সাল৷ সেই নাগরিকত্ব গ্রহণের শপথে দেশকে ভালোবাসার অঙ্গীকার সে কী করে তুচ্ছ করল, বিচারকের এই প্রশ্নের জবাবে ফায়সাল বলে, সে শপথ নিয়েছিল ঠিকই কিন্তু কথাগুলোকে সে বিশ্বাস করেনি৷ ফায়সালের যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা ঘোষণা করে বিচারপতি সেডারবাউম বলেন, এই কঠিন সাজা না দিলে এই ব্যক্তি আবারও এইভাবে মানুষ হত্যা করতে চেষ্টা করবে৷ তাছাড়া এটা দৃষ্টান্ত অন্যদের জন্য, যারা এরকম ভাবছে৷
কে এই ফায়সাল শাহজাদ?
ফায়সাল আদতে উত্তর পশ্চিম পাকিস্তানের জঙ্গি অধ্যুষিত পেশাওয়ার শহরের ছেলে৷ তার বাবা পাকিস্তানি বিমানবাহিনীতে বেশ উঁচু পদে আসীন ছিলেন৷ ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে আসে ফায়সাল৷ প্রথমে গ্র্যাজুয়েশন এবং পরে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে সে৷ পাকিস্তানে সে বিয়ে করেছে এবং তার স্ত্রী এবং অন্তত দুটি বাচ্চা আছে বলেও জানা গেছে৷ তারা বর্তমানে রয়েছে সম্ভবত করাচিতে৷ এ বছরের গোড়াতেও সপরিবারে অ্যামেরিকায় বাস করেছে ফায়সাল৷ গত কয়েক বছরে ৭-৮ বার পাকিস্তানে যায় ফায়সাল৷ সর্বশেষ গিয়েছিল এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে৷ ৩১ বছরের এই যুবক পাকিস্তানে গিয়ে কী কী করেছিল, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক৷ গত পয়লা মে নিউ ইয়র্কের কাছে কানেটিকাটের ব্রিজপোর্টের বাড়ি থেকেই ফায়সাল তার গাড়িতে করে বোমা নিয়ে টাইমস স্কোয়ারে যায়৷ সৌভাগ্যবশত বোমাটি ফাটে নি৷
বোমা ফাটলে কী হতে পারত?
টাইমস স্কোয়ারের বোমায় যেসব মালমাশলা ছিল, সেসব মালমশলা দিয়েই তৈরি করা একটি বোমাতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেখেছে এফবিআই৷ সেই বিস্ফোরণের ভিডিও টেপ প্রচার করা হয়েছে৷ দেখা গেছে বেশ বড়সড়ো ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত৷ ছুটির দিনের ভিড়ে ভরা টাইমস স্কোয়ারে বহু মানুষের মৃত্যু তো হতই, বিস্ফোরণের প্রভাবে অনেকে সারাজীবনের জন্য মানসিকভাবে পঙ্গুও হয়ে যেতে পারতেন৷ বিচারক তাঁর রায়ে এইসব বিষয়গুলিরই উল্লেখ করেছেন৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: ফাহমিদা সুলতানা