1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ময়নাতদন্তেও পরিবর্তনের ছোঁয়া

৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

অকাট্য তথ্যপ্রমাণের অভাবে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর রহস্য অনেক সময় রহস্যই থেকে যায়৷ ডিজিটাল অটোপ্সি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইউরোপে সেই পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা চলছে৷ এভাবে  পরিবহণ ব্যবস্থা আরো নিরাপদ করার উদ্যোগ চলছে৷

https://p.dw.com/p/3zxIx
USA I Tiger Woods I Unfall
ফাইল ফটোছবি: AP/picture alliance

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলিতে বছরে প্রায় ২৩,০০০ মানুষ পরিবহণ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও মৃত্যুর কারণ ও দুর্ঘটনার নিখুঁত বিবরণ দ্রুত জানা যায় না৷ অনেক প্রশ্নের জবাব কখনোই পাওয়া যায় না৷

অনেক শতাব্দী ধরে মানুষ ময়নাতদন্তের শরণাপন্ন হচ্ছে৷ জুরিখ শহরের ফরেন্সিক প্যাথোলজিস্ট প্রোফেসর মিশায়েল টালি ও তাঁর টিম নতুন পথ খুঁজছেন৷ তারা ‘ভার্চুয়াল অটোপ্সি' ক্ষেত্রের পথিকৃৎ৷ এই পদ্ধতিতে আরও দ্রুত মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে৷ যেমন বিশেষ একটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তাঁরা পুলিশের হয়ে জানার চেষ্টা করছেন, যে গাড়ি ঠিক কোন দিক থেকে মৃত পথচারীকে চাপা দিয়েছিল৷ 

ময়নাতদন্তের ডিজিটাল পদ্ধতি

‘ভির্টোস্ক্যান' নামের  নতুন এক প্রযুক্তি তাঁদের সেই কাজে সহায়তা করছে৷ এর আওতায় প্রথমে সামনে থেকে ১৮০ ডিগ্রি তারপর পেছন থেকে লাশের শরীরে বাহ্যিক ক্ষত নিখুঁতভাবে নথিভুক্ত করা হয়৷

নির্দিষ্ট এই দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, চালক কেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন? গাড়ি ঠিক কোন দিক থেকে পথচারিকে ধাক্কা মেরেছিল? কে সেই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী? সেই ফরেন্সিক রহস্য উন্মোচন করতে তদন্তকারীরা মৃত মানুষের জবানবন্দি জানতে পারেন না৷ মৃত্যুর রহস্যের জট ছাড়াতে অন্যদের এগিয়ে আসতে হয়৷ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে স্ক্যানার দুর্ঘটনায় মৃত মানুষের ভার্চুয়াল যমজ শরীর সৃষ্টি করতে পারে৷

কিন্তু ভার্চুয়াল এই ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে শুধু দ্রুততাই মূল বিষয় নয়৷ ডিজিটাল পদ্ধতিতে জমা রাখা হয় বলে তদন্তকারীরা অনেক বছর পরেও তথ্যপ্রমাণের নাগাল পেতে পারেন৷ কম্পিউটার টোমোগ্রাফির ইমেজও সংরক্ষিত থাকে৷

লাশের উপর কয়েক হাজার বার এক্স-রে করে সেই ছবি সৃষ্টি হয়৷ ফলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মৃতদেহের ভেতরের ডিজিটাল প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে৷ কিন্তু সেই ছবি থেকে কী জানা যায়? এ ক্ষেত্রে কি বাম দিক থেকে পথচারীকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল?

নিখুঁত বিশ্লেষণের সুযোগ

দেখা গেল, হাড়ের মাঝের অংশ ভেঙে গেছে৷ সেটা সত্যি বড় ধাক্কা৷ তিনটি জায়গায় তার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে৷ মাথার খুলিও পরীক্ষা করে দেখতে হবে৷ বাম দিকে আঘাত লেগে থাকলে সেখানে কিছু পাওয়া যেতে পারি৷ সব দেখেশুনে বোঝা যাচ্ছে যে বাম দিকেই ফ্র্যাকচার ঘটেছে৷ আঘাতের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে৷

কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশের প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল৷ প্রচলিত অটোপ্সি করালে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা সময় লেগে যেত৷

বিশেষজ্ঞদের কাছে এটা স্পষ্ট যে মানুষটিকে বাম দিক থেকে ধাক্কা মারা হয়েছিল৷ পায়ে ও মাথায় আঘাত লেগেছে৷ একটি জায়গায় বিশাল ফ্র্যাকচার হয়েছে৷ সেটি এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ মৃত্যুর আসল কারণ৷ ফলে মূল প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেছে৷

পথচারীর অপমৃত্যু সংক্রান্ত রহস্যের না হয় সমাধান হলো৷ কিন্তু চালকের কী হয়েছিল? যে দুর্ঘটনায় তাঁরও মৃত্যু হয়েছে, সেটির কারণ কী ছিল? অন্য অনেক ঘটনার মতো এ ক্ষেত্রেও গাড়ির চালক দুর্ঘটনার আগে ভোর পর্যন্ত পার্টিতে ছিলেন৷ গাড়িতে ওঠার সময় তিনি কি মাতাল ছিলেন?

মৃত্যুর পরেও অ্যালকোহল শনাক্ত করার পদ্ধতি

ভারচুয়াল অটোপ্সি টিমকে আদালতের এই প্রশ্নেরও জবাব খুঁজতে হচ্ছে৷ এখনো পর্যন্ত অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মৃতদেহ থেকে তন্তু সংগ্রহ করে অ্যালকোহল বিশ্লেষণ করতে হয়৷ ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স স্পেকট্রোস্কোপি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরও দ্রুত এবং কার্যকরভাবে বিশেষ করে মস্তিষ্কে অ্যালকোহলের চিহ্ন নির্ণয় করা সম্ভব৷

এমআরটি যন্ত্র চৌম্বক ক্ষেত্র ও বেতার তরঙ্গের ভিত্তিতে কাজ করে৷ আমাদের শরীরের হাইড্রোজেন পরমাণুর কোর বা মূল চৌম্বক ক্ষেত্রের স্ংস্পর্শে এসে প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের বেশি পানিভরা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও পেশি দৃশ্যমান করে তোলা যায়৷ পরীক্ষার সময়ে পানির অণুর মধ্যে হাইড্রোজেন পরমাণুর সংকেতের ভিত্তিতে সেটা সম্ভব হয়৷

পানি ছাড়া ইথানল, অর্থাৎ অ্যালকোহলের মতো অন্য কোনো অণুর মধ্যে হাইড্রোজেন পরমাণু থাকলে সংকেতের ফ্রিকোয়েন্সি বদলে যায়৷ এভাবে এমআরটি স্পেকট্রোস্কোপির সাহায্যে অ্যালোকহলের অস্তিত্ব শনাক্ত করা সম্ভব৷ ফলে টিস্যুর নমুনা ছাড়াই ফরেনসিক প্যাথলজিস্টরা মৃত ব্যক্তির মস্তিষ্কে অ্যালকোহলের ঘনত্ব নির্ণয় করতে পারেন৷ বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী ফলাফল শূন্য দশমিক আট থেকে এক প্রোমিল৷

আরও গভীর তদন্ত

তবে তরুণ চালকের শরীরে পরীক্ষার ফল কিন্তু নেগেটিভ৷ তিনি মোটেই অ্যালকোহল পছন্দ করতেন না, পার্টিতে তাই শুধু পানি খেয়েছিলেন৷ তাহলে কি গাড়ির উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর পেছনে অন্য কোনো শারীরিক কারণ ছিল?

একই ধরনের অন্য এক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে জুরিখের ফরেনসিক প্যাথলজিস্টরা আরও একবার ডিজিটাল পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন৷ পোস্ট-মর্টাল অ্যাঞ্জিওগ্রাফি প্রক্রিয়ায় কনট্রাস্ট মিডিয়া শরীরের টিস্যুতে আঘাতের চিহ্ন দৃশ্যমান করে তোলে৷

এ ক্ষেত্রেও চালক আচমকা গাড়ির উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন৷ হৃৎপিণ্ড বা আশেপাশের কোনো জায়গায় আঘাতের কারণেই কি এমনটা ঘটেছিল? এমন কিছু হয়ে থাকলে কম্পিউটার টোমোগ্রাফিতে তা ধরা পড়ার কথা৷ কিন্তু ফরেনসিক প্যাথলজিস্টরা হৃৎপিণ্ডের মধ্যে কোনো চিহ্ন খুঁজে পেলেন না৷ তা সত্ত্বেও কি ভার্চুয়াল অটোপ্সির মাধ্যমে দুর্ঘটনার কারণ জানা সম্ভব?

এবার মূল ধমনী পরীক্ষা করার পালা৷ সেটাই সঠিক পথ৷ সিটি ইমেজে ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেল৷ রক্তপাতের চিহ্ন স্পষ্ট৷ হৃৎপিণ্ডের উপরে মূল ধমনীর সীমানায় রক্তপাত হয়েছে৷ অর্থাৎ চালকের আসনে অস্বাভাবিক কিছু ঘটে নি৷ মৃত্যুর কারণ এয়র্টিক আর্চে রক্তপাত৷

ফরেনসিক প্যাথলজিস্টদের রায় অনুযায়ী এয়র্টায় ফাটলের কারণে তরুণ চালকের মৃত্যু ঘটেছে৷ সেটাই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণ৷ রক্ত অনিয়ন্ত্রিতভাবে শরীরে চলাচল করলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী৷ নতুন প্রযুক্তির কল্যাণে এমন সব জটিল রহস্য আরো দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে৷

মানুয়েলা রিশটার-ইয়েনিশ/এসবি