1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ম্যালেরিয়ার জীবাণু ধ্বংসে ছত্রাক

১৯ এপ্রিল ২০১১

আফ্রিকায় ম্যালেরিয়ায় প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একটি শিশু মারা যায়৷ বিশ্বে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা বছরে ১০ লাখের মত৷ ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে পড়ায় ম্যালেরিয়ার জীবাণুগুলিকে ধ্বংস করা সম্ভব হচ্ছেনা৷ নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির খোঁজ চলছে৷

https://p.dw.com/p/10vvs
আফ্রিকায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়ছেছবি: Ralph Ahrens

ম্যালেরিয়ার বাহক

ম্যালেরিয়ার জীবাণুর প্রয়োজন হয় দুই বাহকের৷ মানুষ ও মশা৷ সংক্রামিত মশা ছাড়া জীবাণুরা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনা৷ তাই ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে মশার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে৷ কিন্তু রাসায়নিক কীটনাশকগুলি ধীরে ধীরে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলছে৷ মশারা হয়ে পড়ছে ওষুধ প্রতিরোধী৷ মশা নিধনের জন্য গবেষকরা এখন প্রকৃতি থেকে বিকল্প কোনো উপাদান আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন৷ অ্যামেরিকার মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কীট বিশেষজ্ঞ রেমন্ড সেন্ট লেজার-এর দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে এক ধরনের ছত্রাক, যা মশা বিনাশে কাজে লাগতে পারে৷

বিজ্ঞানী রেমন্ডের ভাষায়, ‘‘মশাগুলিকে মারতে এই সব ছত্রাকের দীর্ঘ সময়ের লেগে যায়৷ এজন্য প্রচুর ছত্রাকের বীজের প্রয়োজন, যেগুলি মশার ভেতরে ঢুকে তাদের নিধন করতে পারে৷''

Stechmücke Malaria
ম্যালেরিয়াবাহী মশাছবি: picture-alliance /dpa

ছত্রাকের জিন পরিবর্তন

এই ছত্রাক মশাদের বধ করতে পারে৷ কিন্তু বেশ ধীর গতিতে৷ তাই ম্যালেরিয়ার সংক্রমণকে আয়ত্তে আনা সহজ হয়না৷ এ জন্য গবেষক রেমন্ড জেনেটিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ছত্রাকের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেন৷ জিন পরিবর্তন করা এই ছত্রাক মশাকে নয়, বরং মশার জীবাণুকে আক্রমণ করে৷

এ প্রসঙ্গে গবেষক রেমন্ড বলেন, ‘‘আমরা ছত্রাকে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক জিনটি ঢুকিয়ে দিই৷ এই ছত্রাক মশার ভেতরে ঢুকে তাকে আক্রমণ করে৷ মশাটি অনেক দিন বেঁচে থাকলেও ম্যালেরিয়ার জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়৷ বলা যায় মশাটি ম্যালেরিয়া থেকে আরোগ্য লাভ করে৷ এই ভাবে ৯০ শতাংশ জীবাণু বিনষ্ট হয়৷ এবং এই মশা থেকে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ আর হতে পারেনা৷''

কৃত্রিম জিনযুক্ত ছত্রাক এমন ভাবে প্রস্তুত করা হয়, যা মশার রক্তের সংস্পর্শে এলেই দ্রুত কাজ শুরু করে৷ অনেক দিন ধরে আক্রান্ত মশার জীবাণুরও নিস্তার নেই৷ মশাটি মানুষকে কামড়ালেও আর ক্ষতি করতে পারেনা৷ শুধু চুলকানিটাই যা সহ্য করতে হয়৷

এই ছত্রাকের ব্যবহার সম্পর্কে রেমন্ড বলেন, ‘‘এই ছত্রাক রাসায়নিক কীটনাশকের মতই ব্যবহার করা যায়৷ স্প্রে বা গন্ধের ফাঁদ পেতে৷ কালো একটি কাপড় ছত্রাকের বীজে ডুবিয়ে বাসার কোন জায়গায় ঝুলিয়ে রাখা যায়৷ মশারা এর ওপর বসলে সংক্রামিত হয়৷ মশারির ওপরেও রেখে দেয়া যায় এই ছত্রাক৷''

ছত্রাকের প্রয়োগ

Kenia Kind schäft unter Moskitonetz Malaria
কেনিয়ায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত শিশুছবি: AP

কারিগরি দিক দিয়ে এই ছত্রাক উৎপাদনে কোনো সমস্যা নেই৷ কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এর প্রয়োগের ব্যাপারে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে৷ কেনিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে এই ছত্রাকের প্রয়োগ করা হবে৷ অবশ্য জনসাধারণের কোনো সংশয় না থাকলে৷ জিন পরিবর্তন করা অর্গানিজম সম্পর্কে অনেকের মনেই দ্বিধা থাকতে পারে৷ বিজ্ঞানী রেমন্ডের মতে, ‘‘এই ছত্রাক এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়, যা প্রথমে মশা বা কীটের দেহে সক্রিয় হয় এবং ম্যালেরিয়ার জীবাণু ধ্বংস করে৷ মানুষের জন্য কোনো ঝুঁকি নেই৷''

জিন পরিবর্তন করা ছত্রাক যে বিপজ্জনক নয়, তা নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে৷ গবেষক রেমন্ড এ ক্ষেত্রে আশাবাদী৷ আপাতত রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ করেই ম্যালেরিয়াবাহী মশাগুলিকে কাবু করতে হবে৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন