1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোদীর করোনা ভাষণে দর্শক কম, ডিসলাইক বেশি

২১ অক্টোবর ২০২০

করোনা নিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে আবার ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তাঁর সেই ভাষণে ডিসলাইক পড়লো প্রচুর। অনলাইনে দর্শকের সংখ্যাও আগের থেকে অনেক কম।

https://p.dw.com/p/3kDuE
ছবি: Reuters/A. Abidi

করোনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথা শুনতে কি নিরুৎসাহ বোধ করছেন দেশের মানুষ? না হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ কেন তেমন সাড়া ফেলল না? লোকে দেখল কম। ডিসলাইক দিল বেশি। বিজেপি-র ইউটিউব চ্যানেলে লাইকের থেকে ডিসলাইক পড়লো বেশি। ফ্রি প্রেস জার্নাল, আনন্দবাজারের রিপোর্ট বলছে, ভাষণ শুরুর পরই প্রচুর ডিসলাইক পড়ছে দেখে বিজেপি চ্যানেলে লাইক, ডিসলাইকের অপশনই না কি সরিয়ে দেয়া হয়।

এই কপি লেখার সময় দেখা যাচ্ছে, বিজেপির ইউটিউব চ্যানেলে মোদীর ভাষণ দেখেছেন এক লাখ মানুষ। লাইক বা পছন্দ করেছেন তিন হাজার ৪০০ জন। ডিসলাইক করেছেন আট হাজার ১০০ জন। সরকারি প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো বা পিআইবির ইউটিউব চ্যানেলে মোদীর ভাষণ দেখেছেন ২৬ হাজার মানুষ। এখানেও লাইকের থেকে ডিসলাইক বেশি। লাইক করেছেন এক হাজার ১০০ জন, ডিসলাইক করেছেন এক হাজার ২০০ জন। পিএমও লাইভ চ্যানেলেও ছবিটা একই। এক লাখ মানুষ ভাষণ দেখেছেন। লাইক করেছেন ছয় হাজার ২০০ জন, ডিসলাইক সাত হাজার।

অথচ, আগের ছবিটা তো এরকম ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর মন কি বাতে একবার লাইকের থেকে ডিসলাইক বেশি পড়েছিল, কারণ, করোনাকালে কেন্দ্রীয় সরকার ছাত্রদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রবেশিকা পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে অনড় ছিল। সেই ক্ষোভ তখন কাজ করেছিল।

পাঁচ মাস আগের কথা। করোনা নিয়ে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ পিএমও-র চ্যানেলে দেখেছিলেন ৫৯ লাখ মানুষ। লাইক ছিল দেড় লাখ। ডিসলাইক ২৪ হাজার। তারপর ৩০ জুন প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ পিএমও চ্যানেলে দেখেছিলেন পাঁচ লাখ ১৮ হাজার ৫১১ জন। লাইক ছিল ১৪ হাজার, ডিসলাইক সাড়ে তিন হাজার। আর ছয় মাস আগে এই একই চ্যানেলে করোনা নিয়ে মোদীর জাতির উদ্দেশে ভাষণের ভিউ ছিল ৮৮ লাখ। সেখানে এ বার মাত্র ২৬ হাজার ভিউ। অন্য চ্যানেলেও আগে ভিউ-এর সংখ্যা ছিল প্রচুর। তা এখন অনেক কমে গেছে।

তা হলে কি করোনা নিয়ে মানুষ এখন আর নরেন্দ্র মোদীর কথা শুনতে উৎসাহ বোধ করছেন না? প্রধানমন্ত্রীর বিপুল জনপ্রিয়তা ও সামাজিক মাধ্যমে বিজেপি-র ব্যাপক প্রভাব সত্ত্বেও এই সংখ্যাতত্ত্ব কী সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে?

কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরি মনে করছেন, মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। বাংলাদেশও এখন ভারতকে মাথাপিছু জিডিপি ও ক্ষুধা সূচকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে। মানুষের চাকরি নেই।  অধীরের প্রশ্ন. ''ভারতের মানুষকে প্রধানমন্ত্রী আর কত ধোঁকা দেবেন? অনেক বড় বড় কথা বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল ১৮ দিন। আমাকে আপনারা ২১ দিন সময় দিন। করোনাকে থামিয়ে দেব। আজ ভারত পৃথিবীতে সংক্রমণে প্রথম সারিতে। মৃত্যু সংখ্যায় প্রথম তিনে আছে ভারত।'' অধীরের দাবি, ''সত্য কথা বলুন। মানুষকে লুকোচ্ছেন কেন?''

তৃণমূলের সাংসদ ও রাজ্যসভায় দলের চিফ হুইপ সুখেন্দু শেখর রায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''দেওয়াল লিখন স্পষ্ট। সেই লিখন মোদীর দেওয়ালেই পড়া যাচ্ছে। এর থেকে শিক্ষা নিলে ভালো। না হলে অবস্থা আরো খারাপ হবে।''

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''কিছুদিন আগে যখন মন কি বাত-এ ডিসলাইক বেশি ছিল, তখন মনে হয়ছিল, এটা কেবলমাত্র ছাত্রদের ক্ষোভ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সাধারণভাবেই মানুষের হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে।''

আর এক প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্ত মনে করেন, করোনা নিয়ে ভাষণে মানুষ সম্ভবত ক্লান্তিবোধ করছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''আমার মনে হয়, গত সাত মাস ধরে মানুষ করোনা নিয়ে ঘর করছে। আগে সব বন্ধ ছিল। এখন সবই প্রায় খুলে গেছে। মানুষ বুঝে গেছে, করোনা নিয়েই চলতে হবে। অন্তত যতদিন ভ্যাকসিন বের না হয়। সে জন্যই করোনা ঠেকাতে কী করতে হবে, তা শোনার জন্য তাঁরা উৎসাহ পাচ্ছেন না।''

জিএইচ/এসজি(ফ্রি প্রেস জার্নাল, আনন্দবাজার, ইউটিউব)