1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মেয়েদের এগিয়ে নিতে যাচ্ছে মিলেনিয়াম ভিলেজ প্রকল্প

৮ মার্চ ২০১১

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের দেওঘর জেলার সারওয়ান ব্লকে চলছে জাতিসংঘের মিলেনিয়াম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রচেষ্টা৷ দুটি এনজিও সেখানে কাজ করছে মানুষদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে৷

https://p.dw.com/p/10V49
ভারতীয় মহিলাছবি: picture-alliance/ dpa

মহিলা এবং অল্প বয়স্ক মেয়েদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে সেন্টার ফর সলিডারিটি এবং প্রভা নামক দু'টি সংস্থা৷ ববিতা সিনহা কাজ করছে এই প্রকল্পে৷ তিনি জানান, ‘‘আমরা চাইছি মহিলাদের সমানভাবে গ্রহণ করা হোক – পরিবারে এবং সমাজে৷ যদি কোন গ্রামে উন্নয়ন বিষয়ক কোন আলোচনার আয়োজন করা হয় বা গুরুত্বপূর্ণ কোন ইস্যু নিয়ে কথা হয় – আমাদের প্রশ্ন মহিলারা সেখানে থাকবে না কেন ? মহিলাদের ওখানে থাকতে হবে৷ তাঁদের কথা অন্যদের শুনতে হবে৷''

শুধু এসব ক্ষেত্রে নয় একটি মহিলার ব্যক্তিগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো একজন নারী যেন নিজেই নিতে পারে সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করছেন ববিতা সিনহা৷ মহিলাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে৷ ববিতা আরো বললেন, ‘‘তাঁদের নিজের জীবনে, তাঁদের গর্ভবতী হওয়া উচিৎ কিনা, তাঁদের কটা বাচ্চা হওয়া উচিৎ, তাঁদের পরিবার-পরিকল্পনার বিভিন্ন নীতি মেনে চলা উচিৎ কিনা – এ ধরণের সিদ্ধান্ত একজন মহিলা নিজেই নেবে৷ কার কী অধিকার রয়েছে তা জানা উচিৎ৷ আমাদের মূল যে লক্ষ্য সেটা হচ্ছে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যেমন – আমার নিজের জীবনকে আমি কীভাবে পরিচালিত করবো এবং অবশ্যই একটা গ্রামে কীভাবে অন্যান্যদের সঙ্গে নিজেকে উপস্থাপন করবো – তা প্রতিটি মহিলাকেই জানতে হবে৷''

Sawan in Patna
ছবি: UNI

নিজেকে স্বাবলম্বী করা বা আশেপাশের মানুষদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করা – সে বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে৷ মহিলারা নিজেদেরই আর্থিকভাবে সাহায্য করছে৷ ববিতা সিনহা বললেন, ‘‘সেল্ফ-হেল্প গ্রুপ হচ্ছে একটা ছোট গ্রুপ যেখানে ১২ থেকে ১৩ জন মহিলা একটি গ্রুপ তৈরি করেন৷ সেই দলের কিছু নিয়ম আছে – যেখানে তাঁদেরকে প্রতি মাসে মিটিং করতেই হবে৷ তাঁদেরকে খুব অল্প পরিমাণে টাকা প্রতি মাসে জমা করতে হবে৷ সেটা দশ বা কুড়ি টাকা হতে পারে, তবে কত টাকা জমা করতে হবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে গ্রুপ৷ এই গ্রুপ তৈরির পেছনে আমাদের একটি উদ্দেশ্য ছিল৷ আসলে সেখানে মহাজনদের যথেষ্ঠ প্রভাব ছিল৷ মহাজনরাই সব টাকা এসব দরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে নিয়ে নিত৷ যদি কোনো মহিলার একশো, পাঁচশো বা এক হাজার টাকার প্রয়োজন হত, তাঁরা চলে যেতেন মহাজনের কাছে৷ এবং সবসময়ই কিছু না কিছু বন্ধক দিয়ে টাকা নিয়ে আসতেন৷ এর ফলে সারাক্ষণই একটি আর্থিক বোঝা ওঁদের কাঁধে থাকতো৷ এখন ওঁদের নিজেদেরই একটা ব্যাঙ্ক রয়েছে৷ যেখান থেকে প্রয়োজনে ওঁরা টাকা তুলে নিচ্ছেন৷ মহাজনের কাছে যাওয়ার আর প্রয়োজন হচ্ছে না৷''

অর্থাৎ মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়া বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ কথা সত্যি, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া মানে সত্যিকার অর্থেই অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া৷ এখন মহিলাদের নিজেদের একটি ছোট্ট ব্যাংক রয়েছে৷ প্রয়োজনে সেখান থেকেই তাঁরা অর্থ সংগ্রহ করেন৷ এই ব্যাংকটি চলে স্থানীয় মহিলাদের নিজস্ব নিয়ম-নীতিতে৷ হয়তো কারোর মেয়ের বিয়ের জন্য বা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ল৷ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি অথবা চিকিৎসার জন্য ওষুধ কেনা প্রয়োজন – এ'সব ক্ষেত্রে টাকার দরকার৷ অথবা বাচ্চাদের স্কুলের বই-খাতা কেনার জন্য টাকার প্রয়োজন৷ এই খরচগুলো উঠে আসছে এই ব্যাংক থেকে৷ মহাজনের কাছে আর যাওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না৷

এর পাশাপাশি রয়েছে মেয়েদের স্কুলে ফেরত পাঠানোর কর্মসূচি৷ যেসব মেয়েরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর আর স্কুলে যায়নি, তাদের পড়াশোনায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে৷ ববিতা সিনহা জানালেন কীভাবে তাঁরা সাহায্য করতে চাচ্ছেন৷ ববিতার কথায়, ‘‘দেখা গেছে অনেক গ্রামে বিশেষ করে যেখানে আমরা কাজ করছি, সেখানে ক্লাস ফাইভের পর মেয়েরা আর স্কুলে যাচ্ছে না৷ সেখানে মেয়েদের ড্রপ-আউট সবচেয়ে বেশি৷ এটা মেনে চলা হয় যে, মেয়ে যদি শুধুমাত্র চিঠি পড়তে পারে বা মেয়ে শুধু যদি অক্ষর চিনতে পারে – সেটাই যথেষ্ঠ৷ পড়াশোনা প্রচুর হয়ে গেছে এবার বাড়িতে থাকো৷ আমরা চেষ্টা করছি যে সব ড্রপ-আউট মেয়ে আছে, এদের আলাদাভাবে ক্লাসের ব্যাবস্থা করতে৷ যে বিশাল ব্যবধান বা গ্যাপ হয়েছে পড়াশোনায় – তা পূরণ করার চেষ্টা করছি আমরা৷ যেমন যে ক্লাস ফাইভে পড়াশোনা ছেড়ে দিল, এখন যা বয়স তাতে তার ক্লাস নাইনে পড়ার কথা৷ এই চার বছরের গ্যাপ আমরা কোচিং দিয়ে পূরণের চেষ্টা করি৷ একে আমরা বলছি ব্রিচিং গ্যাপ৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন