মেসি’র ম্যাজিক, ফুটবলের জন্মক্ষণ
১৩ জুন ২০১০সরকারি কর্মচারিদের ওয়ার্ক-টু-রুল'এর মতো খেলল গ্রিসের প্রবীণ খেলোয়াড়রা৷ এশিয়ার তরতাজা, অসম্ভব রকম এ্যাথলেটিক এবং দমসম্পন্ন, উচ্চাকাঙ্খায় ভরপুর ফুটবলাররা যেন তাদের উড়িয়ে নিয়ে গেল৷ কোথায় গ্রিকদের শারীরিক উচ্চতা, ওজন এবং শক্তি, কিছুতেই কিছু হল না৷ বল পায়ে এলেই তিন দিক থেকে তিনজন দক্ষিণ কোরীয় প্লেয়ার এসে ছোঁ মারে৷ কিম, পার্ক এবং লি গোত্রীয় নামধারী এই খেলোয়াড়রা কি সকলেই ১০০ মিটার দৌড়ে ওস্তাদ? ভেবেছে কারাগুনিস, আরিস্টেয়াস এ্যান্ড কোম্পানি৷ পার্ক চু-ইয়ুং'এর দ্বিতীয় গোলটির পরে গ্রিক দলে কিছুটা জীবনের সাড়া পাওয়া যায় বটে, কিন্তু তা বড় দেরীতে৷
আর প্রথম খেলার বিস্বাদ ভাবটা ভুলিয়ে দেবার জন্যে ছিল দ্বিতীয় খেলা: নাইজিরিয়া বনাম আর্জেন্টিনা৷ লাইনের ওপারে ধুর্ত শৃগাল মারাদোনা, মাঠে তাঁর মানসপুত্র লিওনেল মেসি৷ ছ'মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে তোল্লা বলে ডিফেন্ডার গাব্রিয়েল হাইঞ্জে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করে৷ মজার কথা: এর পর মারাদোনার ভাবভঙ্গি দেখেই বোঝা গেছে যে, কর্নার, পজিশন এবং হেড করে গোল, এ' সবই দলকে আগে থেকে প্র্যাকটিস করিয়েছেন কোচ মারাদোনা৷ কিন্তু গোলের আগে ও পরে মাঠ, মন এবং টেলিভিশনের পর্দা জুড়ে থাকে মেসির ম্যাজিক৷
একটাও গোল না করে এক মাঠ দর্শককে মুগ্ধ করে রাখার কথা ভাবতে পারেন? মেসি তাই করেছেন৷ মারাদোনা তাঁকে একরকম ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছেন: তোমার যা প্রাণ চায়, তা'ই করো৷ শিল্পীকে শিল্পের স্বাধীনতা৷ মেসি'র দু'পাশে রেখেছেন গঞ্জালো ইগুয়াইন এবং কার্লোস টেভেজ'এর মতো আশ্চর্য খেলোয়াড়দের, অন্য যে কোন দেশ যাদের মেসি বাদ দিয়ে পেলেও বর্তে যেতো৷ পৃথিবীর মানুষ কিন্তু তখন দেখছে ফুটবলের জন্মক্ষণ৷ ছোট্ট মানুষটি দৌড়য় ছোট ছোট, ক্ষিপ্র পদক্ষেপে, মুহূর্তের মধ্যে ব্যাক পাস কিংবা ডাবল পাস, সে যে কোথায় আছে কিংবা নেই, সেটা বোঝা মুশকিল৷ বল রিসিভিং, ড্রিবলিং, বাঁ পায়ের ঘোরানো শট, সবই মুহূর্তের মধ্যে৷
ও হ্যাঁ, ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছেন কিন্তু নাইজিরিয়ার গোলকীপার ভিনসেন্ট ইনিয়ামা, যিনি অনবদ্য খেলে মেসি'র অন্তত চারটি সম্ভাব্য গোল রুখে দিয়েছেন৷ স্বয়ং মেসি ইনিয়ামার পারফর্মেন্স'কে বলেছেন ‘‘ফেনোমেনাল''৷
অপরদিকে, সব সন্দেহ, তর্ক-বিতর্কের অন্ত ঘটিয়ে লিওনেল মেসি প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, আর্জেন্টিনার ভার একা বওয়ার মতো কাঁধ, মাথা, পা এবং ক্ষমতা তাঁর আছে৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই