মুদ্রাস্ফীতি বাগে আনতে হিমশিম খাচ্ছে মনমোহন সিং সরকার
১১ জানুয়ারি ২০১১ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি৷ ইতিমধ্যেই তা ১৮% ছাড়িয়ে গেছে৷ বিশেষ করে পেঁয়াজ, দুধ, ফল, শাকসব্জি, ডিম ও মাংসের মতো খাদ্য সামগ্রীর৷ জোগানের স্বল্পতার কারণে পেঁয়াজের খুচরো দাম দেশের সব জায়গায় এখন ৫৫-৬০ টাকা কিলো৷ নতুন পোঁয়াজ বাজারে এলেও দামের তারতম্য হয়নি৷ তাই মূল্যবৃদ্ধির রাশ টানতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার৷ তার ওপর মজুতদারদের গুদামে আয়কর হানা, আমদানি শুল্ক হ্রাস, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মূদ্রানীতি সত্বেও দাম কমার লক্ষণ নেই৷ জরুরি আরো কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, তাই নিয়ে আলোচনা করতে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং আজ তাঁর বাসভবনে ডাকেন এক উচ্চপর্য়ায়ের বৈঠক৷ যাতে যোগ দেন অর্থমন্ত্রী, খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং অন্যান্যরা৷
দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রতন খাসনবিশ ডয়চে ভেলেকে বলেন, মূল কারণ জোগানের স্বল্পতা৷ তবে শুধু জোগানের স্বল্পতায় এই রকম মূদ্রাস্ফীতি হবার কথা নয়৷ আসলে খোলা বাজার অর্থনীতিতে সরকারের হস্তক্ষেপ নেই৷ যেমন পেঁয়াজের জোগান কম ছিল৷ কিন্তু সরকার যদি নাসিকের ব্যবসায়ীদের যথেচ্ছভাবে মজুত করার সুযোগ না দিতেন, তাহলে পেঁয়াজের দাম এতটা বাড়তোনা৷ স্বল্পতাকে কাজে লাগিয়ে মজুতদাররা দু'দিনেই কয়েকশো কোটি টাকার লেনদেন করেছে৷ এতে বোঝা যায়, মজুতদার ও রাজনীতিকদের মধ্যে আছে এক অশুভ আঁতাত৷ তাই সরকারের যা করা উচিত তাহলো, মজুত উদ্ধারের কড়া আইন৷ আগেকার আইনে রাজ্য সরকারগুলি কিছু করতে পারতো৷ কিন্তু এখন আন্তঃরাজ্য পণ্য চলাচল অবাধ হওয়ার ফলে, কলকাতায় মজুতদারদের ধরার আগেই তারা মাল পাচার করে দেয় অন্য রাজ্যে৷ তাই মজুত উদ্ধারে সব রাজ্যকে একযোগে অভিযান চালাতে হবে, তা নাহলে কিছু হবেনা৷ অধ্যাপক খাসনবিশ বলেন, উন্নত দেশগুলিতে সরকার অত্যাবশ্যক জিনিসপত্রের দামের ওপর নজর রাখে৷ এমন কী, তৃতীয় বিশ্বের শ্রীলঙ্কাও এটা করে থাকে৷
অন্যদিকে, খাদ্যদ্রব্যের দামবৃদ্ধি এক রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে৷ যেমন, মুদ্রাস্ফীতি ৬% ছাড়াতে ৯০'এর দশকে গদি ছাড়তে হয়েছিল পি.ভি নরসিমহা রাও'এর কংগ্রেস সরকারকে৷ মূদ্রাস্ফীতি ৮% পেরিয়ে গেলে ২০০৪-এ ধরাশায়ী হতে হয়েছিল বিজেপি জোট সরকারকে৷ বছর খানেকের মধ্যে ভারতের ৮-৯টি রাজ্যে ভোট৷ তাই এখন থেকেই মনমোহন সিং সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর মুদ্রাস্ফীতিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করে ময়দানে নেমে পড়েছে বিজেপি৷
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুনদিল্লি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ