মুকুলের সোনার কেল্লা
থর মরুভূমির পাশে তৈরি রাজস্থানের সবচেয়ে পুরনো কেল্লাগুলির অন্যতম জয়সালমেরের সোনার কেল্লা। মুকুল যাকে বিখ্যাত করে দিয়েছে।
ইতিহাসের কেল্লা
রাজপুত রাজা রাওয়াল জয়সাল ১১৫৬ সালে জয়সালমের কেল্লা তৈরি করতে শুরু করেছিলেন। তার নাম থেকেই এই জায়গার নাম হয়েছে জয়সালমের। কেল্লার নাম জয়সালমের কেল্লা।
সোনালি পাথরের কেল্লা
মরুভূমি অঞ্চলে যে বালিপাথর পাওয়া যায়, তার রং সোনালি। সামান্য রোদ পড়লেই তা ঝলমল করে ওঠে। সেই পাথর দিয়েই তৈরি জয়সালমের কেল্লা। পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায় তার গল্পে এবং ছবিতে যার নাম দেন সোনার কেল্লা।
সেই থেকে বিখ্যাত
সত্যজিৎ রায় সোনার কেল্লা ছবি বানানোর পর রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় এই প্রান্তিক কেল্লা। হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক এই কেল্লা দেখতে আসেন। গোটা রাজস্থানই পর্যটনের জন্য বিখ্যাত। পর্যটকদের একটি বড় অংশের আকর্ষণ এই জয়সালমের কেল্লা।
এখনো মানুষ থাকেন
ভারতে খুব কম কেল্লাতেই এখন মানুষ বসবাস করেন। ঐতিহাসিক প্রামাণ্য হিসেবেই বেশিরভাগ কেল্লাকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। জয়সালমের কেল্লায় এখনো প্রায় দুই হাজার মানুষ থাকেন। তারাই কেল্লার রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
মুকুলের বাড়ি
সোনার কেল্লা ছবিতে এই বাড়িটিকেই মুকুলের বাড়ি হিসেবে দেখানো হয়েছিল। বাড়িটি কয়েকবছর আগে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। কিন্তু কেল্লার গাইডরা এখনো দর্শকদের এখানে নিয়ে আসেন মুকুলের বাড়ি দেখানোর জন্য।
রাজার সিংহাসন
এখনো এই সিংহাসনে রাজার অভিষেক হয়। বর্তমান রাজার বয়স মাত্র ২৫ বছর। ভারতে রাজতন্ত্র এবং জমিদারপ্রথা এখন আর আইনত বৈধ নয়। কিন্তু রাজপুতরা এখনো তাদের রাজাদের গুরুত্ব দেন। রাজ পরিবারেও তাই রাজ্যাভিষেকের প্রথা চালু আছে।
রাজার বাড়ি
কেল্লার ভিতর এটাই রাজার বাড়ি। সামনের চাতালে এখনো হোলি, দীপাবলির মতো উৎসব হয়। রাজা উপস্থিত থাকেন সেই সমস্ত উৎসবে।
কেল্লার ভিতর মন্দির
কেল্লার ভিতর আছে বেশ কয়েকটি মন্দির। সোনার কেল্লা ছবিতে এই মন্দিরটি দেখানো হয়েছিল। মুকুল বলেছিল, এর পাশে গিরিধারীর বাড়ি। বাস্তবেও এই মন্দিরের পাশে গিরিধারী পরিবারের বাস।
কেল্লার দোকান
কেল্লার ভিতর আছে অসংখ্য দোকান। খাবারের পাশাপাশি সেখানে বিক্রি হয় রাজস্থানী হস্তশিল্প। কেল্লার দেওয়ালের পাশে বসে গান করেন লোকশিল্পীরা।
আছে হোটেল
কেল্লার ভিতর বেশ কয়েকটি হোটেল এবং হোম স্টে আছে। জয়সালমের বেড়াতে এলে ফোর্টের এই হোটেলে অবশ্যই থাকা উচিত।
রাজ-নিশান
এখনো রাজপুতদের নিজস্ব রাজ-পতাকা আছে। প্রতিটি কেল্লায় সেই পতাকা দেখতে পাওয়া যায়। জয়সালমের কেল্লার উপর উড়ছে জয়সাল রাজাদের পতাকা।
সোনালি শহর
শুধু ফোর্ট নয়, জয়সালমেরের প্রায় প্রতিটি বাড়িই সোনালি পাথরে তৈরি। ভোরবেলা এবং সূর্যাস্তের সময় গোটা শহর কার্যত সোনার মতো চকচক করে।
সোনার পাথরবাটি
লালমোহনবাবুর সোনার পাথরবাটি। স্থানীয় মানুষদের দাবি, একসময় এই মরুভূমি অঞ্চলে সাগর ছিল। পরে তা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যায়। সোনালি পাথরের উৎপত্তি সেখান থেকেই। এখনো এই পাথরের ভিতর সামুদ্রিক প্রাণির ফসিল পাওয়া যায়। এই ধরনের পাথরের থালা-বাটিতে খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
পর্যটনই পেশা
জয়সালমের অঞ্চলের মানুষের প্রধান এবং মুখ্য কাজ পর্যটন ব্যবসা। শহরের প্রায় প্রত্যেকে কথায় কথায় সত্যজিৎ রায়ের নাম বলেন। তাদের দাবি, একটা সিনেমা গোটা শহরের জীবন বদলে দিয়েছে।
সামান্য দূরে মরুভূমি
মরুভূমির ভিতরেই তৈরি জয়সালমের কেল্লা। তবে বালির পাহাড় দেখতে হলে যেতে হবে ৪০ কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে পাকিস্তান সীমান্ত আরো ১০০ কিলোমিটার। মরুভূমির উপরেই তৈরি হয়েছে সীমান্ত।