1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিথিলাকে ‘ভার্চুয়াল ধর্ষণ’ বন্ধ হোক

৬ নভেম্বর ২০১৯

ফেসবুকে গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে ভাসছে কিছু ছবি৷ কেউ সেসব ছবি শেয়ার করছেন, কেউবা তা প্রকাশের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ একজন অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত ছবি নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্যের প্রতিবাদের মধ্যে আশার আলো দেখছি আমি৷

https://p.dw.com/p/3SYM6
মিথিলা (ফাইল ছবি)ছবি: Sazzad hossain

মাঝেমধ্যেই পত্রিকার পাতায় খবর দেখি, অমুক এলাকায় তমুককে ধর্ষণ, ভিডিও প্রকাশের হুমকি৷ অর্থাৎ ধর্ষক শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার সেই বীভৎস অপরাধের ভিডিও করে রেখেছেন৷ আর হুমকি দিয়েছেন, যদি ধর্ষণের কথা সেই নারী প্রকাশ করেন, তাহলে তার ভিডিও প্রকাশ করে দেবেন৷

গণমাধ্যমে এরকম কিছু ঘটনার কথা মাঝেমাঝে প্রকাশ পায়৷ তবে, ধারণা করি অনেক নারী হয়ত নিজের একান্ত গোপন মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও প্রকাশ হওয়ার ভয়ে চুপ করে থাকার পথই বেছে নেন৷ আর সেই চুপ করে থাকার সুযোগ নিয়ে তাদের শারীরিক-মানসিক ধর্ষণ করা হয়৷

নারীদের এই যে গোপন ছবি-ভিডিও প্রকাশ হওয়ার ভয়, এই ভয় কাটানো জরুরি বলে আমি মনে করি৷ কেননা এই ভয় শুধু ধর্ষণের মতো ঘটনাকে আড়াল করতে নয়, সামাজিকভাবে নারীকে নানাভাবে হেয় করার মতো কাজেও ব্যবহারের চেষ্টা রয়েছে৷ নারীকে দাবিয়ে রাখার এক উপায় হয়ে উঠেছে এটি৷

তাই নারীর মন থেকে এই অহেতুক ভয় দূর করাটা জরুরি৷ আর এক্ষেত্রে এক চমৎকার উদাহরণ হতে পারে অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ও তাঁর এক প্রাক্তন ছেলেবন্ধুর প্রকাশিত ব্যক্তিগত ছবিগুলো৷ বর্তমান যুগে দু'জন প্রেমিক-প্রেমিকা হরহামেশা যেসব ছবি তোলেন, এগুলোও সেরকমই ছবি৷ যে যেভাবেই হোক, অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এবং প্রচলিত আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে ছবিগুলো প্রকাশ করে দিয়েছেন৷ আর তাই নিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে বিপুল বির্তক৷  

ফেসবুকে আমি দেখেছি অনেকে সেসব ছবি প্রকাশের মাধ্যমে এক ধরনের বিকৃত আনন্দ নেয়ার চেষ্টা করছেন৷ কেউ কেউ আবার মিথিলার এই সম্পর্ককে ‘অবৈধ, অনৈতিক, অসামাজিক’ ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে নিন্দা করছেন৷ ভাবখানা এমন তারা বুঝি সমাজের বড় বড় রক্ষক৷ অথচ তাদের অনেকের ফেসবুক প্রোফাইল একটু ঘাটলেই দেখা যাবে এমন সব ফেসবুক পাতা, গ্রুপে তাদের বিচরণ, যার সঙ্গে তাদের এই রক্ষকের ভূমিকা একেবারেই বেমানান৷

যাক সেকথা, মিথিলা বিতর্কের ইতিবাচক দিকটাতে আসি এবার৷ ফেসবুকে গত দু'দিনে আমার বন্ধুতালিকার অনেককে মিথিলার পাশে দাঁড়াতে দেখেছি৷ এক তরুণীতো রীতিমত ফেসবুক লাইভে এসে জানতে চেয়েছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী তাঁর ব্যক্তিজীবনে কী করবেন, কার সঙ্গে দেখা করবেন, কার সঙ্গে থাকবেন, তাতে অন্যের কী!

আমি এই তরুণীর সঙ্গে পুরোপুরি একমত৷ একমত তাঁর মতো আরো অসংখ্য মানুষের সঙ্গে যারা মনে করেন মিথিলার ব্যক্তিগত ছবি তাঁর সম্মতি ছাড়া প্রকাশের মাধ্যমে চরম অন্যায় করা হয়েছে৷ এটা একজন ব্যক্তির গোপনীয়তার চরম লঙ্ঘন৷

Arafatul Islam Kommentarbild App
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে

জার্মানিতে দেখেছে ব্যক্তির গোপনীয়তা অত্যন্ত কঠোরভাবে রক্ষা করা হয়৷ এদেশে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিসরের ছবি তার অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা গুরুতর অপরাধ৷ একজন চিকিৎসক তাঁর রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য বিনা অনুমতিতে তৃতীয় কারো সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন না৷ গণমাধ্যম চাইলেই সন্দেহভাজন কোন ব্যক্তির ছবি প্রকাশ করতে পারেনা৷ এমনকি নিরাপত্তার খাতিরে যেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো আছে, সেখানে সেসংক্রান্ত নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়া বাধ্যতামূলক৷ এদেশের আদালতে অনেক সময় গোপনে ধারণ করা ভিডিও কোন ঘটনার প্রমাণ হিসেবে আমলে নেননা, যদি সেটা অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তিগত পরিসরে ধারণ করা হয়ে থাকে৷

আমাদের সমাজে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার এসব ব্যাপার এখনো আসলে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি৷ এই সংক্রান্ত জ্ঞানের ঘাটতি আছে সাধারণ মানুষের মধ্যে৷ তবে, ব্যক্তিগত ছবি নিয়ে মিথিলার সঙ্গে যা করা হয়েছে, সেসব ঠেকানোর আইন রয়েছে৷ আশার কথা হচ্ছে, এই অভিনেত্রী আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন৷ ফেসবুকে তাঁর ছবি নিয়ে যে নোংরামি চলছে তাকে তিনি তুলনা করেছেন ‘ভার্চুয়াল ধর্ষণের’ সঙ্গে, আর সেই ধর্ষণের বিচার দাবি করেছেন তিনি৷

আমি মনে করি, গোপন ছবি প্রকাশের ‘ভয়ে’ কুঁকড়ে না গিয়ে মিথিলার এই প্রতিবাদ আরো অনেক নারীকে সাহসী করে তুলবে৷ তারা বুঝবে সামান্য কয়েকটি ছবি একজন মানুষের পরিচয়, সামাজিক মর্যাদা ঠিক করে দেয় না৷ বরং নারীর এই অহেতুক ভয় যতই কেটে যাবে, নারী স্বাধীনতার পথ ততই প্রশস্ত হবে৷