1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মা-বাবার যৌনতা শিক্ষা

মোঃ সেলিম হোসেন
১৫ জানুয়ারি ২০২১

আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের সেক্স এডুকেশনের কথা বিগত কয়েক বছর ধরে বেশ আলোচনা করছি৷ আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় কি ভাবে সেক্স এডুকেশন সংযুক্ত করা যায় সেই বিষয়টাও আলোচনায় এসেছে৷

https://p.dw.com/p/3nx9a
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

অব্যাহত আলোচনা সমালোচনার জেরে আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলতাও পেয়েছি৷ পরিষ্কারভাবে এই দিকটি আমাদের আশার আলো দেখায়৷ আমরা আশাবাদী যে পরিবর্তন আসবে৷ কিন্তু এই ধারাবাহিকতায় আমরা নতুন আরেকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি৷ আর তা হচ্ছে আমাদের প্যারেন্টদের সেক্স এডুকেশন৷ যদিও আমরা এখন আর বিষয়টাকে যৌন শিক্ষা হিসেবে দেখছি না৷ বৃহৎ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আমরা এখন কম্প্রিহেনসিভ সেক্স্যুয়ালিটি এডুকেশনের কথা বলছি৷ যেখানে সেক্স্যুয়ালিটি বা যৌনতা সম্পর্কে কগনিটিভ, ইমোশনাল, ফিজিকাল ও সামাজিক দিকগুলোকে কারিকুলাম ভিত্তিক শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি দেখা হয়৷

প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা এখনও পরিবারের কাছ থেকেই সেক্স্যুয়ালিটি এডুকেশন পেয়ে থাকি৷ সচেতনভাবে হোক আর অবচেতনভাবেই৷ সেক্ষেত্রে আমাদের বাবা-মা প্রাথমিক এজেন্ট হিসেবে আমাদের এই শিক্ষা দিয়ে থাকেন৷ দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের বাবা-মা’দের এই বিষয়ে যেহেতু তেমন কোন আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাই তারাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রচলিত মিথ বা প্রচলিত সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় শিক্ষা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকেন৷ আমাদের প্যারেন্টদের নিকটই অনেক প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার নয়৷ বাচ্চা যখন মা বাবাকে প্রশ্ন করে ‘আমি কিভাবে হয়েছি?' বা ‘বাচ্চা কিভাবে হয়?' তখন মা বাবা রূপকথার গল্পের মত করে উত্তর দেয়৷ তার মানে মা বাবা নিজেরাই এই বিষয়গুলো কিভাবে সন্তানের সামনে প্রেজেন্ট করবেন বা কিভাবে এইসকল প্রশ্নের উত্তর দেবেন সেটা নিয়ে পরিষ্কার নন৷ বেশিরভাগ সময়েই তারা বিষয়গুলোকে তাদের অজ্ঞতা বা অক্ষমতার কারণে এভোয়েড করে যান৷ অথচ শিশুকে সঠিক বয়সে সঠিক যৌন শিক্ষা না দিলে তারা যেমন নানবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন তেমনি শিশুরাও শিশুরাও যৌন নিগ্রহের স্বীকার হতে পারে৷ আমরা যদি শিশু কিশোরদের তাদের বয়সভিত্তিক যৌনতা শিক্ষা পরিবার থেকেই প্যারেন্টদের মাধ্যমে শুরু করতে পারি তাহলে সেটা শিশু কিশোরদের যৌনতা এবং প্রজনন শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে৷

Selim Hossain Dhaka Universität
মোঃ সেলিম হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ছবি: Private

যেমন ধরুন, ১-২ বছরের বাচ্চাদের যদি আমরা তাদের সব অঙ্গের সঠিক নাম শেখাই তখন অবশ্যই তার যৌনাঙ্গের নামও শেখানো আবশ্যক৷ আমরা প্যারেন্টরা অনেক সময় যৌনাঙ্গের ক্ষেত্রে ছদ্মনাম ব্যবহার করে থাকি৷ যা একদমই করা উচিৎ নয়৷ এক্ষেত্রে প্রয়োজনে মেডিক্যাল টার্ম ব্যবহার করতে পারি৷ আবার, ২-৫ বছর বয়সী শিশুরা দেখা যায় তাদের যৌনাঙ্গ নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠে৷ এসময় তারা তাদের জন্মের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠে এবং প্রশ্ন করে৷ প্যারেন্টদের উচিৎ এসময়ে সন্তান জন্ম দেয়ার সহজ ব্যাখ্যা দেয়া৷ বলা যেতে পারে যে বাবা মায়ের ভালোবাসায়  সন্তান হয়৷ মায়ের গর্ভে সন্তান ধীরে ধীরে বাবা মায়ের প্রচেষ্টায় বড় হয় এবং পরবর্তিতে মায়ের প্রজনন অঙ্গের মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ হয়৷ এছাড়াও দেখা যায় এসময় বাচ্চারা উলঙ্গ থাকার সময় নিজেদের যৌনাঙ্গ নাড়াচাড়া করে এবং অন্যের যৌনাঙ্গে হাত দিয়ে পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করে৷ এসময় আমরা প্যারেন্টরা অনেক সময় তাদের ধমক দেই৷ অথচ এসকল ক্ষেত্রে ধমক দিলে তার নিজের শরীরের প্রতি বিরূপ ধারণা জন্মায়৷ এর পরিবর্তে আমরা একান্তে তার সাথে আলোচনা করতে পারি৷ তার শরীর যে তার একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ সেটা তাদের বোঝানো যেতে পারে৷ শরীরের কিছু স্থান যে তাদের একান্ত ব্যক্তিগত যা অন্যদের দেখাতে হয় না সেটা বোঝানো যেতে পারে৷ নিজের ব্যক্তিগত অঙ্গে স্পর্শ করা বা হাত দেয়া যে অন্যায় বা লজ্জাজনক নয় সেটা তাদের বোঝানো যেতে পারে৷ তবে অন্যের সামনে এরকম করাটা যে অশোভন সেটাও সাথে সাথে তাকে শেখাতে হবে৷ অন্য কেউ এমন কি পরিবারের কেউও যদি তার ব্যক্তিগত স্থানে স্পর্শ করে বা করতে জোর করে তাহলে তারা যেন অবশ্যই মা বাবাকে জানায় সেটা তাদের জানান৷ কোনটা ভালো স্পর্শ এবং কোনটা খারাপ স্পর্শ সে বিষয় সম্পর্কে তাদের সাথে একান্তে আলোচনা করুন৷

এর পরের ধাপে শিশুরা যেহেতু জেন্ডার রোল বুঝতে শুরু করে তাই এসময় তাদের নারী-পুরুষের সমান অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা যেতে পারে৷ তারা এসময়ে অনেক প্রশ্ন করতে পারে যা প্যারেন্টদের অপ্রস্তুত করে ফেলতে পারে৷ বিব্রতবোধ করলে সময় নিন৷ তারপর প্রস্তুতি নিয়ে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া যেতে পারে৷ যেহেতু এরপরের ধাপেই তারা বয়ঃসন্ধিকালে প্রবেশ করে তাই এসময় তাদের শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেয়া যেতে পারে৷ শারীরিক পরিবর্তনের সাথে কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে সে ব্যাপারে তাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন৷ যৌন মিলন, মাস্টারবেশন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে এ বয়সী শিশু কিশোররা প্রশ্ন করতে পারে৷ এসকল প্রশ্নের বয়সোপযোগী উত্তর দিন৷ প্রয়োজনে সময় নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে তারপর উত্তর দিন৷ কিন্তু তার প্রশ্নকে এভোয়েড করে যাবেন না বা ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দিবেন না৷ তাতে সে ভুল মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে যেয়ে নিজের জন্য অবচেতনভাবে বিপদ ডেকে আনতে পারে৷

এরকম প্রতিটি বয়সের স্তরের জন্যই যৌনতা শিক্ষার যথাযথ গাইডলাইন আমাদের প্যারেন্টদের জানা অত্যাবশ্যকীয়৷ এর মাধ্যমে আমরা আমাদের সন্তানদেরকে যেমন যৌনতা সম্পর্কে সচেতন করতে পারব তেমনি তাদেরকে যৌন নিগ্রহ থেকে বাচাতে পারব৷ প্রাথমিকভাবে এই দায়িত্ব কিন্তু আমাদের প্যারেন্টদেরই নিতে হবে৷

তাই সেক্সুয়ালিটি বা যৌনতা এডুকেশন শুধু যে শিশু কিশোরদের প্রয়োজন তা কিন্তু নয়৷ তার সাথে সাথে এই শিক্ষা আমাদের মা বাবাদেরও নেয়া প্রয়োজন৷ জেণ্ডার আইডেন্টিটি, জেণ্ডার রোল, জেণ্ডার, সেক্স, সেন্স্যুয়ালিটি, জেণ্ডার বৈচিত্র্য ইত্যাদি বিষয়গুলো যে আলাদা আলাদা মিনিং ক্যারি করে সে বিষয়গুলো প্রাথমিক এজেন্ট হিসেবে আগে মা বাবার জানা প্রয়োজন৷ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কনসেন্ট বা সম্মতি যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সেই বিষয়টাও কিন্তু প্রাথমিকভাবে মা বাবার কাছ থেকেই আসতে হবে৷ সেই সাথে সাথে আমাদের পূর্ববর্তি মিথ এবং ধ্যান ধারণা থেকে বের হয়ে সময়োপযোগী তথ্যের মাধ্যমে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে সন্তানের এসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকতে হবে৷

মোঃ সেলিম হোসেন সহকারী অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়