মাসদার চলবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে
১৫ অক্টোবর ২০১০আবুধাবি৷ মধ্যপ্রাচ্যের এই শহরটি বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক শহর হিসেবে পরিচিত৷ এই শহরের কাছেই গড়ে তোলা হচ্ছে ছোট্ট আরেকটি শহর যার নাম ‘মাসদার'৷ আরবি এই শব্দের অর্থ উৎস৷ অনেকের জন্যই ভবিষ্যতে প্রেরণার উৎস হতে যাচ্ছে এই শহর৷ কারণ এটিই হতে যাচ্ছে বিশ্বের প্রথম শহর যার জ্বালানি সরবরাহ আসবে শুধুমাত্র নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে৷ ছয় বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট এই শহরটির বাসিন্দা হবেন প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ৷
ইতিমধ্যে শহর গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ প্রথম পর্যায়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির কাজ শেষ হয়েছে৷ যার নাম ‘মাসদার ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি'৷ এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরেই শহরটি গড়ে উঠবে৷ যেনতেন কোনো প্রতিষ্ঠান নয় এটি৷ এর মূল লক্ষ্যই হলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷
মাসদার ইনস্টিটিউটের শিক্ষা কার্যক্রম অবশ্য শুরু হয়েছে গত বছর৷ প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বের হবেন আগামী বছর৷ এসব পুরনো খবর৷ নতুন খবর হলো, সম্প্রতি প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস শুরু করেছেন তাঁদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে৷ অর্থাৎ মাসদার ইনস্টিটিউটের নিজস্ব ভবনে৷ যেটা পুরোপুরিভাবেই চলছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি দ্বারা৷ এক হিসেবে এই শিক্ষার্থীরা ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন৷ কারণ বিশ্বের প্রথম নবায়নযোগ্য জ্বালানির শহরের প্রথম বাসিন্দা যে তাঁরাই!
মাসদার ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭০৷ এর মধ্যে একশো'রও বেশি শিক্ষার্থী বাস করছেন মাসদার শহরে তাঁদের জন্য গড়ে তোলা হোস্টেলে৷ এই হোস্টেলের ছাদে জ্বালানি সরবরাহের জন্য বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল৷ আর ক্লাসরুম ও গবেষণাগারগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন জ্বালানি ব্যবহার কম হয়৷ এছাড়া ইন্সটিটিউটের ‘নলেজ সেন্টার' যেখানে লাইব্রেরি অবস্থিত সেই ভবনের ছাদেও রয়েছে সোলার প্যানেল৷ এই ভবনের সামনের অংশ দেখলে মনে হবে পুরোটাই তৈরি হয়েছে অনেকগুলো জানালা দিয়ে৷ এই জানালাগুলো সূর্যের আলো থেকে তাপ সরিয়ে নিয়ে শুধু রশ্মিটা ভেতরে পাঠায়৷ ফলে ভবনের ভেতরটা থাকে শীতল এবং আলোকিত৷
কেন্দ্রীয়ভাবে পুরো ক্যাম্পাসকে বাসযোগ্য রাখার জন্য ক্যাম্পাসের মাঝখানে বসানো হয়েছে একটি ‘উইন্ড টাওয়ার'৷ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এই টাওয়ার সব জায়গাতেই দেখা যায়৷ এর কাজ হলো ভবনের মধ্যে বাতাস চলাচলের পথ তৈরি করা৷ এমনই একটি টাওয়ার বসানো হয়েছে ক্যাম্পাসে৷ যার কাজ বাতাস ধরে রাস্তায় ছড়িয়ে দেয়া৷ ফলে শীতল থাকে পুরো ক্যাম্পাস এলাকা৷
‘আবুধাবি ফিউচার এনার্জি কোম্পানি' তৈরি করছে শহরটি৷ যার বেশিরভাগ অর্থই আসছে আবুধাবি সরকারের পক্ষ থেকে৷ প্রাথমিকভাবে এর ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার দুইশো কোটি ডলার৷ ২০০৬ সালে শুরু হয়েছে শহর তৈরির কাজ৷ শেষ হওয়ার কথা ২০১৪ সালে৷ ব্রিটিশ কোম্পানি ‘ফস্টার এন্ড পার্টনারস' পুরো শহরের নকশা করেছে৷ জার্মানির সংসদ ভবন সহ বিশ্বের আরও সব বিখ্যাত ভবনের নকশা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এই কোম্পানির৷
নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিস্তারে জার্মানির একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে৷ মাসদার নামের এই শহরটি গড়ে তুলতেও কাজ করছে কয়েকটি জার্মান কোম্পানি৷ এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিষয়ক কোম্পানি ইডটঅন, কেমিক্যাল কোম্পানি বিএএসএফ এবং ওষুধ খাতে বিখ্যাত, তবে নির্মাণক্ষেত্রেও সমান ভূমিকা রাখা কোম্পানি বায়ার৷ এছাড়া দুটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছে মাসদার শহর গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক