মার্টিন লুথার কিং-এর সমাধি অনুষ্ঠানের কিছু স্মরণীয় ছবি
মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ১৯৬৮ সালের চৌঠা এপ্রিল আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান৷ নিহত নেতার সমাধি অনুষ্ঠানের ছবি তোলেন কিং-এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আলোকচিত্রী ফ্লিপ শুল্কে৷
কাছের ও দূরের
৯ই এপ্রিল, ১৯৬৮ সমাধি অনুষ্ঠান৷ কিং-এর স্ত্রী করেটা স্কট কিং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে এবেনেজার ব্যাপটিস্ট চার্চের প্রথম সারিতে বসেন৷ জর্জিয়ার অ্যাটলান্টা শহরের এই গির্জাটিতে কিং ও তাঁর পিতা উভয়েই যাজক হিসেবে কাজ করেছিলেন৷ আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠদের জন্য বিশেষ প্রার্থনাসভাটির পর তিন মাইল লম্বা শোকমিছিল মোরহাউস কলেজে যায়, যেখানে কিং পড়াশুনা করেছিলেন৷ সেখানেও একটি প্রার্থনাসভা অনুষ্ঠিত হয়৷
ভাই হারানোর দুঃখ
কিং-এর ভাই অ্যালফ্রেড ডি. কিং গির্জায় বসেই কান্নায় ভেঙে পড়েন৷ শ্রমিক নেতা, বিদেশ থেকে আসা বিশিষ্ট অতিথি, চলচ্চিত্র, সংগীত ও খেলাধুলার জগতের নামকরা ব্যক্তিত্ব, এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতারা ঐ প্রার্থনাসভায় অংশগ্রহণ করেন৷
শেষ বিদায়
কিং-এর শবাধারের সামনে করেটা স্কট ও তাঁর ছেলেমেয়েরা৷ কিং-এর হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে দাঙ্গার সূত্রপাত হয় এবং চলে তাঁর সমাধির দিন পর্যন্ত৷ আফ্রিকান-অ্যামেরিকান সম্প্রদায় আজ অবধি কিং-হত্যার শোক ও রোষ কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ৷ প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন এপ্রিলের ৭ তারিখের জন্য একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেন৷
অবশেষে শান্তি
শবাধারে শায়িত মার্টিন লুথার কিং৷ টেনেসির মেমফিস শহরের লোরেইন মোটেলে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ স্থানীয় পৌরকর্মীদের ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন প্রকাশের জন্য কিং মেমফিসে গিয়েছিলেন৷ দৃশ্যত আততায়ীর গুলি তাঁর থুতনিতে লেগে সোজা মেরুদণ্ডে ঢুকে যায়৷ ‘‘উনি সম্ভবত গুলি ছোঁড়ার আওয়াজ বা গুলির ধাক্কা অনুভব করেননি,’’ বলেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী অ্যান্ড্রু ইয়ং৷ সেদিন পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি৷
শেষ সম্মান
কিং-এর শবাধারে শোকার্তদের সারি৷ সে বছরের চৌঠা ফেব্রুয়ারি তারিখে কিং এবেনেজার ব্যাপটিস্ট চার্চে প্রদত্ত একটি ভাষণে কিং বলেছিলেন, তাঁর সমাধি অনুষ্ঠানে কেউ যেন মানসম্মান বা পুরস্কারের কথা উল্লেখ না করেন; শুধু বলা হয় যে, তিনি ‘‘ক্ষুধার্তদের অন্ন দিতে,’’ ‘‘নগ্নদের পরিধেয় দিতে,’’ ‘‘(ভিয়েতনাম) যুদ্ধের প্রশ্নে সঠিক অবস্থান নিতে’’ ও ‘‘মানবজাতিকে ভালোবাসতে ও সেবা করতে’’ চেয়েছিলেন৷
কিং-এর প্রিয় সংগীত
এবেনেজার ব্যাপটিস্ট গির্জা থেকে মোরহাউস কলেজ অবধি শোক মিছিল দেখেন লক্ষাধিক মানুষ৷ মাঝে মাঝেই উপস্থিত জনতা কিং-এর প্রিয় সংগ্রাম ও প্রতিরোধের গানগুলি গাইতে থাকেন৷ মোরগাউস কলেজের মাঠে আয়োজিত প্রার্থনাসভায় কিং-এর প্রিয় বন্ধু মহালিয়া জ্যাকসন তাঁর প্রিয় ‘হিম’ বা খ্রিষ্টীয় ঈশ্বরস্তোত্রটি গান: ‘টেক মাই হ্যান্ড, প্রেসিয়াস লর্ড৷’
মৃত্যুর ছায়ায়
‘‘হিংসার মাধ্যমে যে আমার জীবনাবসান ঘটতে পারে, তা জানার মতো বাস্তববুদ্ধি আমার আছে,’’ মৃত্যুর অনেক আগেই বলেছিলেন কিং৷ ‘‘আমি প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকির সঙ্গে বাঁচি৷ কিন্তু কতোদিন নয়, কিভাবে বাঁচলাম, সেটাই হলো বড় কথা বলে আমার ধারণা৷ জীবনের দৈর্ঘ্য বা পরিমাণ নিয়ে আমার চিন্তা নেই, আমার চিন্তা জীবনের মান ও উৎকর্ষ নিয়ে৷’’
‘উই শ্যাল ওভারকাম’
করেটা কিং-এর পাশে অশ্রুসজল চোখে প্রখ্যাত ক্যালিপসো গায়ক হ্যারি বেলাফন্টে৷ প্রার্থনাসভার পর কিং-এর মরদেহ সাউথ ভিউ সেমেটারিতে সমাধিস্থ করা হয়৷ ১৯৬৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করার সময় কিং বলেছিলেন, ‘‘আমরা ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির সমাজ গড়তে পারি বলে আমি এখনও বিশ্বাস করি৷ হৃদয়ের অভ্যন্তরে আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে, আমাদের জয় হবে৷’’
যুক্তরাষ্ট্রের ভিত গড়েছেন যাঁরা
অনেক মার্কিন ইতিহাসবিদের কাছে অ্যাব্রাহাম লিঙ্কনের মতোই যুক্তরাষ্ট্রের বুনিয়াদ গড়ে দিয়েছেন মার্টিন লুথার কিং৷ ছবিতে কিং-এর সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারী রেভারেন্ড জেসে জ্যাকসন৷